দীর্ঘদিনের লড়াই শেষে সুইজারল্যান্ডে সমকামী বিয়ের পক্ষে রায় দিলেন সাধারণ মানুষ। শুধু তাই নয় সন্তান দত্তকও নিতে পারবেন সমকামী যুগল। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত গণভোটের রায়ে এমন মত দিয়েছেন দেশটির নাগরিকরা। দেশটির ৬৪ শতাংশ মানুষ গণভোটে সমকামী বিয়ের পক্ষে তাদের মত দিয়েছেন। অন্যদিকে, মাত্র ৩৬ শতাংশ মানুষ সমকামী বিয়ের বিরোধিতা করেছেন। গণভোটের ফল ঘোষণার পরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন এলজিবিটিকিউ আন্দোলনের কর্মীরা। দ্রুত সমকামী বিয়ের বিলটি এবার আইনে পরিণত হবে বলে আশা করছেন তারা। খবর ডয়চে ভেলের।
দেশটিতে সমকামীদের ২০০৭ সালে নিবন্ধনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া থাকলেও বিয়ের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি সেসময়। আগামী বছর জুলাই মাস থেকে সমকামী বিয়ের বিষয়টি কার্যকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের বিচারমন্ত্রী কারিন কেলার।
সমকামী যুগল চাইলে সন্তান দত্তকও নিতে পারবেন। এটি কার্যকর হলে সুইজারল্যান্ড হবে সমকামীদের সন্তান দত্তক নেওয়ার তালিকায় ৩০তম দেশ।
বিশ্বে সর্বপ্রথম সমকামী বিয়ে বৈধ হয় এই দেশে। ২০০০ সালে বৈধতা পাওয়ার পর ২০০১ সালে সমকামী বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় দেশটিতে।
কিছুদিন আগে সুইজারল্যান্ডের পার্লামেন্টে সমকামী বিয়ের বিলটি পেশ হয়। সেখানে বিলের পক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল সরকারপক্ষ। কিন্তু বিরোধীরা গণভোটের দাবি তোলে। সুজারল্যান্ডের নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিষয়ে যদি পঞ্চাশ হাজার মানুষের সই সংগ্রহ করা যায়, তাহলে বিল পাস হলেও ওই বিষয়ের ওপর গণভোটের আয়োজন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ঠিক সে ঘটনাই ঘটেছিল। দেশের অতি দক্ষিণপন্থি দলের আহ্বানে পঞ্চাশ হাজার মানুষের সই জমা পরে পার্লামেন্টে। তারপরেই রোববার গণভোটের আয়োজন করা হয়। সেখানে সমকামী বিয়ের পক্ষে রায় দেন সাধারণ মানুষ।
দীর্ঘদিন ধরেই সুইজারল্যান্ড সমকামী অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। ১৯৪২ সালে অ্যালপাইন রাষ্ট্রটিতে সমকামী সম্পর্ককে বৈধতা দেওয়া হয়। অর্থাৎ সমকামী হলে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করবে না। যদিও বাস্তবে পুলিশ সমকামীদের একটি তালিকা বানিয়ে রাখত।
১৯৯০ সালে সেই তালিকা তৈরি বন্ধ করা হয়। সমকামীদের একসঙ্গে থাকার আইনি সুযোগও দেওয়া হয়। কিন্তু সেই সুযোগ বিয়ের মতো ছিল না। বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী যে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে, সমকামী যুগল এতদিন তা থেকে বঞ্চিত ছিল।
গত ডিসেম্বরে সুইস পার্লামেন্ট যে বিল আনে, তাতে সমকামী যুগলকেও বিয়ের অধিকার দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু বাদ সাধে অতি দক্ষিণপন্থি দল। এবার আর সমকামী যুগলের বিয়ের অধিকার পেতে অসুবিধা থাকল না।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এবার থেকে সমকামী যুগলও শিশু দত্তক নিতে পারবে। কিছুদিনের মধ্যেই সুইস পার্লামেন্টে বিলটি আইন হিসেবে গ্রহণ করা হবে বলে মনে করছেন এলজিবিটিকিউ কর্মীরা।
সমকামী বিয়ে অধিকার আন্দোলনের প্রধান নেতা জন মুলার বলেন, সুইজারল্যান্ডের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন, এমনকি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের জন্যও বিশেষ এবং গুরুত্বপূর্ণ দিন।
দেশটিতে সমলিঙ্গের বিয়ে নিয়ে কাজ করা জাতীয় কমিটি “সবার জন্য বিয়ে”র মুখপাত্র আন্তোনিয়া হাউসওয়ার্থ বলেন, ফলাফল দেখে আমরা খুব খুশি হয়েছি এবং স্বস্তিবোধ করছি।
অন্যদিকে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সমলিঙ্গের দম্পতিদের বিয়ে করার অনুমোদন দেওয়া দেশের “সমতার মাইলফলক”।
এদিকে, রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুইজারল্যান্ডের ডানপন্থী সুইস পিপলস পার্টির (এসভিপি) মনিকা রুইগার এবং গণভোট কমিটি “নো টু ম্যারেজ ফর অল”-এর সদস্য জানান, তিনি এই ফলাফলে হতাশ। বিষয়টি ভালোবাসা এবং অনুভূতির জন্য ছিলো না, এটি ছিল শিশুদের কল্যাণের জন্য। শিশু এবং বাবারা এখানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, সংশোধিত এ আইন পাশ হলে সমলিঙ্গের যুগলরা বিয়ের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে সম্পর্কহীন শিশুদের দত্তক নিতে সক্ষম হবেন। এছাড়া, বিবাহিত সমকামী দম্পতিদের শুক্রাণুদানের মাধ্যমে সন্তান লাভের অনুমতি দেওয়া হবে। বর্তমানে যা শুধুমাত্র বিবাহিত বিষমকামী দম্পতিদের জন্যই বৈধ। এই আইন সুইস ব্যক্তিদের বিদেশি স্বামী-স্ত্রীর নাগরিকত্ব পাওয়াও সহজ করবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৪
আপনার মতামত জানানঃ