চারিদিক দিয়ে কাবুলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে তালিবান। আফগানিস্তানের সব বৃহত্তম শহরগুলো ইতিমধ্যে তালিবানের দখলে যাবার পর একমাত্র কাবুলই বাকি ছিলো। তবে আজ রোববার (১৫ আগস্ট) আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলেও প্রবেশ করতে শুরু করেছে তালিবানরা। আফগান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স।
তালিবান যোদ্ধারা চতুর্দিক থেকে রাজধানী শহর ঘিরে ফেলেছে। এমন অবস্থায় বর্তমান আফগান সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আফগানিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হয়েছেন আলী আহমদ জালালী। ৮১ বছর বয়সী এই আলী আহমদ জালালী আফগানিস্তানের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, আলী আহমদ জালালী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শিক্ষাবিদ (অ্যাকাডেমিশিয়ান)। তিনি জার্মানির সাবেক রাষ্ট্রদূত হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
আলী আহমদ জালালী আফগানিস্তানের রাজধানী শহর কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়ার তিনি মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যে বসবাস শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি আফগানিস্তানে ফেরেন এবং তাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২০০৪ সালে তাকে পুনরায় আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই পদে তিনি ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
জালালী আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল। দেশটিতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (রাশিয়া) হানা দেওয়ার পর পাকিস্তানের পেশোয়ারভিত্তিক প্রতিরোধ আন্দোলনে বাহিনীর উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
আফগান প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ
তালিবানরা চতুর্দিক থেকে রাজধানী কাবুল ঘিরে ফেললে এই অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, আফগানিস্তানের নতুন প্রেসিডেন্ট হতে যাচ্ছেন তালিবানের সিনিয়র নেতা মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার।
সূত্র বলছে, তালিবানের এই নেতা রোববার সকালে আশরাফ গনি এবং আমেরিকার কূটনীতিবিদদের সঙ্গে সমঝোতা করতে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হাজির হন।
এর আগে শনিবার রাতে আফগানিস্তানের উত্তরের মাজার-ই-শরিফ দখলের পর থেকেই কাবুলের পতন ঘণ্টা বাজতে শুরু করে। রোববার সকালে জালালাবাদ দখলের মাধ্যমে বর্তমান আফগান সরকারের চূড়ান্ত পতন শুরু হয়। এর পর তালিবান যোদ্ধারা দলে দলে রাজধানী কাবুলে ঢুকতে শুরু করেন।
তবে তালিবান যোদ্ধারা সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা মেনে রাজধানীর প্রবেশ পথের গেটে গেটে অবস্থান নেন। তালিবানের নেতৃত্ব ঘোষণা দেন, শক্তি প্রয়োগ করে তারা রাজধানী শহর দখল করতে চান না।
এর পরেই মার্কিন কূটনীতিবিদ এবং ন্যাটো প্রতিনিধিদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এই বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তালিবান নেতৃত্বকে। মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের উদ্দেশে রওনা দেন তালিবানের একটি প্রতিনিধি দল। সেখানে তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন আশরাফ গনি।
দেশ ছাড়লেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি
অন্য এক খবরে জানা যায়, তালেবানের আগ্রাসনে দেশ ছেড়েছেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। আশ্রয় নিয়েছেন তাজিকিস্তানে। রবিবার (১৫ আগস্ট) দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। এদিকে, একজন তালেবান কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, তারা গণির দেশ থেকে চলে যাওয়ার বিষয়ে রিপোর্ট পরীক্ষা করছেন।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে রাষ্ট্রপতি গনির একটি রেকর্ডেড ভাষণ প্রচার করা হয়। ওই ভাষণে তিনি তালেবানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার অঙ্গীকার করেছিলেন।
এদিকে, আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাবুলের বাসিন্দাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। দ্রুত তালেবানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, কয়েকজন জ্যৈষ্ঠ তালেবান নেতাকে যুক্ত করে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/২০১৫
আপনার মতামত জানানঃ