
ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস ক্ষেপণাস্ত্র বানাল চীন। শব্দের চেয়ে ছ’গুণ বেশি গতিসম্পন্ন এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা তিন হাজার ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি বলে দাবি করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, এই ক্ষেপণাস্ত্র কোনও শহরে রাসায়নিক বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্তব্ধ করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
বেইজিংয়ের অ্যাকাডেমি অব লঞ্চ ভেহিকল টেকনোলজি’র বিজ্ঞানীদের দাবি, এই ক্ষেপণাস্ত্রকে এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন নজরদারি চালানোর জন্য মহাকাশে যে আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম রয়েছে সেই ব্যবস্থাকেও ধোঁকা দিতে পারে।
প্রসঙ্গত, আমেরিকা এবং রাশিয়ার মতো দেশগুলি নিজেদের নজরদারি উপগ্রহের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে নজর রাখে। ফলে পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তে কোনও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ হলে তার নির্দিষ্ট সময় এবং তথ্য তাদের হাতে চলে যায়। এর মাধ্যমে তারা আন্দাজ করতে পারে যে সেই ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় আঘাত হানতে চলেছে।
কিন্তু সূত্র মতে, সেই সতর্ক ব্যবস্থাকেও অকার্যকর করতে পারে চীনের এই ক্ষেপণাস্ত্র, এমনটাই দাবি করেছে বেইজিংয়ের ওই সংস্থার বিজ্ঞানীরা।
জানা যায়, লক্ষ্যস্থলে পৌঁছনোর পর ওই ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রাসায়নিক বিস্ফোরণ হতে শুরু করে। ফ্লাক্স কমপ্রেশন জেনারেটরের মাধ্যমে একটা শক এনার্জি তৈরি হয়। যা ১০ সেকেন্ডের জন্য লক্ষ্যস্থলের বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যস্থা এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
যেখানে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে তার দু’কিলোমিটার এলাকার মধ্যে সমস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তব্ধ হয়ে যাবে। এবং ওই এলাকার সমস্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এ প্রসঙ্গে প্রকৌশল বিজ্ঞানী সান ঝেং এবং তার সহ-গবেষকরা চীনের স্থানীয় টেকটিক্যাল মিসাইল টেকনোলজি জার্নালে বলেছেন, এটি মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে ৯৫ শতাংশ শক্তিকে নির্গমন করতে পারে। এর ফলে এটি টার্গেটকৃত এলাকার ২ কিলোমিটারজুড়ে ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসকে কার্যকরভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে। একই সঙ্গে ওই এলাকার বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাও বিকল করে দেয়।
অন্যান্য অ-পারমাণবিক ইএমপি বোমার তুলনায়, এই অস্ত্রটিতে কোনও ব্যাটারি থাকবে না বলে জানিয়েছেন চীনের সামরিক বিজ্ঞানীরা। তারা বলেছেন, ব্যাটারির ড্রাই সেলের পরিবর্তে এতে সুপার-ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হবে।
লাইভসায়েন্স ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, ইএমপি হলো— ইলেক্ট্রন ও চুম্বকীয় শক্তির ব্যাপক বিস্ফোরণ; যা প্রাকৃতিকভাবেও ঘটতে পারে। তবে এই বিস্ফোরণের কারণে মানুষের তেমন কোনও ক্ষতি হয় না। এই ধরনের চৌম্বকীয় শক্তি কাছাকাছি দূরত্বের তারের ইলেকট্রনকে অকেজো করে দিতে পারে।
একসঙ্গে লাখ লাখ বজ্রপাতের সময় যে আলোকরশ্মি তৈরি হয়, ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) এক আঘাতেই তারচেয়ে বেশি রশ্মি সৃষ্টি করতে পারে। বজ্রপাতের মতোই অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক লাইন, বিমান, রাডার, উন্নত কম্পিউটার এবং আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও ধ্বংস করতে সক্ষম এই ইএমপি।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও এশিয়ার চীন ও ভারত এই অস্ত্র তৈরি করছে। তবে ভবিষ্যতে অনেক দেশের সামরিক বাহিনী এমনকি বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীও এই অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক পিটার প্রাই।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬১৩
আপনার মতামত জানানঃ