সিরিয়ার হাশাকা প্রদেশে অবস্থিত মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়া গোষ্ঠীর হামলার খবর আন্তর্জাতিক মহলে বড় ধরনের সতর্কতা সৃষ্টি করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের জটিল রাজনৈতিক কাঠামোর এই অংশে এই হামলা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তাকে নয়, পুরো অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকেও প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
এই হামলার পেছনে ইরানের ভূমিকা স্পষ্ট বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। ইরান দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়া ও ইরাকের বিভিন্ন এলাকায় প্রো-ইরানি মিলিশিয়া গোষ্ঠী তৈরির মাধ্যমে নিজস্ব কৌশলগত প্রভাব বিস্তার করছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার উত্তেজনা পারমাণবিক চুক্তি ভঙ্গের পর থেকে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে এই হামলা ইরানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর শক্তির প্রদর্শনের একটি প্রখর বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরানের এই আক্রমণ ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতিকে নিজের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে এবং নিয়মিতভাবেই ইরানের সেনা ও সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব এখনো অনেকটাই ‘শীতল’ অবস্থা, তবে সাম্প্রতিক হামলা ও পাল্টা হামলার ধারাবাহিকতায় এটি ‘গরম’ রূপ নিতে পারে। যদি ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হামলার বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে এটি বৃহত্তর একটি সামরিক সংঘর্ষের সূচনা হতে পারে, যা পুরো মধ্যপ্রাচ্যকে যুদ্ধের আগুনে ঝলসাতে পারে।
মার্কিন সরকার ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করেছে এবং ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর হামলা প্রতিরোধে প্রস্তুত রয়েছে। অন্যদিকে রাশিয়া ও চীন এই সংকটের প্রতি নজর রেখে নিজেদের কূটনৈতিক অবস্থান শক্ত করছে। মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে।
তবে বর্তমানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো – এই উত্তেজনা কতদূর গড়াবে এবং তা কীভাবে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পরিণত হবে? বিশ্ব সম্প্রদায় এখন দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও মধ্যস্থতার ওপর ভরসা রাখছে, যেন বড় ধরনের সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো যায়।
সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা কেবল একটি সামরিক ঘটনা নয়, এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক কূটনীতির নতুন অধ্যায়ের সূচনা। ইরান-ইসরায়েল ও আমেরিকার সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এখন সময় দ্রুত কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করার। কারণ, যদি এই সংকট গড়ে উঠে বৃহৎ আকারের যুদ্ধ, তবে তার প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্বব্যাপী হবে।
আপনার মতামত জানানঃ