
১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের যৌন নির্যাতনের ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে এক খ্রিষ্টান যাজকের বিরুদ্ধে। তিন দশক ধরে পূর্ব তিমুরের প্রত্যন্ত ওয়েকাস ছিটমহলে অনাথ এবং অসহায় শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা করেন এই খ্রিষ্টান যাজক রিচার্ড ড্যাশবাচ।
পাশাপাশি শিশু পর্নোগ্রাফি এবং পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগও প্রমাণিত হয়েছে তার বিরুদ্ধে। নিজের তত্ত্বাবধানে থাকা বেশ কয়েকজন অনাথ এবং সুবিধাবঞ্চিত কন্যাশিশুকে যৌন নির্যাতনের অপরাধে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে এই যাজককে।
মঙ্গলবার পূর্ব তিমুরের একটি আদালত যুক্তরাষ্ট্রের পদচ্যুত এই যাজককে কারাদণ্ডের আদেশ দেয়। কট্টর ক্যাথলিকশাসিত পূর্ব তিমুরে প্রথমবারের মতো একজন খ্রিষ্টান যাজককে এই ধরনের সাজা দেয়া হয়েছে৷
রিচার্ড ড্যাশবাচ নামের ৮৬ বছর বয়সী এই যাজকের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মামলাটি শুরু হয় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে। দেশটির রাজধানী দিলির ২০০ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রত্যন্ত ওয়েকাস ছিটমহলে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হয়েছে আজ মঙ্গলবার। এদিন আদালতের শুনানিতে জনগণকে উপস্থিত থাকতে দেয়া হয়নি। এর আগে গত মাসে এ মামলার সর্বশেষ শুনানি হয়।
ড্যাশবাচ ১৯৯০ সালের শুরুর দিকে অনাথ এবং অসহায় শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়কেন্দ্র গড়ে তুলেছিলেন ওয়েকাস ছিটমহলে। ২০১৮ সালে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্যাটিকান কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের পিটসবার্গে জন্ম নেয়া এই যাজককে পদচ্যুত করে।
শত শত শিশুরা ড্যাশবাচের এই হীন কর্মকাণ্ড সহ্য করেছে। তার মধ্যে ডজনেরও বেশি কন্যাশিশু নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে সামনে আসে। তবে বৈধ প্রযুক্তিগত কারণে মাত্র নয় জনের অভিযোগ এই মামলায় নিবন্ধিত করা হয়। এ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এর মধ্যে পাঁচ জনের সাথে কথা বলে।
তারা তাদের ভয়াবহ অভজ্ঞতার কথা বলে। জানায়, ড্যাশবাচ তার শোবার ঘরে মেয়েদের একটি তালিকা রাখত। এবং প্রতি রাতে ওই তালিকার কোন একটি মেয়েকে তার কোলে বসতে হত। অন্যান্য শিশু ও কর্মচারীরা ঘুমানোর আগে তাদের ঘিরে প্রার্থনা করত।
তারা জানায়, কোলে বসা মেয়েটিকে এরপর ড্যাশবাচের সাথে রাতে শুতে হত এবং বিভিন্ন নির্যাতনের মধ্য দিয়ে যেত হত। যার মধ্যে আছে ওরাল সেক্স এবং ধর্ষণও ছিল। মাঝেমধ্যে অন্যান্য শিশুদেরও এই কাজে যুক্ত করা হত।
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় যাজকের পক্ষের আইনজীবী মিগুয়েল ফারিয়া বলেন, ‘আমি এই রায় মেনে নিতে পারছি না। যাজক ও তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে রায়ের বিপক্ষে আমরা আপিল করবো।’
আসামি পক্ষের আইনজীবী আরও জানান, চার জন ভুক্তভোগীর জবানবন্দির ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়েছে। তবে কোন সাক্ষীর জবানবন্দি নেয়া হয়নি।
রায়কে সাধুবাদ জানালেও আসামির অপরাধের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে যাজকের সর্বোচ্চ ৩০ বছরের কারাদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯২২
আপনার মতামত জানানঃ