‘ডিভোর্স’ বাড়ছে অ্যালবাট্রস পরিবারে। আর এর কারণ উষ্ণতা। মূলত উষ্ণতার ধকলে অতিষ্ঠ হয়ে ‘ডিভোর্স’ বাড়ছে তাদের পরিবারে। সম্প্রতি এমন তথ্যই প্রকাশিত হয়েছে যুক্তরাজ্য সরকারের বৈজ্ঞানিক পরামর্শদাতা সংস্থা দ্য রয়েল সোসাইটির একটি গবেষণাপত্রে।
গবেষণাটি চালনো হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বিশ্বস্ত প্রাণীজাতির একটি, অ্যালবাট্রস পাখিদের নিয়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যালবাট্রস পাখিদের মধ্যে বিচ্ছেদের পেছনে জলবায়ু পরিবর্তন বহুলাংশে দায়ী!
বিগত ১৫ বছর যাবত ফকল্যান্ড দ্বীপের ১৫,৫০০ প্রজননক্ষম অ্যালবাট্রস জুটির উপর গবেষণা চালানোর পর এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে অ্যালবাট্রসের বিচ্ছেদকে স্রেফ প্রতারণাই বলা যায়। কারণ এখানে জুটিদের একজন তার আসল সঙ্গীকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
কিন্তু পাখিটির বেলায় সমীকরণ অত সহজ নয়। মানুষের মতো অ্যালবাট্রস পাখিরাও বেড়ে ওঠার সময় সবচেয়ে সুন্দর একটি সম্পর্কে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেক পাখি সফল হয়, আবার ব্যর্থও হয়। তবে শেষ পর্যন্ত পছন্দসই জোড়া খুঁজে পেলে, অ্যালবাট্রসরা বাকি জীবন ওই সঙ্গীর সাথেই পার করে দেয়।
সাধারণ হিসাবে শুধুমাত্র ১ শতাংশ অ্যালবাট্রস তাদের প্রথম সঙ্গীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটায়, যা যুক্তরাজ্যে মানুষের মধ্যে ডিভোর্সের হারের চাইতে অনেক কম।
লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও গবেষণার সহ-লেখক ফ্রান্সেসকো ভেন্তুরা বলেন, “অ্যালবাট্রসদের ক্ষেত্রে একগামীতা ও দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের বাধন খুবই সাধারণ ব্যাপার।”
কিন্তু বছরের পর বছর ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে প্রায় ৮ শতাংশ অ্যালবাট্রস জুটি একে অপরের সাথে বিচ্ছেদ ঘটাচ্ছে। এই প্রক্রিয়াকে ‘পরিবেশগত কারণে বিচ্ছেদ’ বলে অভিহিত করা চলে।
সাধারণত অ্যালবাট্রস পাখিদের মধ্যে তখনই বিচ্ছেদ ঘটে যখন একজোড়া পাখি সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ হয়। তখন তারা পরবর্তী মৌসুমে নতুন কারো সঙ্গে গিয়ে ঘর বাধে।
কিন্তু নতুন গবেষণাতে দেখা গেছে, সফলভাবে সন্তান জন্মদানের পরেও অ্যালবাট্রসদের মধ্যে বিচ্ছেদ হচ্ছে। এর পেছনে সম্ভাব্য দুটি কারণের কথা উল্লেখ করেন ফ্রান্সেসকো।
অ্যালবাট্রস একটি সামুদ্রিক দিবাচর পাখি। সাধারণ পাখির তুলনায় আকারে একটু বড় হয়। দক্ষিণ মেরুবলয়ে একটানা একই দিকে দীর্ঘক্ষণ উড়ে বেড়ায়। দুপাশে ডানা প্রসারিত করে এদের দলবদ্ধ নৃত্য দর্শনীয়।
গবেষকরা বলছেন, সমুদ্রের পানি উচ্চমাত্রায় গরম হওয়ায় খাবারের খোঁজে এই পাখিগুলোকে যেতে হয় দূর-দূরান্তে, অপেক্ষাকৃত শীতল কোনো জলরাশিতে। আর এ কারণেই সঙ্গীদের সঙ্গে ‘ডিভোর্স’ বাড়ছে বা সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে বলে গবেষকরা মতপ্রকাশ করেন।
অস্বাভাবিকভাবে পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৮ শতাংশ অ্যালবাট্রসের ‘ঘর ভেঙেছে’। গবেষকরা ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের ১৫ হাজার ৫০০ প্রজনন জোড়ার দিকে লক্ষ্য করে ১৫ বছরে এ তথ্য উদঘাটন করেছেন।
সামুদ্রিক পাখিগুলোর জন্য পানি গরম হওয়া মানেই কম মাছ, কম খাবার, বেঁচে থাকার জন্য একটি কঠিন পরিবেশ। এমন পরিবেশে কম ছানাই বেঁচে থাকতে পারে। পাশাপাশি পাখিগুলোর স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায় এবং তারা শিকারের জন্য বহু দূরে যেতে বাধ্য হয়।
নিউজিল্যান্ডের সংরক্ষণ বিভাগের প্রধান বিজ্ঞান উপদেষ্টা ড. গ্রায়েম এলিয়ট বলেন, ‘প্রাণিজগতের সবচেয়ে অনুগত অংশীদারদের একজন হিসাবে, অ্যালবাট্রসদের প্রেমের জীবন দীর্ঘকাল ধরে বৈজ্ঞানিক গবেষণার বিষয় হয়ে উঠেছে।’
তিন দশক ধরে এই পাখিটি নিয়ে অধ্যয়ন করা এ গবেষক বলেন, ‘এসব জিনিসকে আমরা সুপার-ডুপার হিউম্যান বলে মনে করি।’
লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং রয়েল সোসাইটির সংশ্লিষ্ট সমীক্ষার সহলেখক ফ্রান্সিসকো ভেনচুরা জানান, গবেষকরা জানতে পেরে অবাক হয়েছিলেন, পানি উষ্ণ হওয়ার সঙ্গে অ্যালবাট্রস দম্পতির সম্পর্ক বিয়োগের হার ছিল অনেক বেশি। এর জন্য প্রধানত দায়ী ছিল পর্যাপ্ত মাছের অভাব।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ