তালিবান সম্প্রতি আফগানিস্তানে থাকা সংখ্যালঘু হাজারা সম্প্রদায়ের কয়েকজন সদস্যকে নির্মমভাবে নির্যাতন করেছে এবং গণহত্যা চালিয়েছে। কাবুলের দক্ষিণ-পশ্চিমে মালিস্তান জেলার মুন্ডারখত গ্রামে ফার্সি ভাষাভাষী হাজারা জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের ওপর তালিবান ‘নৃশংস’ গণহত্যা চালিয়েছে বলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে। বিবিসি ও আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, গত জুলাইয়ের প্রথম দিকে মুন্ডারখতে তালিবানরা ছয় জনকে গুলি করে ও তিন জনকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঠাণ্ডা মাথায় এই হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা তালিবানদের অতীতের রেকর্ড স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তালিবান শাসন কী নিয়ে আসতে পারে সে সম্পর্কে ভয়াবহ ধারণা দেয়।’
বিবিসির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীরা হত্যাকাণ্ডের হৃদয় বিদারক বিবরণ দিয়েছেন; যা জুলাইয়ের প্রথম দিকে গজনি প্রদেশে ঘটেছে।
গত কয়েক সপ্তাহে তালেবানরা নিজেদের সংযুত ইমেজ তুলে ধরার চেষ্টা করছে। কিন্তু অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ঘটনাটি ছিল তালিবান শাসনের “ভয়াবহ সূচক”।
জানা গেছে, আফগানিস্তানে হাজারা সম্প্রদায় তৃতীয় বৃহত্তম সংখ্যালঘু। তারা মূলত শিয়া মুসলিম। সুন্নি সংখ্যাগুরু আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদে তারা বৈষম্য এবং নিপীড়নের শিকার।
তালিবান ঘরে ঘরে অভিযান চালাচ্ছে
আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারের পর প্রথম সংবাদ সম্মেলনে তালিবানের বক্তব্যে ছিল সমঝোতার সুর। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা নিজ দেশের ভেতরে বা বাইরে কোন শত্রু চায় না। এছাড়া নিরাপত্তা বাহিনীর প্রাক্তন সদস্য এবং যারা বিদেশী শক্তির পক্ষে কাজ করেছেন তাদের সবাইকে সাধারণ ক্ষমা দেয়া হবে। ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগানদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে তালিবান এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা ‘প্রতিশোধ নেবে না’।
আন্তর্জাতিক শক্তির পাশাপাশি অনেক আফগান তাদের এমন বক্তব্য নিয়ে সন্দিহান ছিল। সেটাই বাস্তবে পরিণত হলো।
ন্যাটো বাহিনী ও আশরাফ গনি সরকারের পক্ষে যারা কাজ করেছেন তাদের ঘরে ঘরে হানা দিচ্ছে তালিবান। এক পর্যালোচনা প্রতিবেদনে এ বিষয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালিবান ঘরে ঘরে গিয়ে ন্যাটো বাহিনী ও আশরাফ গনি সরকারের পক্ষের লোকদের খুঁজছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিচ্ছে।
নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যানালাইসেস জাতিসংঘের জন্য প্রতিবেদনটি লিখেছে। নরওয়েজিয়ান সেন্টার ফর গ্লোবাল অ্যানালাইসেসের নির্বাহী পরিচালক ক্রিশ্চিয়ান নেলেম্যান বলেন, ন্যাটো বাহিনী ও আশরাফ গনি সরকারের যেসব সহযোগী নিজেরা ধরা দিচ্ছে না তাদের পরিবারকে টার্গেট করছে তালিবান এবং ‘শরিয়া আইন অনুসারে’ তাদের বিচার করা হচ্ছে।
ক্রিশ্চিয়ান নেলেম্যান আরও বলেন, আমার ধারণা ন্যাটো বাহিনী ও আশরাফ গনি সরকারের পক্ষে যারা কাজ করেছেন এমন ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে বিচার করা হবে। তালিবান বিরোধী যারাই রয়েছেন তারা সকলেই ঝুঁকিতে রয়েছেন। গণহারে মৃত্যুদণ্ড মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
ক্রিশ্চিয়ান নেলম্যান বলেন, তালিবান বর্তমানে যাদের টার্গেট করছে, তাদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং এই হুমকির বিষয়টি স্পষ্ট। এটি লিখিতভাবে বলা হয়েছে যে, যদি তারা নিজেরা ধরা না দেয়, তাহলে তালিবান ওই ব্যক্তিদের পরিবর্তে তার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও বিচার করবে, জিজ্ঞাসাবাদ করবে এবং শাস্তি দেবে।”
নেলেম্যান সতর্ক করে বলেছেন, যারা তালিবানের কালো তালিকাভুক্ত, তারা মারাত্মক বিপদের মধ্যে রয়েছেন এবং তাদের গণহারে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতে পারে।
এ দিকে আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি শহরে এরই মধ্যে তালিবানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজধানী কাবুলে বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। অন্যদিকে আসাদাবাদে বিক্ষোভকারীদের মধ্যে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
এ দিকে বিদেশি শক্তিধর দেশগুলো তাদের নাগরিকদের আফগানিস্তান থেকে বের করে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ১৪ আগস্টের পর থেকে ৭ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে।
কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে পরিস্থিতি এখনো বিশৃঙ্খল। যারা পালাতে চেষ্টা করছেন, তালিবান তাদের বাধা দিচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ