চতুর্থ ধাপে দেশের ৮৩৮টি ইউনিয়ন পরিষদে ভোটগ্রহণ চলছে। আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে চতুর্থ ধাপের নির্বাচন এখনি প্রশ্নবিদ্ধ। পুলিশের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম আর কারচুপির চিরায়ত পথ ধরেছে এই ধাপের নির্বাচনও।
ইতোমধ্যে তিন ধাপে ২ হাজার ২২৬টি ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে নির্বাচনী সহিংসতায় ৫০ জনের মতো নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছে তিন শতাধিক ব্যক্তি।
তাই মাঠ প্রশাসন থেকে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনে কঠোর হওয়ার জন্য ইসিতে সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনে অতিরিক্ত ফোর্স ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় ২০ উপজেলায় নিয়োজিত রয়েছেন অতিরিক্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
গত তিন ধাপের ভোটের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ভোটের দু’দিন আগে থেকে দু’দিন পর পর্যন্ত সহিংস ঘটনাগুলো ঘটে থাকে। তাই ইসিও ভোটের দু’দিন পর পর্যন্ত বিভিন্ন বাহিনী ও ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়োজিত রাখছে ভোটের মাঠে।
চতুর্থ ধাপে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন মোট ২৯৫ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ৪৮ জন প্রার্থী। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১১২ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ১৩৫ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৩ হাজার ৮১৪ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯ হাজার ৫১৩ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ৩০ হাজার ১০৬ জন প্রার্থী ভোটের লড়াই করছেন। চেয়ারম্যান পদে এই ধাপে ১৬টি রাজনৈতিক দল প্রার্থী দিয়েছে। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী সংখ্যা তিন-চতুর্থাংশ।
উল্লেখ্য, পঞ্চম ধাপে ৭০৭টি ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। আর ষষ্ঠ ধাপে ২১৯ ইউপিতে ভোট হবে ৩১ জানুয়ারি।
প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল
চতুর্থ ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে প্রকাশ্যে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে ভোটারদের বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রিজাইডিং অফিসারকে বিষয়টি বারবার জানানোর পরও কোনো কাজ হয়নি।
আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরুর পর টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়ন পরিষদের ১০৫ নম্বর বঙ্গবন্ধু পূর্ব পুনর্বাসন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল মতিন সরকারের নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ভোটার।
ভোটাররা জানান, প্রভাবশালী এ প্রার্থীর এজেন্টদের ইশারায় প্রকাশ্যে সিল মারতে বাধ্য করছেন। অন্যথায় তারা হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।
প্রিজাইডিং অফিসার খায়রুল ইসলাম জানান, এ কেন্দ্রে ৩১৮৫ জন ভোটার রয়েছেন। প্রকাশ্যে সিল না মারার জন্য বারবার অনুরোধ করা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের কেন্দ্র ছাড়ার হুমকি
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদিঘি ইউনিয়নের একটি ভোটকেন্দ্র থেকে সাংবাদিকদের বের হয়ে যেতে নির্দেশ দেন পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই)। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, কেন্দ্র না ছাড়লে সাংবাদিকদের আটক করা হবে।
আজ রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভোটগ্রহণ চলাকালে জগন্নাথদিঘি ইউনিয়নের গাংরা আনেয়ারুল উলুম মাদ্রাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই এসআইয়ের নাম চিরঞ্জীব বড়ুয়া। তিনি কুমিল্লা কোতোয়ালি থানায় কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ওই কেন্দ্রে থাকা কুমিল্লার অন্তত তিনজন সাংবাদিক জানান, সকাল ৯টার দিকে কেন্দ্রে বিভিন্ন অনিয়মের মধ্যে ভোটগ্রহণ চলছে। এ সময় একাধিক পুরুষ ও নারী প্রার্থী কেন্দ্রে পুলিশের সহযোগিতায় জালভোট চলছে বলে অভিযোগ করেন।
এমন সময়ে এসআই চিরঞ্জীব সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে এসে সব সাংবাদিককে কেন্দ্র ছাড়তে বলেন।
এসময় সাংবাদিকরা বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছি, আপনার কথায় কেন্দ্র ছাড়বো কেন? আর সাংবাদিকরা কেন্দ্রে থাকলে আপনার সমস্যা কী?
এরপর অভিযুক্ত ওই এসআই তার সঙ্গীও ফোর্সদের ডেকে বলেন, সাংবাদিকদের আটক করো। পরে বিষয়টি কুমিল্লার পুলিশ সুপারকে জানালে তিনি এসআই চিরঞ্জীবকে শান্ত করেন।
এ সময় এসআই চিরঞ্জীব বলে ওঠেন, আমি এসপি সাহেবের ডিউটি করছি, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মানার সময় নেই। এছাড়া সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার মো.ফারুক আহমেদ বলেন, এখন ভোটগ্রহণ চলছে। ভোটগ্রহণের পরে বিষয়টি দেখবো।
বরখাস্ত প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, দুই পোলিং এজেন্টকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে ভোটকক্ষে টাকা পাওয়ার দায়ে দুই পোলিং এজেন্টকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। বরখাস্ত করা হয়েছে একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে।
আখাউড়া ও বিজয়নগর উপজেলার দুটি কেন্দ্রে রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, আখাউড়ার মনিয়ন্দ ইউনিয়নের উত্তর সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে ঘোড়া মার্কা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুর রহমানের পোলিং এজেন্ট হাবিবুল বাশারকে তল্লাশি করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও ১৭ হাজার টাকার একটি খাম পাওয়া যায়।
খামের ওপর লেখা নম্বরটি ভোট কেন্দ্রেটির একজন সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তার বলে নিশ্চিত হন পুলিশের সদস্যরা।
আখাউড়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম নির্বাচনি আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে পোলিং এজেন্ট হাবিবুলকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অলোক কুমারকে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করেন।
বিজয়নগর উপজেলার পত্তন ইউনিয়নের আদমপুর সরকারি বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট মহসিনকে আটক করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় মহসিনের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন এবং ৩৪ হাজার টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪১০
আপনার মতামত জানানঃ