আফগানিস্তান তালিবানের দখলের যাবার পর থেকে অস্থির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে সেখানে। এক নায়কতন্ত্র কায়েম করে নিজেদের ইচ্ছেমত দেশ পরিচালনা করছে। এরমধ্যে তালিবানদের তরফ থেকে জানা যায়, তাদের অধীনে আফগানিস্তানে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে না। বুধবার সশস্ত্র গোষ্ঠীটির এক সিনিয়র সদস্য ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।
তালিবানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় থাকা ওয়াহিদুল্লাহ হাশিমি বলেন, কোনও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকবে না। কারণ আমাদের দেশে এর কোনও ভিত্তি নেই। কোন ধরনের রাজনৈতিক ব্যবস্থা আমরা আফগানিস্তানে প্রয়োগ করব তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব না। কারণ এটি স্পষ্ট। এটি হলো শরিয়া আইন।
হাশিমি জানান, তালিবানের সর্বোচ্চ নেতা হাইবুতুল্লাহ আখুন্দজাদা দেশের সামগ্রিক দায়িত্বে থাকবেন। তালিবানের পক্ষ থেকে সাবেক পাইলট ও সেনাদের তাদের বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।
তালিবান নেতা বলেন, এদের বেশিরভাগ তুরস্ক, জার্মানি ও ইংল্যান্ডে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাই আমরা তাদের নিজেদের দায়িত্বে ফিরে আসতে কথা বলব। অবশ্যই আমরা কিছু পরিবর্তন আনব, সেনাবাহিনীতে সংস্কার হবে। এরপরও তাদের প্রয়োজন রয়েছে এবং আমরা তাদের যোগ দিতে আহ্বান জানাব।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন সর্বোচ্চ নেতার কোনও একজন ডেপুটি। তালিবানের তিনজন উপনেতা রয়েছেন। তারা হলেন, মোল্লাহ ওমরের ছেলে মওলভি ইয়াকুব, হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা সিরাজুদ্দিন হাক্কানি, এবং দোহার রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান ও তালেবানের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আব্দুল গনি বারাদার।
হাশিমি বলেছেন, এই সপ্তাহের শেষ দিকে তালিবান নেতৃত্বের সঙ্গে একটি বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন। এতে দেশ পরিচালনা নিয়ে আলোচনা হবে।
কাবুলে প্রায় বিনা রক্তপাতে তালিবানের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর সেখানকার মানুষ চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে। দেশত্যাগের জন্য কাবুল বিমানবন্দরে হাজার হাজার লোক মরিয়া চেষ্টা করে যাচ্ছে। দ্রুত সেখানে শাসনকাঠামো প্রতিষ্ঠিত না হলে শান্তিশৃঙ্খলার অবনতি ঘটার আশঙ্কা আছে।
আফগানিস্তান থেকে যেসব খবর আসছে, তাতে আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ সরকারের কাঠামো সম্পর্কে এখনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি। তালিবান নেতা আমির খান মুত্তাকি আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই এবং একসময় দেশটির শান্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত শীর্ষ কর্মকর্তা আবদুল্লাহর সঙ্গে কাবুলে আলোচনায় বসেছেন। অতীতের তালিবান শাসনের অভিজ্ঞতা নিলে এই গোষ্ঠীর শাসনের প্রতি ভীতি থাকা স্বাভাবিক। তালিবানের সেই শাসন শুধু আফগানিস্তান নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও সর্বনাশা প্রভাব ফেলেছিল।
২০ বছর আগের তালিবান সরকার আফগানিস্তানে মানবাধিকারের কোনো তোয়াক্কা করেনি, নারী শিক্ষা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছিল। সে সময়ে দেশটিতে ভিন্নমত ও ভিন্ন ধর্ম চরমভাবে আক্রান্ত হয়েছে। আফগানিস্তান হয়ে উঠেছিল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগোষ্ঠীর বিচরণ ক্ষেত্র। যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর আল–কায়েদার আশ্রয়-প্রশ্রয়দানকারী তালিবান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযান। সেই তালেবানের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত আলোচনায় বসেছে এবং আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে।
গত এক বছরে তালিবান চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, তুরস্ক ও ইরানের সঙ্গে আলোচনা করেছে এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তালিবান তাদের আগের অবস্থান বদলের কিছু অঙ্গীকার করেছে। তবে এসবের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না বিশেষজ্ঞরাও।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৭৩৪
আপনার মতামত জানানঃ