তালিবানরা চারদিক দিয়ে কাবুলে প্রবেশ করতেই আফগান সরকার বাধ্য হয়ে তালিবানদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এতে আফগানিস্তান পুরোপুরিভাবে তালিবানের দখলে চলে যাওয়ার ফলে পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হয় যে কাবুলের বিমানবন্দর থেকে আফগানিস্তানের ভূমি ত্যাগ করার জন্য আফগানিস্তানের জনগণ নিজেরা মারপিট করছেন, প্লেনের চাকার সাথে ঝুলে হলেও দেশ ত্যাগ করতে চাইছেন।
যাদের ভয়ে আফগানিস্তানের বাসিন্দারা নিজ ভুমি ত্যাগ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সেই গোষ্ঠীটিকে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে আছে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্কের নাম। এই দেশগুলো এরইমধ্যে তালিবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি তালিবানকে স্বীকৃতি দিতে পারে। এ ব্যাপারে চীনা নাগরিকদের মধ্যেও ইতিবাচক মনোভাব তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে। গত মাসেই সফররত তালিবান প্রতিনিধি দলের সঙ্গে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো বেশ কিছু ছবি ফলাও করে প্রচার করা হয়েছে।
রাশিয়ার সরকারি মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, তালিবানের পক্ষ থেকে রাশিয়ার কূটনৈতিক মিশনের কর্মীদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। তালিবানের মুখপাত্র সুহাইল শাহিন সংবাদমাধ্যম এপি-কে বলেছেন, মস্কোর সঙ্গে তার দলের সুসম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া রাশিয়াসহ অন্য দেশগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি তালিবানের নীতির মধ্যেই পড়ে। এদিকে রুশ প্রেসিডেন্টের দপ্তর ক্রেমলিন থেকে বলা হয়েছে, কাবুল থেকে রাশিয়ার দূতাবাস সরানোর কোনও পরিকল্পনা নেই।
ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে তালিবানকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ অনেক পুরনো। কাবুলের মার্কিন সমর্থিত সরকারের পতনের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, দাসত্বের শেকল ভেঙেছে আফগানিস্তান।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ান বলেছেন, তার দেশ পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য কাজ করবে। এ ব্যাপারে যথাসাধ্য সবকিছুই করা হবে। আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা তুরস্কের জন্যও জরুরি বলে মন্তব্য করেন এরদোয়ান। কেননা, কাবুলের অস্থিরতার ফলে বিপুল সংখ্যক আফগান নাগরিক ইরান হয়ে তুরস্কে পাড়ি জমাচ্ছে। শরণার্থীদের এমন ঢেউ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ থাকা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।
পাকিস্তান এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের রাজনীতিতে সবচেয়ে সক্রিয় অনুঘটক। আফগানিস্তানের সহিংসতার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বহু পুরনো। ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযানের সময় মুজাহিদীন গেরিলাদের মূল ঘাঁটি ছিল পাকিস্তানে। ওই ঘাঁটি থেকেই গেরিলারা সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করতে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে অবস্থান নেয় ইসলামাবাদ।
এই মুহূর্তে তালিবানকে সমর্থন দিচ্ছে তারা। তালিবানের অনেক যোদ্ধাই পাকিস্তানে থাকেন। বলা হয়, তালিবানের শক্তির পেছনে পাকিস্তানের ভূমিকাই অন্যতম। অন্যদিকে আফগান সরকারের সঙ্গে ইসলামাবাদের সম্পর্ক একেবারেই নাজুক। ভারত যেন আফগানিস্তানে আধিপত্য দেখাতে না পারে, মূলত সে লক্ষ্যেই সেখানকার রাজনীতিতে পাকিস্তান এত বেশি সম্পৃক্ত।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২১১১
আপনার মতামত জানানঃ