পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পেশাগত ভাবে নারী উচ্চাসনে থাকলেও রক্ষা নেই নির্যাতনের হাত থেকে। এতে যেমন ভুক্তভোগী সাধারণ গৃহিনীরা, তেমনি বড় কর্মকর্তারাও এর শামিল। এর গোড়ায় দায়ী যেমন কট্টর পুরুষতান্ত্রিকতা, তেমনি বছরের পর বছর মামলা ঝুলে থেকে অপরাধী বেঁচে যাওয়াও এর একটি কারণ।
অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাঁধা দেওয়ায় ও যৌতুক দাবিতে এসআই স্ত্রীর ওপর নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে কনস্টেবল স্বামী রিয়াজুল ইসলামের বিরুদ্ধে। স্বামীর নির্যাতনে আহত এসআই কোতোয়ালি মডেল থানায় কর্মরত এবং খুলনা বিভাগের রূপসা থানার সদর এলাকার বাসিন্দা। অন্যদিকে অভিযুক্ত রিয়াজুল বরিশাল পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে কর্মরত এবং ঝালকাঠি নলছিটি উপজেলার দপদপিয়ার তিমিরকাঠি গ্রামের বাসিন্দা।
কনস্টেবল স্বামীর নির্যাতনের শিকার স্ত্রী বলেন, ২০০২ সালে নিজেদের পছন্দে পারিবারিকভাবে রিয়াজুলের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর বেশ কয়েক বছর আমাদের সংসার সুখেই ছিল। গত ১০ বছর ধরে রিয়াজুল একাধিক মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছে। বিষয়টি আমি জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে প্রায় সময় আমার ওপর নির্যাতন চলে। মোটা অঙ্কের যৌতুকও দাবি করে রিয়াজুল।
স্ত্রী আরও অভিযোগ তুলে বলেন, ‘রিয়াজুল নড়াইলে কর্মরত থাকাকালে তাহমিনা নামের এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। খবর পেয়ে আমি নড়াইলে যাই। সেখানে আপত্তিকর অবস্থায় রিয়াজুল ও তাহমিনাকে ধরে ফেলি। এছাড়া নগরীর জিয়া সড়ক এলাকার এক মাহেন্দ্রা গাড়িচালকের স্ত্রীর সঙ্গেও রিয়াজুলের অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। দপদপিয়া তিমিরকাঠি এলাকার তার এক ভাগ্নির সঙ্গে রিয়াজুলের সম্পর্ক রয়েছে। মোবাইলে তাদের দু’জনের আপত্তিকর ছবি দেখে আমি বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছি। রিয়াজুলের এসব কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে সে ও তার মা খায়রুন্নেসা, বোন নিরুসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা নির্যাতন শুরু করে। এছাড়া আমার কাছে মোটা অঙ্কের যৌতুকও দাবি করে।’
নির্যাতনের শিকার এসআই অভিযোগ করেন, ‘এ ধারাবাহিকতায় শুক্রবার রাতে কয়েক দফায় রিয়াজুল বাসায় এসে আমাকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই।’
তবে কনস্টেবল রিয়াজুল ইসলামের দাবি, ‘তুচ্ছ বিষয় নিয়ে আমাদের ঝগড়া হয়। তবে আমি তাকে কোনও মারধর করিনি। বরং সে আমাকে বিভিন্ন সময় মারধর করে।’
এ বিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমার কাছে এখনও কেউ অভিযোগ দেয়নি। তবে আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখছি।
এর আগে গত ২১ জুন যৌতুকের দাবিতে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারধর ও নির্যাতনের মামলায় শিক্ষক স্বামী ও প্রথম স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। উল্লাপাড়া পৌর শহরের শ্যামলীপাড়া পুকুরপাড় বাসা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- উপজেলার পূর্ব বংকিরাট গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে এবং দাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন শাহ (৪০) ও তার প্রথম স্ত্রী সোনিয়া পারভীন মিনা (৩০)।
উল্লাপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান মামলার বরাত দিয়ে জানান, উল্লাপাড়ার বেতকান্দি গ্রামের সাইফুল ইসলামের মেয়ে পাপিয়া সুলতানার সাথে স্কুল শিক্ষ ইকবাল হোসেনের ২০২০ সালের আগস্টে বিয়ে হয়। এর আগে একই গ্রামের সোনিয়া পারভীন মিনার সঙ্গে ইকবালের বিয়ে হয়েছিল। তবে বিয়ের কিছুদিন পর তাদের বিচ্ছেদ হয়েছিল। পাপিয়া সুলতানের সাথে বিয়ের সময় ইকবালকে যৌতুক হিসেবে ৫ ভরি সোনার গহনা ও নগদ আড়াই লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও ইকবাল পাপিয়ার কাছে দশ লাখ টাকার যৌতুক দাবি করে। এতে অসম্মতি জানালে পাপিয়াকে ইকবাল প্রায়শই মারধর করতেন।
তিনি আরও জানান, কয়েকদিন আগে ইকবাল প্রথম স্ত্রী সোনিয়া পারভীন মিনাকে তার শ্যামলীপাড়ার বাড়িতে নিয়ে আসলে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। ইকবাল ফের পাপিয়ার কাছে আবারো দশ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। পাপিয়া অপারগতা প্রকাশ করলে ইকবাল এবং তার প্রথম স্ত্রী মিনা দুইজনে মিলে পাপিয়াকে বেধড়ক মারধর করে। পরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে পাপিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় পাপিয়া সুলতানা বাদী হয়ে স্বামী ইকবাল ও প্রথম স্ত্রী মিনার বিরুদ্ধে উল্লাপাড়া মডেল থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। দুইজনকেই আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণের প্রক্রিয়া চলছে।
যৌতুকের জন্য নির্যাতনের অমানবিক কর্মকান্ড থেকে থেকে বের হতে আমাদের আর কত আধুনিক হতে হবে তা জানা নেই। সুষ্ঠু সামাজিকীকরণের মাধ্যমে এইরকম মানসিকতা থেকে পরিবর্তন সম্ভব তবে তা অনেক ধীর প্রক্রিয়া। আইনের সঠিক প্রয়োগ করে শাস্তির মাধ্যমে এর দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব হলেও প্রসাশনের হেলাহেলার কারণে এই সামাজিক ব্যাধি থেকে নির্মূল হতে পারছি না আমরা।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৭৩৫
আপনার মতামত জানানঃ