দাপিয়ে বেড়ানো করোনার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টে ওমিক্রনে নাজেহাল বিশ্বব্যাপী। একের পর এক নতুন ধরনে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বেড়েই চলেছে।
এর মধ্যে করোনাভাইরাসের ওমিক্রন ধরনকে মৃদু ভেবে হেলাফেলার সুযোগ নেই বলে মনে করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সংক্রামক রোগবিষয়ক শীর্ষ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভ্যান কেরখোভ।
তিনি মনে করেন, ধরনটি ডেলটার চেয়ে কম মারাত্মক হলেও আগের ধরনগুলোর মতোই এটি কারও কারও জন্য গুরুতর হয়ে উঠতে পারে। হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টেকনিক্যাল প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরখোভ।
ডেলটার তুলনায় কম মারাত্মক হলেও ওমিক্রনে আক্রান্ত মানুষকে কেন এখনো হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে, কেন আক্রান্ত ব্যক্তিরা মারা যাচ্ছেন; এ ব্যাপারে মারিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে তিনি বলেন, যেসব মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে উপসর্গবিহীন রোগী যেমন রয়েছেন, তেমনি কাউকে কাউকে গুরুতর জটিলতার মধ্যেও পড়তে দেখা যাচ্ছে। কারও কারও মৃত্যুও হচ্ছে।
তিনি জানান, আগে থেকে জটিল রোগে ভোগা, বয়স্ক ও টিকা না নেওয়া মানুষ ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে তাঁদের শারীরিক অবস্থা গুরুতর রূপ ধারণ করতে পারে।
মারিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ক্রমান্বয়ে সবাই ওমিক্রনে আক্রান্ত হবে কি না। জবাবে তিনি বলেন, বিস্তারের দিক থেকে ডেলটার জায়গা দখল করে নিচ্ছে ওমিক্রন। এটি খুব দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে।
তবে এ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ার মানে এই নয় যে প্রত্যেকেই ওমিক্রনে আক্রান্ত হবে।
এর আগে প্রাথমিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছিল, কোভিড-১৯ প্রতিরোধী বিদ্যমান টিকাগুলো ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কম কার্যকর হতে পারে।
আর সে জায়গা থেকে করোনার ‘উদ্বেগের ধরন’ ওমিক্রন নিয়ে উচ্চ ঝুঁকির আশঙ্কার কথা জানিয়েছিল তারা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুসও শিগগির মহামারির অবসান না হওয়ার আশঙ্কা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শিগগির এ মহামারির অবসান হওয়ার কোনো আলামত নেই।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরের অবস্থানেই রয়েছে ভারত।
বিশ্বে ওমিক্রনে আক্রান্তের সবশেষ তথ্য
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের প্রভাবে সারাবিশ্বে প্রতিদিন সংক্রমণের রেকর্ড হচ্ছে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্বজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন পাঁচ হাজার ৯২৪ জন। যা আগের দিনের তুলনায় এক হাজার ৯২ জন বেশি।
এদিকে একই সময়ে বিশ্বে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ২৯ হাজার ৬৭৫ জনে। এর আগের দিন ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
সেই হিসেবে দেখা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত কিছুটা কমেছে। আজ মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থতার হিসাব রাখা আন্তর্জাতিক ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটারস থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারাবিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫৬ লাখ ২২ হাজার ৫০ জনে। আর করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৫ কোটি ৪৮ লাখ আট হাজার ১৭১ জনে। মোট সুস্থ হয়েছেন ২৮ কোটি ১৮ লাখ ২০ হাজার ২২৬ জন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এসময় দেশটিতে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন চার লাখ ৬৩ হাজার ৬৭৪ জন। আর এক হাজার ১৯৩ জন মারা গেছেন।
বিশ্বে মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশটিতে এখন পর্যন্ত সাত কোটি ২৯ লাখ ৫৭ হাজার ২১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন আট লাখ ৯১ হাজার ৫৯৫ জন।
অপরদিকে বৈশ্বিক সংক্রমণে সারাবিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত। তবে মৃতের সংখ্যার তালিকায় দেশটির অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত তিন কোটি ৯৫ লাখ ৪৩ হাজার ৩২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মারা গেছেন চার লাখ ৮৯ হাজার ৮৯৬ জন।
এদিকে ফ্রান্সে একদিনে সংক্রমিত হয়েছেন এক লাখ আট হাজার ৪৮১ জন। আর মারা গেছেন ৩৯৩ জন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত এক কোটি ৬৮ লাখ ৯১৩ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর এক লাখ ২৯ হাজার ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিল করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে তৃতীয় ও মৃত্যুর সংখ্যায় তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। দেশটিতে এ পর্যন্ত মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দুই কোটি ৪১ লাখ ৩৪ হাজার ৯৪৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ছয় লাখ ২৩ হাজার ৪১২ জনের।
সংক্রমণের তালিকায় এরপরই রয়েছে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, তুরস্ক, ইতালি, স্পেন ও জার্মানি।
এদিকে, বাংলাদেশেও ওমিক্রনের প্রভাবে ফের সংক্রমণ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে নতুন করে ১৪ হাজার ৮২৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা হয়েছে ২৮ হাজার ২৩৮ জনে। আর শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৯৯ হাজার ৯৬৪ জনে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ