প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল গোটা ভারত। সরকারের তৈরি তিনটি কৃষি সংক্রান্ত আইনের প্রতিবাদে কৃষকরা একটানা কিছুদিন ধরে যে আন্দোলন চালাচ্ছেন সেই আন্দোলন আরও তীব্র হতে যাচ্ছে। ওই ইস্যুতে কৃষকদের পক্ষ থেকে আগামী ৮ ডিসেম্বর ভারত বনধের ডাক দেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এতে করে দিল্লী অচলের পর এবার তারা পুরো ভারত অচল করার দিকে যেতে পারেন।
৫ ডিসেম্বর ২০২০, আজ শনিবার কৃষক নেতাদের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড় কৃষকরা ভারত বনধের ডাক দিলেন। এছাড়াও তাদের তরফে একাধিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। আন্দোলনরত কৃষকরা সারাদেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কুশপুতল পোড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছেন। এর আগে সরকারের সাথে সাত ঘণ্টার ম্যারাথন বৈঠকেও জট কাটেনি। কেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠকে বিতর্কিত তিন কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় কৃষক প্রতিনিধিদল। খবর এনডিটিভি।
গত কয়েক দিন ধরে ভারতের রাজধানী দিল্লির উত্তরপ্রান্তে এক বিশাল এলাকা কার্যত পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা হাজার হাজার কৃষকের দখলে। নিজেদের ট্রাক্টর ও ট্রলিতে বেশ কয়েক মাসের রেশন নিয়ে, খোলা আকাশের নিচে তাঁবু খাটিয়ে শীতের রাত কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েই তারা রওনা দিয়েছিলেন দিল্লির পথে। আর এখন রাজধানীর ‘লাইফলাইন’ জাতীয় সড়ক কার্যত তাদেরই দখলে।
মোদি সরকারের নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কৃষকরা বেশ কয়েক মাস ধরেই দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন ৷ কিছুদিন আগেই বিশাল মিছিল করে পঞ্জাব, হরিয়ানার কৃষকরা দিল্লি আসেন ৷ কৃষক সংগঠনের সদস্যরা কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৮ ডিসেম্বরের বনধের অংশ হিসেবে হাইওয়ে টোল গেটগুলিতে অবরোধ করবেন কৃষকরা। তাঁরা জানিয়েছেন সরকারকে কোনও টোল আদায় করতে দেবে না৷ আন্দোলনরত কৃষক সংগঠনের এক নেতা হরিন্দর সিং লোখওয়াল বলেন, ‘আমাদের এই আন্দোলনে আরও লোক সামিল হবেন ৷’ কৃষক সংগঠনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনায় তারা তিনটি আইন-ই প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন৷ সরকার আইন সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে তবে তাতে কোনো কাজ হয়নি ।
আন্দোলনকারী কৃষক নেতারা বলেন, ৪ ডিসেম্বর তামিলনাড়ু ও কর্ণাটকে আমাদের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছিল। এবার ওই কৃষকদেরও দিল্লিতে আসতে বলা হয়েছে। তারা গোটা দেশের কৃষকদের দিল্লিতে আসার আহ্বান করে কঠোর আন্দোলন চলবে বলে জানান। এনিয়ে পিছু হঠার কোনও প্রশ্নই নেই বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। কৃষক নেতা যুদ্ধবীর সিং বলেছেন, আমরা তিনটি আইন প্রত্যাহার করা ছাড়া কোনও সমঝোতা করব না। এছাড়াও, ন্যূনতম সহায়তা মূল্যের (এমএসপি) গ্যারান্টিও প্রয়োজন।
সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হওয়া তিনটি বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে তারা তুমুল আন্দোলন শুরু করছেন। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা এই অসংখ্য কৃষক দিল্লিতে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে রাখায় রাজধানীর একটা বিস্তীর্ণ অংশে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। আরও বহু কৃষক দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টায় সীমান্তে অপেক্ষা করছেন।
আন্দোলনরত একজন কৃষক সরবজিৎ সিং গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাঞ্জাব থেকে লাঠি-জলকামান অনেক কিছু সহ্য করে আমরা এতদূর এসেছি। আমরা চাই দিল্লির জল, দুধ, ফল-সব্জির সাপ্লাই লাইন বন্ধ করে দিতে। যাতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ে ও তারা আমাদের কথা শুনতে বাধ্য হয়।’
পাটিয়ালা থেকে আসা অমৃক সিং যোগ করেন, ‘সরকার যতক্ষণ না তিনটি কালো আইন বাতিল করছে এবং কৃষককে সহায়ক মূল্যের গ্যারান্টি দিয়ে একটি চতুর্থ আইন আনছে ততক্ষণ এই আন্দোলন চলবে।’
দিল্লিতে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়া অ্যাক্টিভিস্ট মেধা পাটকরের কথায়, ‘সরকার তো দাবি করে তাদের সব সিদ্ধান্তই মানুষের পক্ষে। কিন্তু দেশের কিষাণ-মজদুররা সেই চালাকি এখন ধরে ফেলেছে, এবং তারা বুঝে গেছে সরকার শুধু বৃহৎ কর্পোরেটদেরই ধামাধরা।’
মোদি সরকারে বিরুদ্ধে এই অনড় অবস্থানের মধ্যেই নজিরবিহীন কৃষক আন্দোলনে রাজধানী দিল্লির একটা বিস্তীর্ণ অংশ অচল হয়ে রয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ৮ ডিসেম্বরের বনধের জন্য অচল হয়ে পড়তে পারে গোটা ভারত।
এসডাব্লিউ/মিই/১০৪০
আপনার মতামত জানানঃ