ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম নির্যাতন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। কখনও গরু চুরির অপবাদ তো কখনও গো মাংস ভক্ষণ— ২০১৪ সালে মোদী জমানার শুরু থেকেই সংখ্যালঘুদের গণপিটুনির ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে দেশটিতে। সংখ্যালঘু অধিকার সবথেকে বেশি প্রশ্নের মুখে পড়েছে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশসহ একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে। এবার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে হিন্দু পাড়ায় চুড়ি বিক্রির অভিযোগে এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে বেধড়ক মার খেতে হল।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়, ভারতের বিজেপি-শাসিত মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে এক মুসলিম চুড়ি বিক্রেতাকে বেধড়ক মারপিট করেছে একদল কট্টর হিন্দুত্ববাদী যুবক। মুসলিম নাম গোপন করে হিন্দু এলাকায় চুড়ি বিক্রির অভিযোগে প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষের সামনে ওই বিক্রেতাকে নিমর্মভাবে পিটিয়েছে তারা।
রোববার (২২ আগস্ট) রাতে মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে বঙ্গাঙ্গ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তসলিম নামে সেই খুচরা বিক্রেতাকে মারধরের ভিডিও। এ ঘটনার নিন্দা করছেন ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকরা।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, রোববার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে চুড়ি বিক্রি করছিলেন ২৫ বছর বয়সী এক মুসলিম যুবক। এ সময় হঠাৎ একদল যুবক সেখানে হাজির হয়ে তাকে নির্দয়ভাবে মারপিট করেন এবং তার কাছে থাকা ১০ হাজার রুপি ছিনিয়ে নেন। পরে তসলিমকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে তারা। চলে সাম্প্রদায়িক আক্রমণও।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে তসলিমকে ঘিরে রেখেছে। এ সময় তাদের বলতে শোনা যায়, তাকে এই এলাকায় আর দেখতে পাবে না, যার যা নেওয়ার নিয়ে নাও। এরপরই দেখা যায়, এক ব্যক্তি তসলিমের ঝুলি থেকে সমস্ত চুড়ি বের করে নিচ্ছে। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ তাদের থামাতে এগিয়ে আসেনি। উল্টো চার-পাঁচজন এগিয়ে এসে তসলিমকে ব্যাপক মারধর করছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন মিলে তসলিমকে ঘিরে রেখেছে। এ সময় তাদের বলতে শোনা যায়, তাকে এই এলাকায় আর দেখতে পাবে না, যার যা নেওয়ার নিয়ে নাও। এরপরই দেখা যায়, এক ব্যক্তি তসলিমের ঝুলি থেকে সমস্ত চুড়ি বের করে নিচ্ছে। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কেউ তাদের থামাতে এগিয়ে আসেনি। উল্টো চার-পাঁচজন এগিয়ে এসে তসলিমকে ব্যাপক মারধর করছে।
ওই যুবককে মারতে মারতেই একজনকে বলতে শোনা যায়, আমাদের মা-বোনেরা আফগানিস্তান এত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে মুসলমানরা এখানে চুড়ি বিক্রি করছে? সেই সময়েই অন্য একজন বাকিদেরেও ওই মুসলিম যুবককে মারতে এগিয়ে আসতে বলেন। চলতে থাকে হুমকি। এদিকে উত্তেজিত জনতার মুখে পরে কার্যত হাতজোড় করে বারবার প্রাণ ভিক্ষা করতে দেখা যায় ওই চুড়ি বিক্রেতাকে। কিন্তু তারপরেও থামেনি মার। একইসঙ্গে তার ব্যাগে থাকা সমস্ত সামগ্রীর পাশাপাশি তার কাছে থাকা সমস্ত টাকাও হাতিয়ে নেয় মারমুখী জনতা।
এদিকে এই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরেই মধ্যপ্রদেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আসরে নেমে পড়েছে কংগ্রেস। কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকেও। এদিকে ইতোমধ্যেই গোটা ঘটনার কথা জানিয়ে ইন্দোর পুলিশ স্টেশনে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন ওই চুড়ি বিক্রেতা।
পুলিশের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগে চুড়ি বিক্রেতা তসলিম বলেন, তারা এসে প্রথমে আমার নাম জানতে চান। নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে মারধর শুরু করেন। তারা আমার কাছে থাকা ১০ হাজার রুপিও ছিনিয়ে নেন এবং চুড়ি ও অন্যান্য পণ্য ভাঙচুর করেন।
এই ঘটনায় বঙ্গাঙ্গ থানায় হয়রানি, ডাকাতি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট এবং হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে মামলা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছেন ইন্দোরের পুলিশ সুপার আশুতোষ বাগড়ি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
যদিও রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র অভিযুক্তদের পক্ষ নিয়েই কথা বলেন৷ নরোত্তম মিশ্র বলেন, কেউ যদি ব্যবসা করতে এসে নিজের নাম, পরিচয়, ধর্ম গোপন করে তাহলে তো তিক্ততা তৈরি হবেই। তাই বলে এই ঘটনায় সাম্প্রদায়িকতার রঙ লাগানো ঠিক নয়। ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। তার আইডি কার্ড দেখার পর বিষয়টা স্পষ্ট হয়।
এদিকে ভারতের বিশিষ্ট নাগরিকরা এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। বলছেন, ইন্দোরে প্রকাশ্যেই গণপিটুনি চলছে। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে প্রশাসন। পাশাপাশি এর জন্য মোদী শাসনকেও তোলা হয় কাঠগড়ায়। গোটা ঘটনার ভিডিও টুইটও করা হয় মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের টুইটার হ্যান্ডেল থেকে। ক্যাপশনে লেখা হয়, এভাবেই হিন্দু-মুসলিম ভ্রাতৃত্বকে ধ্বংস করেছে বিজেপি।
বিশিষ্টরা বলছেন, মুসলিম যুবকের ব্যবসা করার জন্য নাম আড়াল করা থেকে অনুধাবন করা যায় বিজেপি শাসিত দেশটিতে মুসলিম নির্যাতনের ভয়াবহতা কতটা, কতটা আতঙ্কে থাকে সংখ্যালঘু মুসলিমরা। প্রায় প্রতিদিনই দেশটির কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘু নির্যাতনের এই দৃশ্য দেখা যায়। দেশটিতে সংখ্যালঘুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আফগানিস্তানের উত্তাল পরিস্থিতিতে ভারতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি আরও উত্তেজিত করে তুলেছে। আর এসবের দায় বিজেপি সরকারের ঘাড়েই দিতে চান বিশিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২৯
আপনার মতামত জানানঃ