পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) সঙ্গে পাক সরকারের অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে। এরমধ্যেই পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়াকে পদত্যাগের আহ্বান জানানোয় দেশটির অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর জেনারেলের ছেলেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন সামরিক আদালত। রাষ্ট্রদ্রোহের দায়ে দোষী সাব্যস্ত সেনা জেনারেলের ওই ছেলেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বিবিসি উর্দুর বরাত দিয়ে ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইর প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
বিবিসি উর্দুর বরাত দিয়ে এএনআইর প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাপ্রধান জেনারেল বাজওয়ার মেয়াদ বৃদ্ধির সমালোচনা করে একটি চিঠি লিখেছিলেন সাবেক সেনা জেনারেলের ওই ছেলে। চিঠিতে সেনাবাহিনীর প্রধানের পদ ছাড়তে বাজওয়ার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিঠিতে পাক সেনাপ্রধানের মেয়াদ বৃদ্ধির সমালোচনা করার দায়ে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জাফর মেহেদি আসকারির ছেলে হাসান আসকারিকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ইসলামাবাদের হাইকোর্টে।
সামরিক আদালতে বেসামরিক নাগরিকের বিচার হতে পারে কি-না, সেটি নিয়ে বিতর্কের তৈরি হয়েছে।
দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, সামরিক আদালতের নিযুক্ত এক বিচারক চলতি বছরের জুলাইয়ে হাসানের পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেন। কিন্তু সেই সময় হাসান আসকারির বাবা অভিযোগ করে বলেন, সাহিওয়ালের ব্যাপক সুরক্ষিত কারাগারে ছেলের সাথে দেখা করতে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি।
এদিকে সদ্যই পাকিস্তানে নিষিদ্ধ ইসলামি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-লাব্বাইক পাকিস্তানের (টিএলপি) সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে কমপক্ষে চার পুলিশ নিহত ও ২৬৩ জন আহত হয়েছেন।
গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) টিএলপির কয়েক হাজার কর্মী ইসলামাবাদের দিকে লং মার্চ শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। সেদিন দুই পুলিশ সদস্য প্রাণ হারান। বুধবারও পুলিশ-টিএলপির মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিন পুলিশ সদস্য নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়েছেন।
এর পরপরই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শোনা যায় সেখানে তিনি বলেছেন, টিএলপি’কে কোনোভাবেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দেওয়া হবে না। বৈঠক শেষে পাকিস্তানি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পাঞ্জাবে রেঞ্জার্স নামানোর ঘোষণা দেন।
চলতি বছরের এপ্রিলে টিএলপির নেতা সাদ রিজভিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও মুক্তির দাবিতে দেশটির কয়েকটি বড় শহরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি তারা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে পাকিস্তানে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের বহিষ্কার দাবি করে। পুলিশ জানায়, এসব দাবি নিয়ে টিএলপির নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা রাজধানী ইসলামাবাদের দিকে মিছিল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
কিছুদিন আগে ফ্রান্সে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ পায়। এর পক্ষে কথা বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তার প্রতিবাদে টিএলপি পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ফ্রান্সের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়ার দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি তারা পাকিস্তান থেকে ফরাসি রাষ্ট্রদূতের বহিষ্কার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সরকার পরিষ্কারভাবে ঘোষণা দিয়েছে যে, পাকিস্তানে ফরাসি দূতাবাস বন্ধ করে দিতে টিএলপির দাবি তারা মানবে না। এ ছাড়া পাকিস্তানে নেই দেশটির রাষ্ট্রদূত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৯
আপনার মতামত জানানঃ