বান্দরবানের নাইক্ষংছড়িতে এক লাখ ৭১ হাজার পিস ইয়াবাসহ এক যুবলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। জব্দ করা এসব ইয়াবার আনুমানিক মূল্য ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা। আটক ব্যক্তির নাম উচহ্লা মার্মা পিন্টু (৩৪)। তিনি সোনাইছড়ি ইউনিয়নের একটি হাই স্কুলের দপ্তরি ও ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি।
শুক্রবার (২০ আগস্ট) রাতে পুলিশ নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের মারোগ্যা পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।
গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন। তিনি জানান, উদ্ধার করা ইয়াবার দাম আনুমানিক ৫ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
ওসি আরও বলেন, ছালা মার্মা পিন্টু কৌশলে অনেকদিন ধরে এলাকায মাদক কারবার করে আসছিলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অভিযান চালানো হয়।
পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে উচহ্লা মার্মাকে আটক করা হয়। এরপর তাকে জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তিনি ইয়াবার চালান তার হেফাজতে রাখার কথা স্বীকার করেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মারেগ্যাপাড়া থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে পাহাড়ি জঙ্গল থেকে ১৮টি বাক্সভর্তি ১ লাখ ৭১ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার ইয়াবার মূল্য প্রায় সোয়া পাঁচ কোটি টাকা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয়রা জানান, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাটি স্থলপথে ইয়াবা চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাজনীতির আড়ালে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
এদিকে ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর নাইক্ষ্যংছড়ির সোনাইছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগ কমিটির থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে যুবলীগ সভাপতি মার্মা পিন্টুকে। গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে তার সদস্য পদ বাতিল করা হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা যুবলীগ নির্বাহী কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ জসিম উদ্দীন।
জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাটি স্থলপথে ইয়াবা চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে রাজনীতির আড়ালে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সংগঠনের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
তিনি বলেন, আমরা জানতে পারি যে উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি ও সোনাইছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি মার্মা পিন্টু সাংগঠনিক গঠনতন্ত্র পরিপন্থী ও অনৈতিক কাজের সাথে জড়িয়ে পড়েছে। এই জন্য ২১ আগষ্ট শনিবার সকালে উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটির এক জরুরী সভা আহ্বান করা হয়। এতে উপস্থিত সকল সদস্যদের সম্মতিতে সিদ্ধান্তক্রমে তার সদস্য পদ স্থায়ীভাবে বাতিল করে বহিস্কারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উপজেলা যুবলীগ যুগ্ন-সম্পাদক ফাহিম ইকবাল চৌধুরী খাইরু জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া যুবলীগ সভাপতি মার্মা পিন্টু আমাদের যুবলীগের অর্জিত সুনাম ক্ষুন্ন এবং দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার প্রেক্ষিতে বান্দরবান জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের নির্দেশনায় যুবলীগ সভাপতি মার্মা পিন্টুকে পদ থেকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। সে সাথে সোনাইছড়ি ইউনিয়ন যুবলীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি মংচ হ্লা মার্মা বিজয়কে পরবর্তী সম্মেলন(কাউন্সিল) না হওয়া পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব তুলে দেন উপজেলা যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আলী হোসেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক নেতারাই নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদক বাণিজ্য। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড এমনকি ইউনিট পর্যায়ের অনেক নেতা-কর্মী-সমর্থক সরাসরি মাদক কেনাবেচা করছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের কাউন্সিলর থেকে শুরু করে ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান, জাতীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধেও মাদক কেনাবেচাসহ সরবরাহ কাজে জড়িত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী ঢাকা, এমনকি গ্রাম-পাড়া-মহল্লা পর্যায়েও মাদকের সরবরাহ, কেনাবেচা চলছেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুবলীগ নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য দিনদিন চাউর হয়ে উঠছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ক্ষমতার চূড়ান্তে বসবাস করেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আগ্রহবোধ না করায় তাদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে চলেছে। যুবলীগের এই আইনের উর্ধে চলে যাওয়ার পেছনে অবশ্য রাজনৈতিক নেতাদের কুৎসিত হাতের ভূমিকা রয়েছে।
তারা বলছেন, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে যুবলীগ নেতারা চাঁদাবাজিসহ বহু অপকর্মই করে থাকেন, যার বিরুদ্ধে স্থানীয় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতেও ভয় পান। স্থানীয় পদপ্রাপ্ত প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে থানা প্রশাসনও এক প্রকার নমনীয় থাকেন। সেটা হোক ভয় অথবা কোনো বিনিময় মাধ্যমে। খুব ঠেকায় না পড়লে স্থানীয় প্রশাসন মামলা নেন না। ফলে স্থানীয় নেতারাও লিপ্ত থাকেন লাগাম ছাড়া অপরাধকর্মে। এক্ষেত্রে প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা বা অনিয়মসহ স্থানীয় নেতাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০৯
আপনার মতামত জানানঃ