‘মদ, জুয়া, সুদ হারাম; কিন্তু তা দেশে চলছে। আলেমরা এসব বন্ধ করতে বলছেন। কিন্তু আলেমরা নিজ থেকে লাঠি নিয়ে তা বন্ধ করতে চান না। তেমনি সরকার যদি ভাস্কর্য নির্মাণ করতে চায়, করুক। আলেমরা বাধা হবেন না; কিন্তু বিরোধিতা করে যাবেন। ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধীতা করা আলেমদের ইমানি দায়িত্ব।’ চলমান ভাস্কর্য বিতর্ক নিরসনে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগ্রহের কথা জানিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা এমনটাই বলছেন।
৫ ডিসেম্বর (শনিবার) যাত্রাবাড়ীতে কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ সংস্থা হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাহমূদুল হাসানের সভাপতিত্বে আলেম-ওলামাদের বৈঠক থেকে এমন মতামত ও সিদ্ধান্ত এসেছে। তারা বৈঠক করে মত দিয়েছেন, সরকার চাইলে ভাস্কর্য নির্মাণে বাধা হবেন না। তবে একে শরিয়তসম্মত বলেও স্বীকৃতি দেবেন না। ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান ও মৌখিক প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে।
প্রাণীর মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ ইসলামে নিষিদ্ধ। তাই কারও প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কোরআন-সুন্নাহসম্মত উত্তম বিকল্প খুঁজতে শীর্ষ আলেমদের বৈঠক থেকে সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে এ বিষয়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর বেফাকুল মাদ্রাসিল আরাবিয়ার (বেফাক) ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান হয়েছেন রাজনীতির বাইরের মানুষ মাহমুদুল হাসান। তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শনিবারের বৈঠকে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিতসহ প্রায় সব ঘরানার আলেমরা ছিলেন। তাদের সবাই ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে মত দেন।
রাজধানীর দোলাইরপাড়ে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের প্রবেশপথে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দল ও আলেম ভাস্কর্য ইসলামসম্মত নয় আখ্যা দিয়ে এর বিরোধিতা করে আসছেন। বিরোধিতাকারীদের সাম্প্রদায়িক অপশক্তি আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নেমেছে সরকার সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠন। এমন পরিস্থিতিতে ভাস্কর্য নিয়ে মতামত জানাতে উত্ত বৈঠকে বসেন দেশের শীর্ষ আলেমরা।
বৈঠকের পর গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভাস্কর্য ইস্যুতে শরিয়তসম্মত সমাধান চান তারা। সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এর একটি সমাধান জরুরি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি সরকার, জনগণ কিংবা আলেম-ওলামা কারও জন্যই সুখকর নয়।
বৈঠকে কওমী মাদ্রাসার বোর্ডের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান বলেছেন, রাষ্ট্র বা সরকারের সঙ্গে ওলামায়ে কেরামদের সম্পর্ক কল্যাণকামী উপদেশদাতার। কোরআন সুন্নাহর বাণী শাসক ও দায়িত্বশীলদের যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করা কর্তব্য। আলেমদের শত্রু বা প্রতিপক্ষ মনে করার কিছুই নেই। যে কোনো ধরনের সংঘাত ইসলাম, জনগণ ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। আলেমদেরও অপ্রয়োজনীয় সমস্যা তৈরি বা দ্বীনি পরিবেশের জন্য ঝুঁকি তৈরি করা উচিত নয়। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ আদর্শবান মানুষের পক্ষে শোভা পায় না।
বৈঠক থেকে প্রস্তাব করা হয়, কোনো মহৎ ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে তার মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে কোরআন-সুন্নাহ সমর্থিত উত্তম বিকল্প সন্ধান করা যুক্তিযুক্ত। এ ছাড়া রাসূল (সা.)-এর অবমাননা বন্ধে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা, গ্রেপ্তারকৃত আলেম-ওলামাদের মুক্তি, অবাধে ওয়াজ মাহফিল আয়োজন ও লাউড স্পিকার ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া এবং আলেমদের বিরুদ্ধে বিষেদাঘার ও সাম্প্রদায়িক উস্কানি বন্ধের প্রস্তাব করেন তারা।
বৈঠক সূত্র জানিয়েছে, এসব প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এজন্য কমিটি করা হবে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন চাওয়া মুফতি রুহুল আমিনের কাছে বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সর্বসম্মত মতামত এসেছে বিবৃতিতে। এ নিয়ে তিনি এককভাবে কিছু বলতে চান না।
ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে আলোচনায় আসা হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, যে কোনো বিষয়ে মতামত জানানো তার সাংবিধানিক অধিকার। ভাস্কর্যের বিরোধিতাও তার সাংবিধানিক অধিকার। আলেমদের মতামত উপেক্ষা করে ভাস্কর্য বানানো হবে কিনা, তা সরকারের বিষয়। আলেমরা ভাস্কর্য ভাঙতে যাবেন না; কিন্তু একে হালাল বলে স্বীকৃতিও দেবেন না।
বৈঠকে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব নূর হোসেইন কাসেমী সশরীরে ছিলেন না। তাদের প্রতিনিধিরা যোগ দেন। বৈঠকে ছিলেন মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, নুরুল ইসলাম জিহাদি, আব্দুল হামিদ, আবদুল কুদ্দুস, আতাউল্লাহ হাফেজ্জীসহ শতাধিক আলেম।
[soliloquy id=”2470″]
মিই/নসদ/০৯৫০
আপনার মতামত জানানঃ