চলতি বছরের আগস্টে আফগানিস্তানের পশ্চিমা সমর্থিত বেসামরিক সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তালিবান। এরপর থেকেই দেশটির আইন ব্যবস্থা অচলপ্রায়। বর্তমানে তালিবান যোদ্ধারাই দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছে।
এ অবস্থায় সম্প্রতি আফগানিস্তানে শরিয়া আইন বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তালিবান। এ কারণে অন্তর্বর্তীকালীন তালিবান সরকার সম্প্রতি একটি সামরিক ট্রাইব্যুনালও গঠনের কথা জানিয়েছে।
কট্টর ইসলামপন্থি গোষ্ঠীটির সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুনজাদার নির্দেশে গঠিত হয়েছে সামরিক এই ট্রাইব্যুনালটি; এমনটিই জানা গেছে টার্কিশ রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশনের (টিআরটি) প্রতিবেদন থেকে।
সূত্র মতে, ট্রাইব্যুনালটির চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ওবায়দুল্লাহ নিজামি এবং উপপ্রধান হিসেবে সৈয়দ আঘাজ ও জাহেদ আখুনজাদেহ দায়িত্ব পেয়েছেন।
গত বুধবার এক বিবৃতিতে তালিবান সরকারের উপমুখপাত্র এনামুল্লাহ সামানগনি জানান, আফগানিস্তানে শরিয়া আইন মোতাবেক জীবনব্যবস্থা, আল্লাহ প্রদত্ত নির্দেশ ও সমাজ সংস্কার নিশ্চিতে কাজ করবে সামরিক এই ট্রাইব্যুনাল।
সামানগনি জানিয়েছেন, সামরিক ট্রাইব্যুনালকে ইসলামিক বিধানের ব্যাখ্যা নির্ধারণের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে বর্ণিত জীবনবিধান অনুযায়ী নাগরিক আইন ও ক্ষেত্রবিশেষে আইনশাস্ত্র সম্পর্কিত ডিক্রি জারি করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালকে।
পাশাপাশি অভিযোগ দাখিল, মামলা দায়ের এবং তালিবান সরকারের কর্মকর্তা ও পুলিশ, সেনাবাহিনী আর গোয়েন্দা ইউনিটের সদস্যদের বিরুদ্ধেও পিটিশন জমা দেয়ারও অধিকার থাকবে এই ট্রাইব্যুনালের।
আফগানিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের বরাত দিয়ে আনাদোলু এজেন্সির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিবান দেশটির ক্ষমতা দখলের পর থেকে গত তিন মাসে আফগানিস্তানে অপরাধের হার কমেছে। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তালিবান প্রশাসন ৮২ জন অপহরণকারী আর অর্ধশতাধিক চোরকে এ অব্দি আটক করেছে বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, সম্প্রতি দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ওলেসি জিরগার সাবেক সদস্য আল্লাহ গুল মুজাহিদকে ‘আটক ও নির্যাতনের’ অভিযোগ তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
সূত্র মতে, তালিবান সদস্যরা মুজাহিদকে মারধর ও অসম্মান করছে; এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে দেয়া হয় এ নির্দেশ।
শরিয়া আইন কী?
শরিয়া আইন হল ইসলাম ধর্মের আইনী পদ্ধতি। এই আইন ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন এবং সুন্নাহ ও হাদীস থেকে এসেছে। মূলত ইসলামের নবীর কাজ এবং বক্তব্য থেকে এই আইন উদ্ভূত।
শরিয়া মূলত জীবনাচরণের এমন এক পদ্ধতি যা সব মুসলমানকে মেনে চলতে হয়। এর মধ্যে নামাজ, রোজা এবং যাকাতের মতো বিষয়গুলোও আছে। শরিয়া আইন কীভাবে আল্লাহর ইচ্ছা মুসলিমরা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পালন করবে, সেটি বুঝতে সহায়তা করে।
মূলত একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে কী করণীয়, সে সম্পর্কে নির্দেশ দেয় শরিয়া। যে সব দৈনন্দিন বিষয়ে মুসলমানেরা শরিয়া মোতাবেক কাজ করবেন, তার মধ্যে রয়েছে পরিবারিক আইন, অর্থ ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিষয়।
এ ক্ষেত্রে যে সব বিষয়ে শরিয়া আইন থেকে সরাসরি কোন উত্তর পাওয়া যায় না, সে সব বিষয় ধর্মীয় পন্ডিতরা নির্দেশনা হিসেবে বিধিবিধান দিতে পারবেন।
শরীয়া আইনের ৫ টি আলাদা আলাদা ধারা আছে। সুন্নীদের জন্য আছে চারটি মাযহাব। এগুলো হল হানবালি, মালিকি, শাফিই ও হানাফি। অন্যদিকে শিয়াদের জন্য আছে একটি মাযহাব। সেটি হল শিয়া জাফারি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৩৫৪
আপনার মতামত জানানঃ