অতিসম্প্রতি প্রকাশিত নিজের লেখা বইয়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদের কড়া সমালোচনা করেছেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। উগ্র ইসলামপন্থীদের তুলনাও টেনেছিলেন। এতে বিজেপি সরকারের রোষানলে পড়েন। এবার বাড়িতে হামলা এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির উগ্রবাদী হিন্দুরা এই হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সমালোচকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে সর্বশেষ সহিংসতার ঘটনা এটি। খবর আল জাজিরার।
দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের এই শীর্ষ নেতার ‘সানরাইজ ওভার অযোধ্যা’ বইয়ের কিছু অংশ নিয়ে বিতর্কের পর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলো। গত মাসে প্রকাশিত ওই বইটিতে প্রধানমন্ত্রী মোদির অধীনে হিন্দু জাতীয়তাবাদ যেভাবে বিকাশ লাভ করেছে তাকে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে তুলনা করেছেন তিনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকাশিত ওই বইয়ে হিন্দুত্ববাদের সঙ্গে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) তুলনা টেনে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন তিনি। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছে, সালমান ভারতের হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার রাজনীতি করারও অভিযোগ তুলেছে দলটি।
সেই বিতর্ক শুরুর তিন দিন পরই উত্তরাখন্ডের পাহাড়ে সালমান খুরশিদের বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটল।
পুলিশ জানিয়েছে, কট্টরবাদী স্থানীয় হিন্দু গোষ্ঠীর প্রায় ২০ জন সোমবার সালমান খুরশিদের বাড়ির কাছে জড়ো হয়। তারা চিৎকার করে স্লোগান দিচ্ছিল, পাথর ছুড়ে বেশ কিছু জানালা ভেঙে দেয়, লুটপাট চালায় এবং একটি দরজায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছে। তবে এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সালমান খুরশিদ। তবে হামলার ঘটনার সময় তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন না। পরবর্তীতে ওই হামলার ঘটনার ভিডিও তিনি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন।
ফেসবুকে হামলার ভিডিও-সহ একটি পোস্ট দেন তিনি। লেখেন, ‘আমার মনে হয় এই বন্ধুরা আজ নিজেরাই প্রমাণ দিয়ে গেলেন, আমি উগ্র হিন্দুত্ব নিয়ে কিছু ভুল বলেছিলাম কি?’ খুরশিদের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে তার বাড়িতে। দু’জন সেই আগুন নেভানোর প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। দেখা যাচ্ছে ভাঙচুর চালানো হয়েছে দরজা ও জানলাতেও।
এদিকে সালমান খুরশিদের বাড়িতে হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা শশী থারুর। তার কথায়, ‘লজ্জাজনক ঘটনা। সালমান খুরশিদ এমন একজন নেতা যিনি গোটা পৃথিবীতে ভারতের মুখকে উজ্জ্বল করেছেন’।
সালমান খুরশিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার ‘সানরাইজ় ওভার অযোধ্যা’ বইয়ে সনাতন হিন্দুধর্ম ও বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্বের পার্থক্য করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘এ দেশের সাধু-সন্তরা যে সনাতন হিন্দুধর্মে আস্থা রাখতেন, তাকে এক পেশিবহুল হিন্দুত্ব ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে, যা সব মাপকঠিতেই আইএসআইএস ও বোকো হারামের জেহাদি ইসলামের রাজনৈতিক রূপ।’
বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, সালমান খুরশিদ হিন্দুদের অবমাননা করেছেন। বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেন, যে দল মুসলিমদের ভোট পেতে ইসলামিক জেহাদের সঙ্গে তুলনা করে গেরুয়া সন্ত্রাসের মতো শব্দ চালু করেছিল, সেই দলের একজন নেতার কাছ থেকে আর কীই-বা আশা করা যায়?
তবে সালমান খুরশিদ বলছেন, আমি এসব লোককে সন্ত্রাসী বলিনি। আমি শুধু বলেছি ধর্ম বিকৃত করার ক্ষেত্রে এই মানুষগুলো একই। হিন্দু মতকে দূরে সরিয়ে রেখে বর্তমানে উগ্রবাদী হিন্দুরা বোকো হারাম এবং এ ধরনের অন্যান্য সংগঠনের মতো আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছে। যারা হিন্দু ধর্মকে জানেন না, তাদের কাছ থেকেই এমন প্রতিক্রিয়া আসবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫১১
আপনার মতামত জানানঃ