আফগানিস্তানের দখল তালিবানরা নেয়ার পর সবচেয়ে বড় যে অবক্ষয় ঘটার সম্ভাবনা ছিলো আর ঘটেছেও তা হলো নারী অধিকারের অবক্ষয়। নারী- পুরুষদের সমান অধিকার তো দূরের কথা, নারীদের সাধারণ স্বাধীনতাটুকুও খর্ব করা হচ্ছে। এর মধ্যেই এমন কিছূ ফতোয়া জারি করা হয়েছে যা নারী অধিকারকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে সক্ষম। আফগান দখল করে নারী স্বাধীনতায় এমন প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে কিছু নারী রুখে দাঁড়িয়েছে। তাদের সাথে এমন অন্যায়ে মুখ বুজে না থেকে এর প্রতিবাদে নেমেছে কিছু নারী।
মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির প্রধান পররাষ্ট্রবিষয়ক সংবাদদাতা রিচার্ড এঙ্গেল গতকাল মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) কাবুলের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সেখানে দেখা যায়, নারী অধিকার আদায়ে রাস্তায় নেমেছেন নারীরা।
ভিডিও শেয়ার দিয়ে রিচার্ড লিখেছেন, ‘নারীদের অধিকার আদায়ে কাবুলের রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন আফগান নারীরা। চাকরি করা, শিক্ষাগ্রহণ ও রাজনীতিতে অংশগ্রহণ প্রত্যেক নারীর অধিকার।’ এর আগেও আফগানিস্তান দখল করেছিল তালিবান। সে সময় একা নারীদের বাড়ির বাইরে বের হতে দেওয়া হতো না, নারীদের চাকরি করতে দেওয়া হতো না, পরতে হতো বোরকা।
গতবার তালিবানরা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় নারীদের এক প্রকার ঘরবন্দি করে রেখেছিল। এবারও তেমনটা হওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষ ব্যক্তিসহ সাধারণ মানুষেরাও। যদিও তালিবান বারবারে বলছে, তারা আগেরবারের কট্টর অবস্থা থেকে সরে এসেছে। নারীদের অধিকার ও সর্বোপরি মানবাধিকার রক্ষায় তারা আগের চেয়ে সচেতন। তবে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। সংবাদমাধ্যমটি সরেজমিনে দেখেছে, আফগান নারীদের কাজ করার অনুমতি দিচ্ছে না তালিবান।
জুলাইয়ের শুরুতে যখন তালিবানরা সরকারি বাহিনীর হাত থেকে কান্দাহারের দখল নিয়ে নেয়, তখন তালিবানের কয়েকজন সদস্য স্থানীয় আজিজি ব্যাংকে গিয়ে নয়জন নারীকে কাজ করতে মানা করেন। ওই নারীদের অফিস ছেড়ে যেতে বলেন সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যরা অস্ত্রধারী তালিবান সদস্যরা ওই নয় নারীকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়; তাদের মানা করে অফিসে যেতে।
এমনকি সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির বৈধ সরকার থাকাকালীনই গায়ে সেঁটে থাকা পোশাক পরার জন্য বালখ প্রদেশে এক মহিলাকে তালিবান গুলি করে খুন করা হয় এক নারীকে। ২০ বছর আগের তালিবান সরকার নারীশিক্ষা নিষিদ্ধ করেছিল। তারপর আমেরিকার পদার্পণের পর আফগানিস্তানের স্কুলগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা বেড়ে ৯০ লাখে পৌঁছেছিল। কাবুলের দখল নেওয়ার আগেই তাদের মধ্যে ২০ লাখ মেয়েকে স্কুল থেকে নাম কাটিয়ে নিতে তালিবান বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নারীরা বাড়ির বাইরে গেলে অবশ্যই তাদের বোরকা পরতে হবে। এ ছাড়া এ সময় তাদের সঙ্গে অবশ্যই একজন পুরুষ থাকতে হবে। নারীদের উঁচু গলায় কথা বলা যাবে না, হাই হিল জুতা পরা যাবে না, কোনো ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে পারবে না, থাকতে পারবে না তাদের ছবি কোনো বই পুস্তক কিংবা পোস্টারে। এমনকি নিজ বাড়ির বারান্দাতেও নারীরা দাঁড়াতে পারবে না। তাদের জানালার কাচে রঙ করে দেওয়ারও ফতোয়া জারি হয়েছে। ফলে নারীদের বাইরে চলাফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নারীরা। কাবুলের দুই-তৃতীয়াংশ নারীর বয়স ত্রিশ বছরের নিচে। তালিবান শাসনের অধীনে বাস করার অভিজ্ঞতা নেই তাদের। তবে তালিবানের কাবুল দখলের আতঙ্কে শহরের নারীরা এখন ছুটছেন বোরকার দোকানে।
এর আগেও তালিবানরা যখন কেবল আফগানিস্তান দখল করতে শুরু করেছে তখন তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলো কয়েক ডজন আফগান নারী। এদের মধ্যে কারও কারও হাতে আবার ছিলো মরণঘাতী ভারী অস্ত্র। এমনকি অনেক নারী মিছিল করেছেন দেশটির ঘোর প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানী ফিরোজকোহে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ