দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত গুয়াইয়াকিল শহর। সেখানেই আছে কুখ্যাত একটি জেল। দেশের অধিকাংশ ড্রাগ মাফিয়াদের ওই জেলে রাখা হয়। বুধবার সেই জেলেই কার্যত দাঙ্গা শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, দুইটি মাদকচক্রের মধ্যে লড়াই শুরু হয়। সকলের হাতেই ছিল আগ্নেয়াস্ত্র এবং ছুরি। জেলের ভিতর তারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলেও অভিযোগ।
প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাংগুলোর মধ্যকার এই দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। এটিই দেশটির ইতিহাসের কারাগারে সবচেয়ে নৃশংস সহিংসতার ঘটনা বলে জানিয়েছে সরকারি কর্মকর্তারা। খবর বিবিসি।
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ইকুয়েডরের ওই রুট দিয়ে মেক্সিকো এবং অ্যামেরিকার মধ্যে মাদক পাচার হয়। ইকুয়েডরের নাগরিকরাও ওই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। মাদক চক্রের দুইটি গ্যাং অত্যন্ত সক্রিয়। একটির নাম লস লোবোস এবং অন্যটি লস কোনেরস। বুধবার এই দুইটি গ্যাংয়ের মধ্যেই জেলের ভিতর লড়াই শুরু হয়।
দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গুয়ায়েকুইল শহরে অবস্থিত কারাগারে প্রতিপক্ষ গ্যাংয়ের কয়েদিদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতায় অন্তত ১১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ৮০ জনের বেশি কয়েদি। ইকুয়েডরের ইতিহাসে কারাগারে সংঘটিত সহিংসতায় আগে কখনো এত কয়েদি হতাহত হননি।
বিবিসি সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার গুয়াকিল শহরের ঐ কারাগারে হওয়া সংঘাতে অন্তত পাঁচজন বন্দিকে শিরশ্ছেদ করে হত্যা করা হয়। বাকিরা গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন।
পুলিশ কমান্ডার ফস্তো বুয়েনানো জানিয়েছেন যে কয়েদিরা গ্রেনেডও ব্যবহার করেছেন। কারাগারটির নিয়ন্ত্রণ নিতে ৪০০ জন পুলিশ অফিসারের অভিযান পরিচালনা করতে হয়।
ঐ কারাগারটিতে কয়েদি হিসেবে আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যদের রাখা হত। স্থানীয় গণমাধ্যমের এক রিপোর্টে উঠে এসেছে যে কারাগারে সহিংসতার নির্দেশ দেয় প্রভাবশালী মেক্সিকান মাদক পাচারকারী চক্রের সদস্যরা, যারা বর্তমানে ইকুয়েডরে কার্যক্রম চালাচ্ছে।
ইকুয়েডরের কারাগার সেবার পরিচালক বলিভার গার্জন স্থানীয় রেডিও স্টেশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন যে সেখানকার পরিস্থিতি ‘ভয়াবহ’ ছিল।
তিনি জানাম, গতকাল বুধবার (২৯ সেপ্টেম্বর) এক হাজার ৪০০ পুলিশ কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় পুলিশ কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয়, কিন্তু গত রাতে এখানে অন্য ঘটনায় এখানে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। তবে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে (স্থানীয় সময়) আমরা কারাগারটির ওপর পুনরায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করি। পরে ভিতরে প্রবেশ করে আরও মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্য বিরোধী চক্রের সদস্যদের এই ধরণের সহিংসতার ঘটনা নতুন নয়। ফেব্রুয়ারিতে কারাগারের নিয়ন্ত্রণ নেয়াকে কেন্দ্র করে হওয়া সহিংসতায় ৭৯ জন কয়েদি নিহত হয়েছিলেন।
গুয়ায়েকুইল ইকুয়েডরের প্রধান বন্দর নগর। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তর আমেরিকায়, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক চোরাচালানের ক্ষেত্রে এ বন্দর একটি বড় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া মঙ্গলবারের ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা যেখানে ঘটেছে, দ্য লিটোরাল পেনিটেনশিয়ারি, সেটিকে দেশের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কারাগারগুলোর একটি হিসেবে মনে করা হয়।
সূত্র মতে, বিরোধী গ্রুপের সদস্যদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কারাগারের এক অংশ থেকে আরেক অংশে কয়েদিরা সুরঙ্গের মধ্যে দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে গিয়েছিল। ঘটনার পর ইকুয়েডরের কারা ব্যবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গুইলের্মো লাসো।
কারাগারটিতে ইকুয়েডরের মাদক পাচারকারী চক্র লস চোনেরসের সদস্যদের কয়েদি হিসেবে রাখা হয়। এই চক্রটির সাথে মেক্সিকোর শক্তিশালী সিনালোয়া মাদক পাচারকারী চক্রের (কার্টেল) সম্পর্ক রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।
কিন্তু ইকুয়েডর হয়ে মধ্য আমেরিকায় মাদক পাচারের উদ্দেশ্যে মেক্সিকোর জালিসকো নিউ জেনারেশন (সিজেএনজি) কার্টেল ইকুয়েডরের চক্রগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে।
এ বছরের জুলাইয়ে ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট লাসো মন্তব্য করেন যে ইকুয়েডরের কারাগারগুলোতে ধারণক্ষমতার অন্তত ৩০% বেশি কয়েদি রয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে, কীভাবে জেলের ভিতর আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি এবং বিস্ফোরক পেল দুষ্কৃতীকারীরা? জেল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ইকুয়েডরে বন্দিদের রাখার মতো যথেষ্ট কারাগার নেই। ফলে প্রতিটি জেলেই অনেক বেশি বন্দি থাকে। তাদের দেখার মতো নিরাপত্তারক্ষীও যথেষ্ট নেই। ফলে সহজেই তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র পৌঁছে যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩২৭
আপনার মতামত জানানঃ