বাংলাদেশের রাজশাহী জেলায় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বেআইনি সালিসের উদ্যোগে প্রাণ গেছে এক যুবকের। দেনমোহরের টাকার জন্য নববিবাহিত ওই যুবককে হত্যার পর লাশ ইউনিয়ন পরিষদের সভাকক্ষের জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২৯ নভেম্বর ২০২০, রবিবার সকালে পবা উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের তালাবদ্ধ সভাকক্ষ থেকে মোফাজ্জল হোসেন (২৫) নামের ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত যুবক তানোর উপজেলার জুরানপুর গ্রামের ইস্রাফিল মণ্ডলের ছেলে। এ ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলে রেজভী আল হাসান মুঞ্জিল পলাতক রয়েছেন।
চেয়ারম্যানের অনুসারীরা বলছে, দেনমোহরের টাকা আদায় করার উদ্দেশ্যে ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছিল। এই ক্ষোভে মোফাজ্জল রাতের কোনো এক সময় গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন। পরে সকালে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বরত দুই গ্রাম পুলিশ সদস্য তালা খুলে ভেতরে গিয়ে দেখেন মোফাজ্জলের লাশ জানালার গ্রিলের সঙ্গে ঝুলছে। এরপর থানা পুলিশে খবর দেওয়া হলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান।
নিহতের দুলাভাই রাসেল আহম্মেদ জানান, গত ২০ নভেম্বর পবার হরিপুর এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে রিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় মোফাজ্জলের। এরপর প্রথা অনুযায়ী গত শুক্রবার বিকেলে আটমঙ্গলার জন্য বর মোফাজ্জল ও তাঁর স্ত্রীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নিয়ে যান। সেই রাতেই বর মোফাজ্জলকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া নিয়ে তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়। শেষে বিষয়টি মোফাজ্জলের পরিবারকেও জানানো হয়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন শনিবার সকালে হরিপুর যান।
চেয়ারম্যান বজলে রেজভী আল হাসান মুঞ্জিলের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসায় বসেন। একপর্যায়ে কনের পরিবার থেকে জানানো হয়, তাঁরা তাঁদের মেয়েকে আর মোফাজ্জলের বাড়িতে পাঠাবেন না। কিন্তু বিয়ের সময় ধার্য করা দেনমোহরের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা মোফাজ্জলকে দিয়ে তালাক নিতে হবে। কিন্তু মোফাজ্জল ওই টাকা দিতে পারবেন না বলে জানালে কনের পরিবারের সদস্যরা মোফাজ্জলকে আটকে রাখেন।
মীমাংসা বৈঠকটি রাত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর চেয়ারম্যান মুঞ্জিলের কথা অনুযায়ী মোফাজ্জলকে রাতে ইউনিয়ন পরিষদের সভাকক্ষের ভেতরে আটকে রেখে বাইরে তালা দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর সকালে সভাকক্ষের জানালার গ্রিল থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। চেরম্যানের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনাকে ক্ষোভে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে নিহত মোফাজ্জলের ভাই তোফাজ্জল হোসেন দাবি করেন, তাঁর ভাইকে চেয়ারম্যানের নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছে।
নগর পুলিশের দামকুড়া থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদের পাহারায় দায়িত্বে থাকা মিলন ও আরিফুলকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করছি।’ রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। ইউপি চেয়ারম্যান কাউকে আটকে রাখতে পারেন না।’
এসডাব্লিউ/আরা/১৩২০
আপনার মতামত জানানঃ