
জার্মানিতে এক কিশোরীকে ১৪ বছর আটকে রেখে যৌন নিপীড়ন করার দায়ে এক ডাচ ধর্মগুরুকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এখবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ধর্মগুরুকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন জার্মানির একটি আদালত। ৫৯ বছর বয়সী কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্বঘোষিক ওই ধর্মগুরুর নাম রবার্ট বি।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০০৬ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এক নারীকে আটকে রেখে তার ওপর অন্তত ১৩২ বার যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন রবার্ট বি। নেদারল্যান্ডসের সীমান্ত সংলগ্ন ক্লেভ শহরের আদালত রবার্ট বি-কে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন।
২০২০ সালে নেদারল্যান্ডস সংলগ্ন আরেক শহর গখ-এ অভিযান চালিয়ে ১৪ বছর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া ওই নারীকে উদ্ধার করে জার্মান পুলিশ। এক উপাসনালয়ে আটক অবস্থায় উদ্ধার করা হয় তাকে। সেই অভিযানেই কথিত ধর্মগুরুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার ‘অর্ডার অব ট্রান্সফর্ম্যান্টস’ ধর্মের ৫৪ জন অনুসারীও তখন সেই উপাসনালয়ে উপস্থিত ছিলেন। ৫৪ জন অনুসারীর মধ্যে ১০ জনই শিশু।
জানা গেছে, রবার্ট বি কথিত ‘অর্ডার অব ট্রান্সফর্ম্যান্টস’-এর সব অনুসারীর কাছে নিজেকে ‘নবি’ বলে দাবি করতেন।
এদিকে, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রবার্ট বি। তার দাবি, ভুক্তভোগী নারী ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন এবং সে-কারণে স্বেচ্ছায়ই তিনি নির্জনতাকে বরণ করেছিলেন।
তার আইনজীবী জানিয়েছেন, ক্লেভের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।
এর আগে পঞ্চাশের দশক থেকে ফরাসি ক্যাথলিক গির্জায় যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছে ২ লক্ষেরও বেশি শিশু। এমনই এক তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই চাঞ্চল্য গোটা বিশ্বে। এই ঘটনায় অনুশোচনা প্রকাশ করতে ফ্রান্সের লুর্দের গির্জায় হাঁটু গেড়ে বসে প্রার্থনায় শামিল হলেন ফরাসি যাজকেরা। ওই প্রার্থনায় নিজেদের অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন তারা।
গত শতকের পঞ্চাশের দশক থেকে ফান্সের গির্জাগুলিতে ২ লক্ষেরও বেশি শিশুর উপরে যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে প্রকাশ, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন জানিয়েছে, নির্যাতনকারী অন্তত তিন হাজার যাজকের বিরুদ্ধে তারা প্রমাণ সংগ্রহ করেছিল। শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের দায় যে গির্জাগুলির তা সম্প্রতি স্বীকার করে নিয়েছেন বিশপেরা।
সম্প্রতি লুর্দে অনুশোচনা প্রকাশের জন্য প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে ১২০ জন আর্চবিশপ, বিশপ এবং সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে একটি ছবির উন্মোচন করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, একটি ক্রন্দনরত শিশুর মাথা। ওই ছবিটি গির্জার দেওয়ালে নির্যাতনের ‘স্মৃতি হিসাবে’ রাখা থাকবে। ছেলেবেলায় যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া এক ব্যক্তি ওই ছবিটি তুলেছিলেন। তিনি যে যন্ত্রণা সহ্য করেছিলেন, তা ওই প্রার্থনা অনুষ্ঠানে স্মরণ করা হয়।
ফ্রান্সের রোমান ক্যাথলিক গির্জায় এক সময় হাজার হাজার শিশুকামী পাদ্রী ছিল। রোমান ক্যাথলিক চার্চে ঘটে যাওয়া বহু যৌন নির্যাতনের ঘটনার তদন্তের জন্য গঠিত এক নিরপেক্ষ কমিশন এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
দেশটিতে ১৯৫০-এর দশক থেকে রোমান ক্যাথলিক চার্চে অসংখ্য যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনাগুলো তদন্তের জন্য একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করা হয়। ওই কমিশনের প্রধান জঁ-মার্ক সোভ।
তিনি ফরাসি বার্তা সংস্থাকে জানিয়েছেন, ২,৯০০ থেকে ৩,২০০ শিশু নির্যাতনকারী পাদ্রী এবং অন্যান্য যাজকদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহ করেছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫০
আপনার মতামত জানানঃ