একদিকে আফগানিস্তানে তালিবানি উত্থান, অন্যদিকে ক্রমেই সন্ত্রাসী হানার আশঙ্কা বাড়ছে ভারত। এবার তারমধ্যেই বানচাল দেশে বড়সড় নাশকতার ছক। দিল্লি পুলিশের জালে উত্তরপ্রদেশ থেকে ধরা পড়ল ৬ জঙ্গি। এর মধ্যে দুজন পাকিস্তানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিও রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। জঙ্গিদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক এবং অস্ত্র উদ্ধার করেছে দিল্লি পুলিশ।
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, দিল্লি পুলিশের বিশেষ সেল উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র এবং দিল্লি থেকে এই জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, এই ৬ জঙ্গির গ্রেপ্তারের ফলে পাকিস্তান থেকে পরিচালিত গোটা মডিউলটি ভেঙে গিয়েছে। এদিকে জঙ্গিদের কাছ থেকে বেশ কিছু নথি ও পরিকল্পনার ছক উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতেই জানা যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগেই বড় হামলার পরিকল্পনা চালাচ্ছিল এই জঙ্গিরা।
ধৃত ৬ জঙ্গির মধ্যে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের বাসিন্দা জিশান কামার (২৮) এবং দিল্লির বাসিন্দা ওসামা ওরফে শামি (২২) পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশে থাটায় নাশকতার প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। পাক গুপ্তচরসংস্থা আইএসআই-এর তত্ত্বাবধানে সেই প্রশিক্ষণ-পর্বে তাদের বিশেষভাবে শেখানো হয়েছিল, সেতুর কোন অংশে বিস্ফোরণ ঘটালে তা স্থায়ীভাবে অকেজো করে দেওয়া যাবে।
পাশাপাশি, ভারতে আসন্ন উৎসবের মৌসুম এবং আগামী বছরের গোড়ায় পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের মতো একাধিক রাজ্যে বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের। উদ্দেশ্যে ছিল, ১৯৯৩ সালের মুম্বাই-কাণ্ডের মতো অল্প সময়ের ব্যবধানে পর পর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বিপুল প্রাণহানি ঘটানো।
সেই লক্ষ্যে পাকিস্তান থেকে ড্রোনের মাধ্যমে অল্প অল্প করে বিস্ফোরক আনতে শুরু করেছিল তারা। আদালতের নির্দেশে আটক ৬ জনকে ১৪ দিনের হেফাজতে পেয়েছে পুলিশ। তাদের জেরা করে এমনই নানা তথ্য মিলছে বলে দিল্লি পুলিশের দাবি। তদন্তকারী দলের এক সদস্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘আটককৃতদের কাছ থেকে দেড় কিলোগ্রামেরও বেশি আরডিএক্স মিলেছে। যা দিয়ে একাধিক স্থানে বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব।’
পুলিশের দাবি, মুম্বাইয়ে ১৯৯৩ সালের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ধাঁচে নাশকতার পরিকল্পনা ছিল ৬ জঙ্গির। পাশাপাশি, গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এবং রেলসেতু উড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল তাদের।
পাক মদতপুষ্ট এই জঙ্গিদের গতিবিধির বিষয়ে গত এক মাস আগে থেকেই গোয়েন্দা ইনপুট ছিল দিল্লি পুলিশের কাছে। তবে দীর্ঘ অভিযান চালালেও তাদের কাউকেই এতদিন নাগালে পায়নি পুলিশ। স্লিপার সেলের ব্যবহার করেই জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা চালানো হচ্ছিল বলে খবর। ইতিমধ্যেই তাদের কাছ থেকে প্রচুর বিস্ফোরক এবং অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।
জেরায় আটক জঙ্গিরা স্বীকার করেছে সিন্ধের ওই খামারবাড়িতে তাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ বাংলাভাষী। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের বাসিন্দা বলেই দাবি গোয়েন্দাদের।
প্রাথমিক জেরায় পুলিশের দাবি, এই দুই যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল পাক রেঞ্জারের দুই প্রাক্তন ব্রিগেডিয়ার হাজমা এবং জব্বর। পাক সেনার এই দুই প্রাক্তন অফিসার এখন আইএসআইয়ের হয়ে কাজ করে বলেই দাবি দিল্লি পুলিশের।
জেরা থেকে পুলিশ দাবি করেছে, দু’মাস আগে মুম্বই শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে গিয়েছে মুলচাঁদ ও তার একসঙ্গী। বাণিজ্য নগরীর প্রতিটি অলি-গলিসহ বেশ কয়েকটি পাঁচতারা রেস্তোরাঁর খবরাখবর তারা সংগ্রহ করে। তাদের এই গতিবিধি আঁচ করে গোয়েন্দাদের দাবি, উৎসবের মৌসুমে জঙ্গিদের টার্গেট ছিল মুম্বাই। আর সেই কারণে ২৬/১১ ধাঁচে হামলা হতে পারে বলেই আশঙ্কা ছিল গোয়েন্দাদের।
দিল্লি পুলিশের দাবি, জেরায় আটক জঙ্গিরা স্বীকার করেছে সিন্ধের ওই খামারবাড়িতে তাদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিয়েছে কমপক্ষে ১৫ থেকে ১৬ বাংলাভাষী। তাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের বাসিন্দা বলেই দাবি গোয়েন্দাদের। কিন্তু কীভাবে এই জঙ্গিদের পিছনে টাকা ঢেলেছিল দাউদ ইব্রাহিমের কোম্পানি— ডি কোম্পানি। তদন্তকারীদের দাবি, হাওলার সাহায্যে জঙ্গিদের পিছনে লগ্নি করেছিল আনিস। এই কাজে তাকে সাহায্য করেছিল মুম্বাইয়ের অন্ধকার জগতের বেশ কয়েকজন।
মূলত আনিসের উদ্যোগে এই জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল হাজমা এবং জব্বর। পাক সেনার প্রাক্তন এই দুই কর্তা লস্কর নেতা হাফিজ সইদের ঘনিষ্ঠ বলেও জানা গিয়েছে। কারণ, ২৬/১১-র সময় হাফিজের নির্দেশেই কাসভদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল হাজমা এবং জব্বর। গোয়েন্দাদের দাবি, এই ছয় জঙ্গির গ্রেপ্তারে আগামী দিনে আরও তথ্য উঠে আসবে। তাদের দাবি, এই জঙ্গিদের পিছনে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠন জেএমবি কতটা সক্রিয়, এখন সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সূত্রমতে, নির্বাচনের আগেই দীপাবলি ও নবরাত্রিতে ভারতের রাজধানী দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের একাধিক জায়গায় বিস্ফোরণের ছক ছিল জঙ্গিদের। আটকদের সঙ্গে জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার যোগ থাকতে পারে বলেও প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের। এদিকে আফগানিস্তানের তালিবানকে হাতিয়ার করেই জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপে গতি আনার চেষ্টা করছে পাকিস্তান। আর সেকথা মাথায় রেখেই উৎসবের মৌসুমে নিরাপত্তায় ফাঁক রাখতে নারাজ নয়াদিল্লি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯১৪
আপনার মতামত জানানঃ