পঞ্চম ধাপের ৭০৮ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ বুধবার। গতকাল সোমবার (৩ জানুয়ারি) মধ্যরাতে নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হয়েছে। তবে ভোট শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে প্রাণহানির খবর এসেছে। নির্বাচনি সহিংসতায় মানিকগঞ্জ ও চট্টগ্রামে দুজন নিহত হয়েছেন।
ভোটগ্রহণ সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা মাঠে নেমেছেন। এছাড়া আচরণবিধি দেখভাল করতে জুডিশিয়াল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও রয়েছেন। তবে এতে থামানো যাচ্ছে না সহিংসতা, অনিয়ম আর ক্ষমতা প্রদর্শনের সংস্কৃতিকে।
নির্বাচনি সহিংসতায় নারীসহ নিহত ২
মানিকগঞ্জের দৌলতপুরের বাচামারা ইউনিয়নের বাচামারা ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষে এক নারী নিহত হয়েছেন। নিহত ৫০ বছরের ওই নারীর নাম ছলেমন খাতুন। তার বাড়ি বাচামারা গ্রামে।
শিবালয় সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তানিয়া সুলতানা এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলার ওই কেন্দ্রে আজ বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মেম্বার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
তানিয়া সুলতানা জানান, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হঠাৎ করে ভোটকেন্দ্রে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে ওই নারী প্রাণ হারান।
এর আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এক মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকের হামলায় আরেক প্রার্থীর সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার চাতরী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিংহরা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহতের নাম অংকর দত্ত। তিনি ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী টিউবওয়েল প্রতীকের সমর্থক। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাতরী ইউনিয়নে নির্বাচনি দায়িত্বে থাকা পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ঘটনা ভোটকেন্দ্র থেকে কিছুটা দূরে হয়েছে। এখনো বিস্তারিত জানি না। যতটুকু জেনেছি, আপেল প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় তিনি আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
চমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত জেলা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘অংকর দত্ত নামের ওই ব্যক্তিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে বড় কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই। স্বজনরা প্রতিপক্ষের কিল-ঘুষিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করছেন।’
কেন্দ্রে ঢুকে স্লোগান, নৌকার ৪ সমর্থক আটক
বগুড়ার শেরপুরে গাড়িদহ ইউনিয়নে নির্বাচনি আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে নৌকার চেয়ারম্যান প্রার্থীর চার সমর্থককে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহীদুল ইসলাম।
পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার মহিপুর সামিট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে আজ বুধবার বেলা ১১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারিক হাকিম তাদের আটক করেন।
ওসি জানান, আটক চারজন মহিপুর সামিট স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের নির্ধারিত সীমানার মধ্যে ঢুকে নৌকার প্রার্থীর হয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন। কয়েকবার নিষেধ করার পরও স্লোগান বন্ধ না করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের আটক করে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবিলায় প্রস্তুত তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, এক প্লাটুন বিজিবি এবং পুলিশ ও র্যাবের টহল টিম কাজ করছে।’
টাঙ্গাইলে ৪০০ ব্যালট ছিনতাই
টাঙ্গাইলের বাসাইলে কেন্দ্রে গুজব ছড়িয়ে অতর্কিত হামলা চালিয়ে চেয়ারম্যান পদের ৪০০ ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে নৌকার কর্মী-সমর্থকরা। এ ঘটনায় ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে।
আজ বুধবার (০৫ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানায়, কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছিল। হঠাৎ নৌকার কর্মী-সমর্থকরা দল বেধে কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকে।
ফুলকি ইউনিয়নের জশিহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সাজেদুল আলম বলেন, কেন্দ্রের বাইরে উত্তেজনা দেখে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পরে গুজব ছড়িয়ে নৌকার লোকজন বুথে প্রবেশ করে চারশ ব্যালট পেপার ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
এতে দায়িত্বরত পোলিং ও অন্যান্য কর্মকর্তারা আতঙ্কিত হয়ে একটি কক্ষে আশ্রয় নেয়। পরে কেন্দ্রে র্যাব প্রবেশ করলে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হয়।
ভোট শুরুর আগে ফলাফল শিটে স্বাক্ষর
সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি সদর ইউনিয়নে বড় দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই ফলাফল শিটে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।
তবে এটি ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন কেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. শাহজাহান হোসেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ফলাফলের এজেন্ট ফরম স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া আমার ভুল হয়েছে। সে জন্য এজেন্ট ফরমের নিচ থেকে কেটে ফেলেছি।
নতুন এজেন্ট ফরম কোথায় পাবেন, প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা ফটোকপি করব। অগ্রিম স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কেউ জানে না।
এ বিষয়ে আশাশুনি উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অনেক সময় সবার সর্বসম্মতিক্রমে করা যায়। প্রিসাইডিং অফিসার কোনো পক্ষ নিয়ে কাজ করছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এমন করার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি দেখছি যাতে এমন ভুল আর না হয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ