মডার্নার কোভিড-টিকা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিভ্রান্তি। সম্প্রতি এক গবেষণা বলছে এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদী। আবার খোদ মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি জানাচ্ছে, মডার্না টিকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে। এই নিয়েই তৈরি হচ্ছে দ্বন্দ্ব।
মডার্নার কোভিড-টিকা নেওয়ার ফলে শরীরে তৈরি হওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ন্যূনতম ৬ মাস থেকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয় বলে উঠে এসেছে এক গবেষণায়।
জানা যায়, টিকার দু’টি ডোজ নেওয়া হলে সেই ব্যক্তির আর বুস্টার ডোজ নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
আমেরিকার এই ওষুধ নির্মাতা সংস্থাটি নিজেরাও আগে দাবি করেছিল, তাদের টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পরেও কোভিড থেকে ৯৩ শতাংশ সুরক্ষা মিলবে।
‘জার্নাল সায়েন্স’ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকায় প্রকাশিত ওই গবেষণাপত্রে দেখা গেছে, সব বয়েসের মানুষের মধ্যে, বিশেষত সত্তরোর্ধ্বদের ক্ষেত্রেও মডার্নার টিকার প্রভাব উল্লেখযোগ্য। যদিও প্রবীণদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে।
‘লা হোয়া ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজি’-র অধ্যাপক শেন ক্রটির কথায়, ‘‘মডার্নার কোভিড ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধকারী অ্যান্টিবডি তৈরির ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যকর।’’
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, করোনা সংক্রমণে প্রাকৃতিক ভাবে যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, মডার্নার টিকা থেকে তৈরি হওয়া ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রায় একই রকম।
এর মাঝেই ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল’ পত্রিকায় এক প্রতিবেদনে আবার বলা হয়েছে, কোভিড টিকা নেওয়ার ফলে মহিলাদের ঋতুচক্রে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে কি না, তা নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন।
ব্রিটেনে সাত কোটির বেশি মহিলা টিকা নেওয়ার পরে ঋতুস্রাবের সমস্যার কথা জানিয়েছেন। যদিও মেয়েদের প্রজনন ক্ষমতার উপরে টিকার প্রভাব পড়ছে, এমন কোনও প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।
এদিকে, মডার্না টিকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধী ক্ষমতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কমে যাচ্ছে। গত বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিজেই জানিয়েছে মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি।
পাশাপাশি, মডার্না প্রেসিডেন্ট স্টিফেন হোজ বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এক কনফারেন্স কলে বলেন, এটি একটি অনুমান। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এর মানে হলো- আপনি যখন শরৎ ও শীতকালের দিকে তাকাবেন, সুরক্ষা ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রভাবে (যুক্তরাষ্ট্রে) আনুমানিক ছয় লাখ অতিরিক্ত সংক্রমণ দেখা যাবে।
তবে নতুন আক্রান্তদের মধ্যে কত শতাংশ গুরুতর অসুস্থ হতে পারেন, তা জানাননি তিনি। বলেছেন, কিছু লোকের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগতে পারে।
যদিও সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি গবেষণার তথ্যের সঙ্গে মডার্নার এ তথ্য সম্পূর্ণ বিপরীত। আগের গবেষণাগুলোতে বলা হয়েছিল, ফাইজার-বায়োএনটেকের তুলনায় মডার্নার টিকার সুরক্ষাই বেশি স্থায়ী।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মডার্না টিকায় মেসেঞ্জার আরএনএর উচ্চ হার এবং দুই ডোজের মধ্যে সময়ের ব্যবধান তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণে এ পার্থক্য তৈরি হয়েছে। তবে উভয় টিকাই তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে করোনায় গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধে আশাব্যঞ্জক কার্যকারিতা দেখিয়েছে।
মডার্না গতকাল বুধবার জানিয়েছে, ১৩ মাস আগে তাদের টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের তুলনায় আট মাস আগে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণের হার কম দেখা গেছে।
গবেষণা প্রতিবেদনটি এখনো পিয়ার রিভিউয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। এ অবস্থায় তৃতীয়, অর্থাৎ বুস্টার ডোজে গুরুত্ব দিচ্ছে মডার্না কর্তৃপক্ষ। গত ১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে বুস্টার ডোজের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে তারা।
মডার্না প্রেসিডেন্টের দাবি, দ্বিতীয় ডোজের পর টিকাগ্রহীতাদের শরীরে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, গবেষণায় তৃতীয় ডোজের পর তার চেয়েও বেশি তৈরি হতে দেখা গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের বিশ্বাস, এটি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে দেবে। আমরা আরও বিশ্বাস করি, এমআরএনএ-১২৭৩র তৃতীয় ডোজ আগামী বছরের বেশির ভাগ সময় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ধরে রাখার সুযোগ করে দেবে।
বুধবার প্রকাশিত আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিরোধে মডার্না টিকা এখনো ভালো কাজ করছে। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার কাইজার পারমানেন্ত হেলথ সিস্টেমের ওই গবেষণায় ৩ লাখ ৫২ হাজার জন মডার্না টিকাগ্রহীতার সঙ্গে একই সংখ্যক টিকা না নেওয়া ব্যক্তিদের অবস্থা তুলনা করা হয়েছে।
এতে দেখা গেছে, মডার্না টিকা করোনায় আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধে ৮৭ শতাংশ এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ঠেকাতে ৯৬ শতাংশ কার্যকর।
স্টিফেন হোজও বলেন, তাদের টিকার কার্যকারিতা ভালো। এর সুরক্ষা ক্ষমতা কমে যাওয়া উচিত নয়। মডার্না প্রেসিডেন্ট বলেন, (টিকা নেওয়ার পর) প্রথম ছয় মাস ঠিক আছে, কিন্তু এক বছর বা তার পরেও স্থিতিশীল থাকার বিষয়ে ভরসা করতে পারছেন না তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৫৭
আপনার মতামত জানানঃ