আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তালিবান নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন হতে না হতেই। দেশটির নতুন সরকার গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের পর তর্ক-বিতর্কে জড়িয়েছেন তারা। এর জের ধরে কাবুল ছেড়ে চলে গেছেন তালিবানের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার।
তালিবানের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বরাত দিয়ে আজ বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তালিবানের ওই নেতারা জানিয়েছেন, দেশটির নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার এবং নতুন সরকারে স্থান পাওয়া এক মন্ত্রীর মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হয়।
বিবিসি জানিয়েছে, তালিবানের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও সহ-প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদারকে সম্প্রতি প্রকাশ্যে দেখা না যাওয়ার পর থেকেই আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে বলে খবর বের হয়েছে। তবে তালিবান আনুষ্ঠানিকভাবে এসব খবর প্রত্যাখ্যান করেছে।
তালিবানের একটি সূত্র বিবিসি পশতুকে জানিয়েছে, শরণার্থীমন্ত্রী ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের শীর্ষ নেতা খলিল-উর-রহমান ও বারাদার অনুসারীদের মধ্যে বাক-বিতণ্ডা হওয়ায় এই দুই শীর্ষ নেতাও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় করেন। উপ-প্রধানমন্ত্রী বারাদার অন্তর্বর্তী সরকারের কাঠামো নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করায় এই মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়ের কৃতিত্ব কে নেবে এই নিয়ে তাদের মধ্যে বিভাজন শুরু হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, বারাদার মনে করেন কূটনীতির মাধ্যমেই আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয় হয়েছে। তাই তার মতো লোকদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। অন্যদিকে, হাক্কানি গ্রুপের সদস্যরা মনে করছেন লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে বিজয় এসেছে, তাই তাদেরকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা দখলে নেয় তালিবান। এরপরই আফগানিস্তানকে ইসলামিক আমিরাত হিসেবে ঘোষণা করে করে গোষ্ঠীটি।
গত সপ্তাহে আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করে তালিবান। দেশটির নতুন এই সরকারের নেতৃত্বে রয়েছেন মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ। কোনো নারীর স্থান না হওয়া নতুন এই সরকারের এমন সব জ্যেষ্ঠ ও কট্টরপন্থি তালিবান নেতাদেরকে স্থান দেওয়া হয়েছে, যারা গত দুই দশক ধরে দেশটিতে মার্কিন বাহিনীর ওপর জঘন্য সব হামলা পরিচালনার জন্য অভিযুক্ত।
আফগানিস্তানের নতুন সরকারের প্রধান হলেও মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ জাতিসংঘের কালো তালিকায় রয়েছেন। ১৯৯৬-২০০১ সালে তালিবানের প্রথম দফার সরকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। অবশ্য বিশ্বের কোনো দেশই এখন পর্যন্ত তালিবানের এই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি।
তালিবানের একটি সূত্র বিবিসি পশতু’কে জানিয়েছে, আফগানিস্তানে গঠন করা নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে বাক-বিতণ্ডায় লিপ্ত হন মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার এবং নতুন সরকারের শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী খলিল-উর রহমান হাক্কানি। এসময় তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
খলিল-উর রহমান হাক্কানি দেশটির প্রভাবশালী হাক্কানি নেটওয়ার্কের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা। উভয় নেতার বাক-বিতণ্ডার সময় আশপাশে থাকা তাদের অনুসারীরাও ঝগড়ায় লিপ্ত হন বলেও ওই সূত্রটি জানিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, কাতারে অবস্থান করছেন তালিবানের এমন একজন শীর্ষ নেতাও এই ঘটনার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের শেষের দিকে কাবুলের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এই ঘটনা ঘটেছে।
আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার সদ্য গঠনকৃত সরকার নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং এ কারণেই মূলত বাক-বিতণ্ডার ওই ঘটনা ঘটেছে। বলা হচ্ছে- আফগানিস্তানে তালিবানের বিজয়ের পেছনে কাদের অবদান বেশি; এটি নিয়েও তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
গত সপ্তাহ থেকে বারাদারকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এরপরই নিজেদের মধ্যে গোলাগুলিতে বারাদার নিহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তবে তা অস্বীকার করেছে তালিবান।
তালিবানের কয়েকটি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, বাক-বিতণ্ডার পর মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার কাবুল ছেড়ে কান্দাহারে চলে গেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের মধ্যে অন্তর্কলহ চললে আফগানিস্তানের সংকট থেকে বের হওয়া অসম্ভব হয়ে যাবে। শরিয়া আইনের অজুহাত দিয়ে দেশটিতে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি বিরাজ করা শুরু করেছে, এর মধ্যে নিজেদের মধ্যে কলহ দেশটির পরিস্থিতি আরও সঙ্কটাপন্ন করে তুলবে বলে মনে করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৬৩৭
আপনার মতামত জানানঃ