জার্মানিতে বণ্যপ্রাণী শিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং এজন্য শিকারের লাইসেন্স প্রয়োজন৷ লাইসেন্স পাওয়ার আগে কয়েকমাস প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তারপর পরীক্ষায় পাস করতে হয়৷
সাম্প্রতিক সময়ে বার্লিনের কাছে এক বনে পাইন গাছের সংখ্যা কমাতে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো হয়েছে৷ কিন্তু হরিণ আর বন্য শূকরের কারণে চারাগাছ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে উঠেছে৷ এর সমাধানে এগিয়ে এসেছেন শিকারিরা৷
সান্দ্রা শ্মিড্ট শিকারী, যিনি শিকারের জন্য বনে ফিরতে পেরে খুশি৷ সাত বছর আগে তিনি শিকারের লাইসেন্স পেয়েছেন৷ এভাবে তিনি আরো ভালোভাবে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন৷ তিনি বলেন, ‘জার্মানিতে শিকারিদের পরিবেশ সংরক্ষণকারীর স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ তাই শিকারীর লাইসেন্স দেয়ার আগে আবেদনকারীদের ইকোলজি ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ গাছ, ঔষধি গাছ, পোকামাকড়, শুঁয়োপোকা, উভচর প্রাণীদের সম্পর্কে অনেক তথ্য জানানো হয়৷ আপনার মনে হতে পারে, এটা শুধু শিকার করা, কিন্তু বিষয়টা আসলে তা নয়৷’
বার্লিনের বাইরে এক বনে শিকার করতে যান সান্দ্রা শ্মিড্ট৷ বন কর্মকর্তা মার্ক ইলেরিশ এই বনের দেখাশোনা করেন৷ তিনি শুধু সেই শিকারিদের সঙ্গে কাজ করেন, যারা ট্রফি জেতার চেয়ে বন রক্ষায় বেশি আগ্রহী৷
এদিকে বছরে মাত্র দুবার, শরৎ আর বসন্তে শিকার করা যায়৷ কারণ এই সময় প্রাণীরা বেশি সক্রিয় থাকে৷ শিকারিরা কেবল নির্দিষ্ট জাতের প্রাণী শিকার করেন৷ বন্য শূকর ও হরিণ বিশেষ করে অঙ্কুর পছন্দ করে৷ তারা চারাগাছের অনেক ক্ষতি করে৷ ফলে বনে নতুন গাছ জন্মাতে পারেনা৷
বন কর্মকর্তা ইলেরিশ একটি পুরো এলাকায় বেড়া দিয়ে রেখেছেন৷ কারণ, সেখানে গত কয়েক বছরে প্রাণীরা চারাগাছের বেশ ক্ষতি করেছে৷ কিন্তু বেড়া লাগানো ব্যয়বহুল৷ এছাড়া এতে প্রাণীদের চলাচল ব্যাহত হয়৷ জার্মানির আয়তনের প্রায় ৩০ শতাংশ বন, যেখানে ভারতে সংখ্যাটা মাত্র ১২৷
তবে অনেক বনের মধ্য দিয়ে রাস্তা ও মাঠ চলে গেছে৷ ফলে সেসব বনের আকার তুলনামূলক ছোট হয়ে গেছে৷ রেড হরিণ আর বণ্য শূকর সেসব বনে থাকে৷ তবে তাদের শিকার করা প্রাণী, যেমন শিয়াল ঐসব ছোট বনে সাধারণত থাকেনা৷
সেখানকার অনেক বন আর প্রাচীন নয়৷ সেখানে এখন অনেক জাতের উদ্ভিদ আছে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেখানে ব্যাপকহারে এভারগ্রিন গাছ লাগানো হয়েছে৷ তবে পরবর্তীতে পাতা ঝরে এমন গাছও লাগানো হয়েছে৷
ইলেরিশ বলেন, ‘আমরা প্রায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর বন দেখাশোনা করি৷ এখানে পাইন গাছের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ আমরা যখন দায়িত্ব নেই তখন ৯৬ শতাংশ পাইন গাছ ছিল৷ এরপর আমরা প্রায় অর্ধেক পাইন গাছের জায়গায় নতুন গাছ লাগিয়েছি৷’
পাইন গাছের কারণে মাটি শুকিয়ে যায় ও মাটিতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে যায়৷ এছাড়া এগুলোতে পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়৷ ফলে বনে মিশ্র জাতের গাছ থাকা ভালো৷ এতে মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ বেশি থাকে৷ ফলে পোকামাকড় ও গরমের সঙ্গে গাছ ভালো লড়তে পারে- জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে যেটা জরুরি৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৪০ বছরের মধ্যে এমন বন গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷ সেটা হয়ে গেলে তখন হয়ত আর শিকারের প্রয়োজন পড়বে না৷
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৫৪৬
আপনার মতামত জানানঃ