নভেম্বর মাসে সংঘটিত ৪১৭ দুর্ঘটনায় ৪৩৯ জন নিহত এবং ৬৮২ জন আহত হয়েছেন। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে এক সংস্থার শনিবার প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে এ পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। দেশের সড়ক ও মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় গত নভেম্বরে কিছুটা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
একই সময়ে চারটি নৌ-দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত ও আটজন আহত এবং ২৯টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত ও সাতজন আহত হয়েছে। দেশের সাত জাতীয় দৈনিক, পাঁচ অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে নেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংস্থাটির তথ্যমতে, গত অক্টোবর মাসে ৩১৪ দুর্ঘটনায় ৩৮৩ জন নিহত হন। পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় নভেম্বর মাসে দুর্ঘটনা বেড়েছে। গত নভেম্বর মাসে এককভাবে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। এ ধরনের ১২৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪১ জন। যা মোট নিহতের ৩২.১১ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা মোট ঘটনার ৩০.৬৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেয়া তথ্যমতে, দুর্ঘটনায় ১১৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৬.৪২ শতাংশ। এসব দুর্ঘটনায় যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৪৯ জন, যা মোট নিহতের ১১.১৬ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। রাজধানীতে ১১১ দুর্ঘটনায় ১২৮ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সিলেট বিভাগে। সেখানে ২২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। এ জেলায় ২৬ টি দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম ভোলা জেলায়। সেখানে তিনটি দুর্ঘটনায় একজন নিহত হয়েছেন।
দেশে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে ১০ বিষয়ের কথা উল্লেখ করেছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। এগুলো হলো- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, নির্দিষ্ট বেতন ও কর্মঘণ্টা না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ ও যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি। সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে দায়ী- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ ২০.৮৯ শতাংশ, ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি ৪.৬৪ শতাংশ, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-এ্যাম্বুলেন্স-জীপ ৪.৪৯ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ১১.৯০ শতাংশ, মোটরসাইকেল ১৯.৭৩ শতাংশ, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-টেম্পু-স্কুটার) ২২.৬৪ শতাংশ, নসিমন-ভটভটি-আলগামন-পাখিভ্যান ৯.১৪ শতাংশ, রিকশা-ভ্যান, বাই-সাইকেল ৪.৯৩ শতাংশ এবং অন্যান্য (গ্যাসবাহী গাড়ি, গ্রামবাংলা, লাটাহাম্বা, ভ্যানগাড়ি) ১.৩০ শতাংশ।
সংগঠনটি আরও জানিয়েছেন,দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির হার ক্রমেই উর্ধমুখী হচ্ছে। জাতীয় মহাসড়কে সবসময় দুর্ঘটনার হার বেশি থাকলেও নভেম্বর মাসে জাতীয় মহাসড়কের তুলনায় আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কে দুর্ঘটনার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। মোটরসাইকেল চালক ও পথচারী নিহতের ঘটনা চরমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে অজ্ঞতা, অবহেলা এবং ট্রাফিক আইনের প্রয়োগহীনতা এর প্রধান কারণ।
রেল ক্রসিংয়ে ৪টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। দেশে ৮২% রেল ক্রসিং অরক্ষিত, ফলে মাঝে-মধ্যেই ট্রেনের সঙ্গে সড়ক পরিবহনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব রেল ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সড়ক-সেতু নির্মাণে আগ্রহ দেখা গেলেও সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সরকারের আগ্রহ তেমন দৃশ্যমান নয়। জাতীয় স্বার্থেই এক্ষেত্রে সরকারকে কঠোর হতে হবে। মূলত সড়ক দুর্ঘটনারোধে নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ এবং গণপরিবহন খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা- উভয়ই জরুরি। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
এসডব্লিউ/নসদ/০৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ