সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের বিরুদ্ধে বাজারে আধিপত্য বিস্তারে ৪৪ মিলিয়ন ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য ফেসবুককে যুক্তরাজ্যে ৩২০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে। সিএনএন’র এক প্রতিবেদনে গতকাল শুক্রবার এ তথ্য জানানো হয়েছে।
লন্ডনের কম্পিটিশন আপিল ট্রাইবুনালে শুনানি করা মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ফেসবুক অন্যায্য শর্তাদি আরোপ করে বিলিয়ন পাউন্ড আয় করেছে। ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্কে প্রবেশের জন্য মূল্যবান ব্যক্তিগত ডেটা দিতে হয়েছে।
ব্রিটেনের ফিন্যান্সিয়াল কন্ডাক্ট অথরিটির (এফসিএ) জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা লিজা লোভডাহল গর্মসেন বলেছেন, যারা ব্রিটেনে ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ফেসবুক ব্যবহার করেছেন তিনি তাদের পক্ষে মামলাটি করেছেন।
তবে ফেসবুক বলেছে, মানুষ তাদের সেবা ব্যবহার করেছে কারণ এটি তাদের বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করে এবং ‘ব্যবহারকারীদের হাতে মেটা প্ল্যাটফর্মে এবং কার সঙ্গে কী তথ্য শেয়ার করবে তার অর্থপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।’
কদিন আগে ব্যবহারকারীদের ওপর নজর রাখায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও গুগলকে ২১ কোটি ইউরো জরিমানা করেছে ফ্রান্স সরকার। ‘কুকিস’ ব্যবহারে এ জরিমানা করা হয়েছে। কারণ, কুকিস ব্যবহারে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের নানা তথ্যের নজর রাখছিল।
ফেসবুক অন্যায্য শর্তাদি আরোপ করে বিলিয়ন পাউন্ড আয় করেছে। ব্যবহারকারীদের নেটওয়ার্কে প্রবেশের জন্য মূল্যবান ব্যক্তিগত ডেটা দিতে হয়েছে।
শুধু গুগল কিংবা ফেসবুকই নয়, ইউরোপজুড়ে চাপের মুখে পড়েছে অ্যাপল ও আমাজনের মতো মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোও। এর মধ্যেই তাদের বড় অঙ্কের জরিমানা গুনতে হয়েছে। এ ছাড়া কীভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করা হবে, তা নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নানা নীতিমালার জারির পরিকল্পনা চলছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কম্পিউটার বা মুঠোফোন থেকে কোনো ওয়েবসাইটে ঢুকলে এ-সংক্রান্ত কুকিস ওয়েব ব্রাউজারে সংরক্ষিত হয়ে থাকে। এগুলো গুগল ও ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের কাছে বেশ মূল্যবান। কারণ, ব্যবহারকারীদের এসব তথ্যের ভিত্তিতেই বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশাল অঙ্কের মুনাফা কামিয়ে নেয় তারা। তবে এর মধ্য দিয়ে ব্যবহারকারীদের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
বিশ্বে চলছে সোশ্যাল মিডিয়ার রাজত্ব। যুগের চাহিদায় দিন দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। ফেসবুক ছাড়া এখন ভাবাই অসম্ভব। কী নেই এখানে? চাইলেই সবকিছু মেলে নেট দুনিয়ায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ফেসবুক। ভুয়া তথ্য প্রচার, অশালীন মন্তব্য ও ঘৃণা ছড়ানোর অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে এ মাধ্যম। এ ছাড়া ফেসবুকের বিরুদ্ধে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদে সমর্থন ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। ইয়াহু ফাইন্যান্সের এ বছরের জরিপে বিশ্বের সবচেয়ে বাজে কোম্পানি হিসেবে উঠে এসেছে ফেসবুকের নাম।
সম্প্রতি ফেসবুককে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ বলে অভিযোগ করেছেন সদ্য নোবেলজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা। এছাড়া ফেসবুকের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর ও গুজবকে প্রাধান্য দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
রেসা বলেন, ফেসবুক গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যটি ঘৃণা, ভুয়া তথ্য ও গুজব ছড়ানো রুখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ফেসবুক তথ্য নিয়ে একেবারেই নিরপেক্ষ নয় বলে অনেকবার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নিরপেক্ষতার চেয়ে ঘৃণা, ক্ষোভ এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর উপরই বেশি গুরুত্ব দেয় জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।
এদিকে সম্প্রতি যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। সোস্যাল মিডিয়া জায়ান্টটিকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়াতে দেওয়ায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বিগত কয়েক বছর ধরেই ইউরোপে একাধিক অ্যাক্টিভিস্ট সংস্থা ইন্টারনেটে তথ্যসুরক্ষা ও ক্রেতাদের উন্নত অধিকার বিষয়ে লড়াই করছে। ফেসবুক, গুগলের মতো সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছে তারা। এমনই এক অভিযোগের তদন্তের ফল ফ্রান্সে সাম্প্রতিক এই ২১ কোটি ইউরোর জরিমানা এবং যুক্তরাজ্যের মামলা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৩৫
আপনার মতামত জানানঃ