কোনো একটি ‘মৃত্যুপথযাত্রী’ নক্ষত্রের কাছে একটি প্রাণ ধারণের উপযোগী গ্রহের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা। বিষয়টি নিশ্চিত হলে প্রথমবারের মতো ‘শ্বেত বামন’ বলে পরিচিত মৃতপ্রায় নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করা জীবন টিকিয়ে রাখার উপযোগী গ্রহের খোঁজ মিলবে। বলা হচ্ছে, গ্রহটি ওই শ্বেত বামনের ‘বসবাসযোগ্য অঞ্চলে’ যা অতি উষ্ণও নয় আবার অতি ঠাণ্ডাও নয়। খবর বিবিসি
মৃত তারাকেই বলা হয় শ্বেত বামন (হোয়াইট ডোয়ার্ফ)।
এগুলো তাপ বিকিরণ করতে করতে জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে সংকুচিত হয়ে যায়। শ্বেত বামনের ভর সূর্যের কাছাকাছি বা সমান। বিজ্ঞানীরা বলেন, আমাদের সূর্যও কোটি কোটি বছর পর একদিন শ্বেত বামনে পরিণত হবে। মহাবিশ্বে অসংখ্য মৃত নক্ষত্র রয়েছে। এ রকম একটি নক্ষত্রের কাছেই কোনো না কোনো ধরনের প্রাণের বাসযোগ্য অঞ্চলের সম্ভাবনা দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের অধ্যাপক জে ফারিহি বলেন, ‘জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এই পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ নতুন। এই প্রথমবারের মতো কোনো শ্বেত বামনের বসবাসযোগ্য অঞ্চলে কোনো কিছু দেখা গেল। এর মাধ্যমে অন্য একটি পৃথিবীতে প্রাণের সম্ভাবনা জাগল। ’
সম্ভাব্য গ্রহটি পৃথিবী থেকে ১১৭ আলোকবর্ষ দূরে। আলো সেকেন্ডে প্রায় দুই লাখ মাইল গতিতে চলে এক বছরে যত দূর যায় তা-ই এক আলোকবর্ষ। আমাদের পৃথিবী সূর্যের থেকে যতটা দূরে, ওই গ্রহটির সঙ্গে মৃতপ্রায় নক্ষত্রটি তার ৬০ গুণ কাছে।
গ্রহটি সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চিত হতে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ এখনো বিজ্ঞানীদের হাতে নেই। তবে তারা পরোক্ষ প্রমাণ পেয়েছেন। মহাকাশের ওই অঞ্চলে চাঁদের আকারের ৬৫টি কাঠামো রয়েছে। এসব কাঠামোর মধ্যবর্তী দূরত্ব একই। মনে করা হচ্ছে, কোনো গ্রহের মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবেই এটি ঘটছে। ‘বিষয়টি গবেষকদের চমকে দিয়েছে’, বলেছেন অধ্যাপক জে ফারিহি।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কাছে এই পর্যবেক্ষণ সম্পূর্ণ নতুন। এই প্রথমবারের মতো কোনো শ্বেত বামনের বসবাসযোগ্য অঞ্চলে কোনো কিছু দেখা গেল। এর মাধ্যমে অন্য একটি পৃথিবীতে প্রাণের সম্ভাবনা জাগল। ’
বিজ্ঞানীরা অনেকদিন থেকেই সৌরজগৎ ও সৌরজগতের বাইরে পৃথিবী এবং পৃথিবির মতো বসবাসযোগ্য গ্রহ নিয়ে গবেষণা চালিয়ে আসছে। এক্সোপ্ল্যানেট তেমনই একটি বিষয়। মূলত এক্সোপ্ল্যানেট বলতে সেসব গ্রহগুলোকে বোঝায় যেগুলো সৌরজগতের বাইরে অবস্থান করছে। সূর্যকে কেন্দ্র করে যেমন পৃথিবী ঘোরে এক্সোপ্ল্যানেটগুলোও সূর্যের মতো অন্যান্য বৃহদাকার নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘোরে। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে গবেষণা চললেও সে সময় প্রযুক্তির উৎকর্ষতা ততট না থাকায় বিজ্ঞানীরা তেমন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি। পরে এক্সোপ্ল্যানেট নিয়ে অনেক তথ্য বেরিয়ে এসেছে। বিজ্ঞানীদের গবেষণা তথ্যমতে এখন অবধি প্রায় ৪ হাজারের বেশি এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ক্যামব্র্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী নিকুমধুসূধন ও তার টিম কিছু এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পেয়েছেন। এ এক্সোপ্ল্যানেটের জোনের নাম দিয়েছেন হাইসিয়েন জোন। এক্সোপ্ল্যানেটগুলোর বায়ুমণ্ডলে হাইড্রোজেনের উপস্থিতি ছিল এবং সেখানে একটা সাগরের উপস্থিতি রয়েছে বলে তারা ধারণা করছে। যে কারণে হাইড্রোজেনের হাই এবং ওসানের সিয়ান নিয়ে এ জগতের নামকরণ করেছে। এমনই একটি এক্সোপ্ল্যানেট (কে-২ ১৮বি) পাওয়া গেছে সম্প্রতি। প্রথমবারের মতো, গবেষকরা আমাদের সৌরজগতের বাইরের একটি গ্রহের বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের স্বাক্ষর শনাক্ত করেছেন যা ‘বাসযোগ্য অঞ্চল’-এ থাকে, একটি নক্ষত্রের চারপাশের অঞ্চল। বিজ্ঞানীরা এখন খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে সেখানে কোনো প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে কিনা।
পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি? কল্পবিজ্ঞান কাহিনি ও চলচ্চিত্রে অন্য গ্রহের প্রাণী নিয়ে অনেক চর্চা হয়েছে৷ আমাদের সৌরজগত ও দূরের নক্ষত্র জগতের কিছু অংশে প্রাণের উপযুক্ত পরিবেশ চিহ্নিত করছেন বিজ্ঞানীরা৷
পৃথিবী ছাড়া অন্য কোন গ্রহ কি মানুষের বসবাসের যোগ্য? আমাদের এই পৃথিবীতে অবিশ্বাস্য জীববৈচিত্র্য দেখা যায়, যা জীবন সম্পর্কে আমাদের ধ্যানধারণা গড়ে তুলেছে৷ উন্নতি, বিকাশ ও এগিয়ে চলার জন্য কী প্রয়োজন, সেই উপলব্ধিও আমাদের মনে জন্মায়৷
প্রাণের স্পন্দনের জন্য অনেক বিষয়ের মধ্যে সামঞ্জস্যের প্রয়োজন৷ সূর্যের উত্তাপের অপরিবর্তিত মাত্রা লাখ লাখ বছর ধরে স্থিতিশীল এক পরিবেশ নিশ্চিত করেছে৷ তাছাড়া পৃথিবী নির্দিষ্ট এক দূরত্ব বজায় রেখে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে৷ সেই স্থিতিশীল উত্তাপের কারণে পৃথিবীর উপরিভাগে সব সময়ে তরল পানি পাওয়া যায়৷ আমাদের জ্ঞান অনুযায়ী পানিই প্রাণ সৃষ্টির পূর্বশর্ত৷
কোনো নক্ষত্রের কাছে নির্দিষ্ট একটি দূরত্ব পর্যন্ত এলাকায় কোনো গ্রহে প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে৷ আমাদের পৃথিবী সেই সীমানার ভিতর দিকে থাকলে পানি গরম হয়ে বাষ্পে পরিণত হতো৷ অন্যদিকে সীমানার বাইরের দিকে গেলে সব পানি বরফ হয়ে উঠতো৷
পথের শেষ কোথায়, কী আছে শেষে— এই অনন্ত জিজ্ঞাসা মানুষের। বিশেষ করে মহাবিশ্ব সম্পর্কে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। আসলে মহাবিশ্বের তুলনায় সৌরজগৎ কিছুই না, একেবারে বালিকণার মতো। আর সে তুলনায় পৃথিবী তো আরো অনেক ছোট। এই মহাবিশ্বের অনেক কিছুই এখনও অজানা। অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে বহুকিছু। অধরা রয়ে গেছে মহাবিশ্বের অনেক রহস্যও। আমাদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতায় অচেনা রয়ে গেছে অনেক বিস্ময়কর জগৎ। কিন্তু মহাকাশ বিজ্ঞানীরা থেমে নেই। নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে তারা রহস্যভেদ করতে চাইছেন অজানা মহাবিশ্বের।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৪২
আপনার মতামত জানানঃ