চিকিৎসা ক্ষেত্রে গাঁজার নানা রকম ব্যবহার আছে। সম্প্রতি কানাডাও গাঁজা বৈধ করে দিয়েছে। তবে গাঁজার কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও রয়েছে। গাঁজা সেবনের ফলে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শুক্রাণুর সংখ্যা ও এর সজীবতার ওপর। আর এই প্রভাব থেকে যায় পরবর্তী প্রজন্মেও।
শুক্রাণুর সংখ্যা কমে গেলে সন্তানধারণে সমস্যা সৃষ্টি হয়। শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়াকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় অলিগোস্পার্মিয়া। প্রতি মিলিলিটার বীর্যে দেড় কোটির কম শুক্রাণু থাকলেই তাকে বলা হয় অলিগোস্পার্মিয়া।
নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, গাঁজাসেবনের ফলে ইঁদুরের শুক্রাণু সংখ্যা ও সজীবতা দুটোই হ্রাস পায়। এই প্রভাব বজায় থাকে ইঁদুরের পরবর্তী প্রজন্মেও।
ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক সম্প্রতি ইঁদুরের ওপর এই গবেষণা চালান। এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে গাঁজার ধোঁয়া। যা মানুষের সেবন করা গাঁজার অনুরূপ।
ওই গবেষণায় কিছু ইঁদুরকে টানা দশ দিন নিয়ম করে তিন বেলা গাঁজার ধোঁয়া সেবন করানো হয়। আরেক দল ইঁদুরকে গাঁজা থেকে দূরে রাখা হয়। দশ দিন পর দুই দল ইঁদুরের শুক্রাণুর সংখ্যা তুলনা করে দেখা হয়।
গবেষকরা দেখেন, গাঁজার ধোঁয়া সেবন করা ইঁদুরগুলোর শুক্রাণুর সংখ্যা ও সজীবতা উভয়ই কমে গেছে। এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ওসব ইঁদুরের ছানার ডিএনএ-তেও— যদিও ওগুলোকে গাঁজা সেবন করানো হয়নি।
ওই গবেষণায় মোট ৩০টি ইঁদুর ব্যবহার করা হয়। ১৫টি ইঁদুরকে গাঁজা সেবন করানো হয়েছে, আর ১৫টিকে গাঁজা সেবন করানো হয়নি।
এরপর গাঁজা সেবন করা পুরুষ ইঁদুরের সঙ্গে গাঁজা সেবন না-করা স্ত্রী ইঁদুরের প্রজনন ঘটানো হয়। এদের প্রজননের ফলে যেসব ছানা জন্মায়, ওগুলোর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
তবে তৃতীয় প্রজন্ম, অর্থাৎ গাঁজা নেওয়া ইঁদুরের নাতি-নাতনিদের মধ্যে গাঁজার একই প্রভাব দেখা যায়নি। অর্থাৎ গাঁজার সরাসরি প্রভাব পড়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের ওপর। শুধু শুক্রাণুর সংখ্যাই নয়, গাঁজা সেবনের ফলে শুক্রাণুর সজীবতাও কমে যায়।
পুরুষের ক্ষেত্রে গাঁজা সেবনের প্রভাব
এদিকে, কম বয়সী সে সকল পুরুষরা গাঁজা সেবন করেন তাদের ভবিষ্যতে বাবা হওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায় বলে এক গবেষণায় জানানো হয়। গাঁজার উপাদান পুরুষের শুক্রাণুর আকার ও আকৃতিতে প্রভাব ফেলে বলে গবেষণায় দেখা গেছে। সেফিল্টড এবং ম্যানচেস্টার সবকয়টি বিশ্ববিদ্যালয় মিলে এ সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালিত করে।
পুরুষের জীবনযাপন পদ্ধতি শুক্রাণুর ওপর প্রভাব ফেলে বলে দেখেছেন তারা। গবেষকরা ১৪টি ফার্টিলিটি ক্লিনিক থেকে ২ হাজার ২৪৯ জন পুরুষকে বেছে নেন এবং তাদের মেডিক্যাল ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেন।
স্পার্ম মর্ফোলজিতে এসব পুরুষদের স্পার্ম সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তারা ৩১৮ জন পুরুষের শুক্রাণু নেন যাদের ৪ শতাংশয়েরও কম সংখ্যকের শুক্রাণু আদর্শ মাপে ছিলো। এ ছাড়া ১ হাজার ৬৫২ জন পুরুষকে আলাদাভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে রেখে তাদের শুক্রাণু পরীক্ষা করা হয়। এদের শুক্রাণু আদর্শ অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এদের মধ্যে যারা গাঁজা নিতেন তাদের স্পার্মের আদর্শ অবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। অন্যদিকে ভালো শুক্রাণু উৎপন্ন হয় যারা আদর্শ জীবনযাপন করেছেন।
ইউনিভার্সিটি অভ সাউথ অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণায় দেখা যায়, গাঁজাসেবী ও যারা গাঁজা সেবন করেন না, তাদের হাঁটার ধরনেও পার্থক্য রয়েছে।
গবেষকদের মতে, গত কয়েক দশকে বিভিন্ন কারণে প্রায় পুরুষদের শুক্রাণুর সংখ্যা ৫৯ শতাংশ কমেছে। মানসিক চাপ, শুক্রাশয়ের সমস্যা, বিভিন্ন যৌন রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সারসহ একাধিক কারণে শুক্রাণুর সংখ্যা কমে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো গঞ্জিকা সেবন।
যেভাবে তৈরি হয় সমস্যা
গাঁজা সেবনের কারণে মানসিক ও শারীরিক সব ধরনের ক্ষতি হয়। সামাজিক দক্ষতা কমে যায়। দীর্ঘদিন গাঁজা খেলে এর ওপর নির্ভরশীলতা তৈরি হয়। দিন দিন গাঁজা খাওয়ার মাত্রা অনেক বেড়ে যায়।
গাঁজা সেবনকারীরা ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়। কখনো অতি আনন্দে আত্মহারা থাকে। আবার কখনো মনমরা থাকে। অনেক সময় কোনো কিছু মনে রাখাতে পারে না। অর্থহীন কথাবার্তা বলে। হাত-পা কাঁপতে থাকে। হাঁটাচলা করতে কষ্ট হয়। চোখ লাল হয়ে যায়।
প্রথম দিকে খাওয়াদাওয়া বেশি করে। ধীরে ধীরে খাওয়ার রুচি একেবারে কমে যায়। রক্তচাপ কমে যায়। বুক ধড়ফড় করে। ধীরে ধীরে সবকিছু থেকে আনন্দ হারায়। নিজেকে সব সময় গুটিয়ে রাখে। ঘুমের নিয়ম বলে কিছু থাকে না। মানসম্মান ও ব্যক্তিত্ব নষ্ট হয়। হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়। তখন অন্যকে আঘাত করে।
অনেক সময় আত্মহত্যার চেষ্টাও করে। বিনা কারণে অন্যকে সন্দেহ করে। স্বাস্থ্য ভাঙতে ভাঙতে দুর্বল হয়ে পড়ে। হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একপর্যায়ে যৌনশক্তি নষ্ট হয়ে যায়।
গাঁজা সেবনে শুক্রাণুর সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয় সন্তানধারণে। সন্তান ধারণে ইচ্ছুক কেউ যদি এক বছর অরক্ষিত যৌন সঙ্গমের পরেও অসফল হন, তা হলে তার কারণ হতে পারে এই রোগ। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৪০
আপনার মতামত জানানঃ