পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিদায় নিয়েছে বহু আগেই। তবে অতিকায় প্রাণীটি নিয়ে মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিভিন্ন সময় বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে উদ্ধার হয়েছে ডাইনোসরের জীবাশ্ম। উন্মোক্ত হয়েছে অনেক রহস্য।
বিশাল শরীর আর দাপুটে মেজাজ নিয়ে প্রায় ১৭ কোটি বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করেছে ডাইনোসর। পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী এবং বৈজ্ঞানিকদের অনুমান এই প্রভাবশালী প্রাণী এরা। প্রথম ডাইনোসরের বিবর্তন হয়েছিল আনুমানিক ২৩ কোটি বছর পূর্বে। কোটি কোটি বছর আগে তা বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে।
তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ডাইনোসর নিয়ে মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। আগ্রহের শেষ নেই বিজ্ঞানী ও গবেষকদেরও। এবার বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের এক নতুন প্রজাতি আবিষ্কার করলেন। ব্রাজিল থেকে এই ফসিলটি আবিষ্কার করে বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ডাইনোসরের এই প্রজাতিটি ৭ কোটি বছর আগে দক্ষিণপূর্ব আমেরিকায় ঘুরে বেড়াত।
পেলিওঅন্টোলজির একটি দল এই নতুন জীবাশ্ম আবিষ্কার করে আপ্লুত। ব্রাজিলের মন্টে অল্টো এলাকা থেকে প্রাপ্ত এই জীবাশ্ম ডাইনোসর চর্চায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। প্রসঙ্গত ভৌগোলিকভাবে এই অঞ্চল বরাবরই ডাইনোসর চর্চায় নতুন নতুন গবেষণার দরজা খুলে দিয়েছে। জুগিয়েছে নানা রসদ।
এই ডাইনোসর প্রজাতির নাম ‘কুরুপি ইটাটা’। গবেষণার নেতৃত্বে যিনি আছেন তিনি জানান, এই ‘কুরুপি ইটাটা’ চতুষ্পদ ডাইনোসর, এর দৈর্ঘ ১৬ ফুট। পরীক্ষায় জানা গিয়েছে, এই ধরনের ডাইনোসরের পেশি ও হাড়ের সংস্থান থেকে বোঝা যাচ্ছে, এরা ভালরকম দৌড়ত।
২৩১ থেকে ২৪৩ মিলিয়ন (২৩.১-২৪.৩ কোটি) বছরের মধ্যে ডাইনোসরের প্রথম আবির্ভাব। ১৭.৭ কোটি বছর ধরে পৃথিবীতে এদের বিচরণ ছিল। পাখিসদৃশ ডাইনোসর ছাড়া ৬ কোটি ৫৫ লাখ বছর আগে এদের বিলুপ্তি ঘটে। সে সময় ঠিক কী ঘটেছিল, বিজ্ঞানীরা সে বিষয়ে পুরো একমত নন। কিন্তু এই বিলুপ্তির পেছনে উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতকে বেশ বড় করে দেখা হয়। এ ছাড়া অগ্ন্যুত্পাত থেকে রাসায়নিক নিঃসরণ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ অন্য কারণগুলোও বিবেচনা করা হয়।
ধারণা করা হয়, ৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগে অন্তত ১০ -১৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুর আঘাতের পৃথিবী থেকে ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু গত বছর যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব রিডিং ও ব্রিস্টলের বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরের ফসিলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বলেন, ওই উল্কাপাত বা গ্রহাণুর আঘাতের অন্তত ৫ কোটি বছর আগেই ডাইনোসরদের বিলুপ্তির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। গ্রহাণুর আঘাতে সেটি শেষ হয় মাত্র। পরিবর্তিত পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে না পারার কারণেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছিল বলে তারা মনে করেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডাইনোসরের জন্মের সময় পৃথিবী ছিল উষ্ণ। কিন্তু দিনে দিনে পৃথিবী শীতল হয়ে আসতে শুরু করে। সমুদ্রের পানির উচ্চতাও নেমে যেতে শুরু করে। এর ফলেই ডাইনোসর বিলুপ্ত হতে শুরু করে। ডাইনোসরের সঙ্গে স্তন্যপায়ী প্রাণীর জন্ম অনেকটা একই সময়ে হলেও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা শীতল পৃথিবীর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬২২
আপনার মতামত জানানঃ