‘হ্যালো, আমি বিকাশ থেকে বলছি। আপনার বিকাশে সাত হাজার টাকা ঢুকেছে। আপনার একাউন্টে একটু সমস্যা হয়েছে। এটি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি সঠিক তথ্য দিতে পারেন তবে আপনার একাউন্টটি সচল রাখা হবে।’
বিকাশ একাউন্টধারীদের নিকট এভাবে ফোন করেই প্রতারণা পর্ব শুরু করে প্রতারকেরা। এজন্য তারা গ্রাহকের সর্বশেষ লেনদেনের তথ্য জেনে গ্রাহককে সেগুলোও জানায়। এতে ওই গ্রাহকের একপ্রকার বিশ্বাস জন্মায় যে, ফোনটি বিকাশ অফিস থেকেই করা হয়েছে। এরপর প্রতারকেরা গ্রাহকের ভোটার আইডি কার্ডের নাম, নম্বর, পিতার নাম জানতে চায়। বলা হয় আপনার নাম্বারে একটি ম্যাসেজ যাবে, পিন নাম্বারটি বলুন।
এটুকুই প্রতারণার কৌশল। এরপর একটি ম্যাসেজ আসলো সাত হাজার টাকা ক্যাশ আউটের। ব্যাস্। যা করার তা এর মধ্যে করা শেষ প্রতারকের। গ্রাহককে দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে ফেলে এভাবেই তারা টাকা হাতিয়ে নেয়। আর এজন্য তারা প্রথমেই বিভিন্ন মাধ্যম থেকে গ্রাহকদের বিকাশ জমার ব্যালেন্স জেনে নেয় প্রথমে।
মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা নতুন না। ভুলিয়ে ভালিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে টাকা হাতিয়ে নেন এক শ্রেণির প্রতারক। কোন কোন ঘটনায় প্রতারকদের সঙ্গে বিকাশ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নামও উঠে আসত। কিন্তু সব সময় ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যেতেন তারা।
তবে এবার সাড়ে চার লাখ টাকার প্রতারণার ঘটনায় এক বিকাশ কর্মকর্তার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গত মঙ্গলবার গাজিপুর থেকে তানভীর সিরাজী ওরফে সিজার নামের (৩৮) বিকাশের সাবেক এই টেরিটরি ম্যানেজারকে গ্রেপ্তার করেছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে সিআইডি কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক এই কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে বিকাশের এজেন্টদের তালিকা সরবরাহ করতেন প্রতারকদের কাছে। আর প্রতিটি তালিকার জন্য তিনি পেতেন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।
আজ বুধবার রাজধানীর মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান।
তিনি বলেন, গত মার্চে টাঙ্গাইলের সখিপুরে বিকাশ এজেন্টের সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার একটি ঘটনায় সখিপুর থানায় মামলা দায়ের করেন এক ভুক্তভোগী। মামলার বাদী রাসেল সখিপুর থানার তক্তারচালা বাজারের মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশ ব্যবসায়ী। বিকাশ এজেন্ট নম্বরে প্রতারকেরা ফোন দিয়ে নিজেদের বিকাশ কর্মকর্তা পরিচয়ে দিয়ে বিভিন্ন প্রলোভনে ওটিপি ও পিনকোড নম্বর নিয়ে মোট ৪ লাখ ৪৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
ওই মামলাটির তদন্তে সিআইডির সিরিয়াস ক্রাইম শাখা জড়িত থাকার অভিযোগে বিকাশ প্রতারক চক্রের ছয়জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে। তাদের মধ্যে তিন জন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় এবং জবানবন্দিতে তাঁদের সহযোগী হিসেবে বিকাশ প্রতারণার কাজে টেরিটরি ম্যানেজার তানভীর জড়িত আছে বলে স্বীকার করে।
বিশেষ পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান খান বলেন, তানভীর সিরাজী ওরফে সিজার বিকাশে ২০১২ সাল থেকে টেরিটরি ম্যানেজার হিসেবে কাজ করেন। তিনি ঢাকা, গাজীপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জে দীর্ঘ নয় বছর কর্মরত ছিলেন। সেসময়ে বিকাশ প্রতারকদের টাকার বিনিময়ে বিকাশ এজেন্ট নম্বর সংবলিত শিট সরবরাহ করতেন। তানভীর একজন বিকাশ কর্মকর্তা হয়ে প্রতারকদের এই কাজে টাকার বিনিময়ে তথ্য সহযোগিতা করার কথা স্বীকার করেছেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, গ্রাহকের পাশাপাশি নতুন এজেন্টরাও এখন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। কারণ তারা নতুন এজেন্ট হওয়ায় বিকাশের সবকিছু বুঝে উঠতে পারেন না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাইদুর রহমান বলেন, প্রতারণায় জড়িত তানভীরের বিষয়ে বিকাশ কর্তৃপক্ষকে বিস্তারিত জানানো হবে। তাঁকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষ টাঙ্গাইলের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তবে বিকাশের হেড অব করপোরেট কমিউনিকেশন্স বিভাগের শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘অভিযুক্ত মো. তানভীর সিরাজী বিকাশের কর্মকর্তা নন। শৃঙ্খলতাজনিত কারণে তাকে বিকাশ থেকে এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। তদন্ত চলাকালীন সময়ে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে শুরু থেকেই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেছে বিকাশ।’
এসডব্লিউ/এসএস/১৮৫০
আপনার মতামত জানানঃ