সুমিত রায়
একবিংশ শতাব্দীর মূল প্রযুক্তির উপর আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে চীন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যেতে চলেছে। এর মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ইতোমধ্যে দৌড়ে হেরে যেতে পারে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক পলিসি স্কুল হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের চার জন শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ “দ্য গ্রেট টেক রেভিরিশন: চায়না বনাম আমেরিকা” শিরোনামের একটি নতুন প্রতিবেদনে এই উপসংহার টেনেছেন। তারা একবিংশ শতাব্দীর সংজ্ঞায়িত করতে প্রস্তুত এমন বেশ কয়েকটি মূল প্রযুক্তির দিকে নজর দিয়েছেন, এগুলো হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), ৫জি, কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞান (কিউআইএস), অর্ধপরিবাহী, জৈব প্রযুক্তি এবং সবুজ শক্তি, আর এই ক্ষেত্রগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে কীভাবে এগিয়ে চলেছে তা দেখার চেষ্টা করেছেন। তারা বলছেন, কিছু প্রতিযোগিতায়, যেমন ৫জি এবং কোয়ান্টাম তথ্য বিজ্ঞান নিয়ে তারা বলছেন চীন ইতিমধ্যেই আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোর ক্ষেত্রে বর্তমান গতিপথগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এগুলোতে চীন আগামী ১০ বছরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাবে।
২০২১ সালের অক্টোবরে পেন্টাগনের একজন প্রাক্তন সফ্টওয়্যার প্রধান সতর্ক করে দেন যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিকে মনোনিবেশ করার কারণে চীন বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে এআই ক্ষেত্রে। চীন ২০১৮ সালে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলকে পৌঁছায় যখন তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের বিশ্বের বৃহত্তম প্রকাশক হয়ে ওঠে।
ইউএস ন্যাশনাল একাডেমি অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড মেডিসিনের এর ১৯৯৯ সালে করা একটি ভবিষ্যদ্বাণীর কথা প্রতিবেদনটিতে নিয়ে আসা হয়। এখানে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, বিশ্ব প্রযুক্তির একটি অবিশ্বাস্য উত্থানের প্রাক্কালে রয়েছে যা শীঘ্রই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীকে বাস্তবে পরিণত করবে। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রযুক্তির প্রাথমিক চালিকাশক্তি ছিল, সেই সাথে ২১শ শতকেও দেশটি প্রযুক্তিতে তার শীর্ষস্থান বজায় রাখার একটা শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। মনে হচ্ছে, চীনকে ব্যাপকভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়েছিল। প্রতিবেদনে ১৯৯২ সালে টাইম ম্যাগাজিনের আসন্ন শতাব্দী সম্বন্ধে একটি নিবন্ধের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, যেখানে উদ্ধতভাবে যুক্তি দেখানো হয়েছে: “একবিংশ শতাব্দীতে চীন টেক জায়ান্টে পরিণত হতে পারবে না, কারণ এর জনসংখ্যা খুব বড় এবং এর মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন খুব কম।” তবে ২০১০ সালের মধ্যে এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে চীন লো কস্ট মেনুফ্যাকচারিং হাবের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। চীনা রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে, সারা দেশে এর বহুজাতিক সংস্থাগুলির উত্থান ঘটে, এবং ২১শ শতকের ভিত্তিগত প্রযুক্তিগুলোতে এগুলো গুরুতর প্রতিযোগিতা শুরু করে। প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে “যেখানেই চীনা সরকার তার অভ্যন্তরীণ বাজারে সংস্থাগুলিকে রক্ষা করার, ভর্তুকি এবং সরকারী তথ্য অ্যাক্সেসের মাধ্যমে জাতীয় চ্যাম্পিয়নদের সমর্থন করার এবং কর্পোরেশনগুলিকে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করার সুযোগ পায়, তখন তা সেটা করে। এর ফলে, চীনের প্রযুক্তি বাস্তুতন্ত্র ‘গতিশীলতা, উদ্ভাবন এবং প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে’ ২০২৫ সালের মধ্যে সিলিকন ভ্যালির সমতুল্য হতে পারে।”
২১শ শতাব্দীর পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে চীনের উত্থানের খবর নতুন কিছু নয়। ২০২১ সালের অক্টোবরে পেন্টাগনের একজন প্রাক্তন সফ্টওয়্যার প্রধান সতর্ক করে দেন যে প্রযুক্তিগত অগ্রগতির দিকে মনোনিবেশ করার কারণে চীন বিশ্বব্যাপী আধিপত্যের দিকে যাচ্ছে, বিশেষ করে এআই ক্ষেত্রে। চীন ২০১৮ সালে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলকে পৌঁছায় যখন তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পিছনে ফেলে বৈজ্ঞানিক নিবন্ধের বিশ্বের বৃহত্তম প্রকাশক হয়ে ওঠে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে এখন ভেবে দেখতে হবে যে কিভাবে এটি বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারে যেখানে দেশটি আর একমাত্র সর্বোচ্চ পরাশক্তি নয়। যাই হোক, এই প্রতিবেদনটিকে এলার্মিস্ট হিসেবে সমালোচনা করা গেলেও এটাও বিবেচ্য যে প্রতিবেদনটি শেষ হয়েছে একটি আশার কথা দিয়েই। এটি বলছে এটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নেসেসারিলি “গেম ওভার” নয়। প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক গ্রাহাম এলিসন বলেন, “সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা নেতা লি কুয়ান ইউ বলেছিলেন, যে রাষ্ট্র তার সামনে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে সেই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় খেলোয়ার হবে। আর এটাই হতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি কার্যকরী ও টেকশই চায়না পলিসির সূচনা বিন্দু, আর সেটাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তার সামনে তাকা চ্যালেঞ্জ অনুযায়ী গতিশীল ও প্রণোদিত করবে।”
তথ্যসূত্র:
The Great Rivalry: China vs. the U.S. in the 21st Century
আপনার মতামত জানানঃ