মহাকাশ গবেষণা একসময় আমেরিকা এবং রাশিয়ার একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। সেখানে পরে ভাগ বসিয়েছে ইউরোপের অনেক দেশ, সম্প্রতি প্রবল গতিতে এগিয়ে আসছে চীন। ভারতও এই কাজে পিছিয়ে নেই। কিন্তু আরবের দেশগুলো বরাবরই এ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায়নি।
কিন্তু এবার বড় পদক্ষেপ নিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। চাঁদে মানুষ পাঠাতে চলেছে তারা। আরও বড় খবর হলো যে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের হয়ে যে দুই জনের চাঁদের মাটিতে হাঁটার সৌভাগ্য হতে চলেছে তাদের একজন নারী। এই প্রথম কোনও মহিলাকে চাঁদের বুকে হাঁটানোর পদক্ষেপ নিয়েছে আরব বিশ্বের কোনও দেশ। মহাকাশেও এর আগে যাননি আরব বিশ্বের কোনও নারী।
আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, চাঁদের বুকে নামানোর জন্য দুই মহাকাশচারীকে বেছেও নেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। তাদের এক জন ২৮ বছরের তরুণী মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নূরে আল মাত্রুশি। অন্য জন ৩২ বছর বয়সী মোহাম্মদ আলমুল্লা। যার এক দশক ধরে দুবাই পুলিশের হেলিকপ্টারের দক্ষ পাইলট হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। দু’জনকেই দু’বছরের প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে পাঠানো হবে আর কয়েক দিনের মধ্যেই।
চাঁদে অবতরণের পর পরই অনন্য এক রেকর্ডে নাম লেখাবেন নুরে আল মাত্রুশি। আরব বিশ্বের কোনও দেশের প্রথম নারী হিসেবে চাঁদের বুকে হাঁটবেন তিনি। অবশ্য চাঁদের উদ্দেশ্যে মহাকাশযানে উঠলেই ইতিহাস লিখবেন নোরা। কারণ এটি হবে কোনও আরব মুসলিম নারীর প্রথম মহাকাশ ভ্রমণ।
আরব আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, প্রায় সবরকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। দুই মহাকাশচারী নূরে আল মাক্রশি ও আলমুল্লাহকে দুই বছরের প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে পাঠানো হবে শিগগিরই।
নিজের মহাকাশ যাত্রার বিষয়টি নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত নুরে আল মাত্রুশি। তিনি বলেছেন, ছোটবেলা কাগজ আর কার্ডবোর্ডের বাক্স দিয়ে মহাকাশযান বানাতাম। আর স্বপ্ন দেখতাম সেই মহাকাশযানে চেপে মহাকাশে যাওয়ার। চাঁদে যাচ্ছি— এমন অনেক খেলা খেলতাম। মাকেও বলতাম। এখন সত্যি সত্যি যাচ্ছি। সেপ্টেম্বরে যাব নাসার জনসন স্পেস সেন্টারে। সেখানেই শুরু হবে টানা দুবছরের প্রশিক্ষণ। চাঁদ অথবা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে শেষ পর্যন্ত যেতে পারলে আমার অন্তরে লুকিয়ে থাকা শিশুটিই বোধহয় সবচেয়ে বেশি খুশি হবে।
তিনি বলেন, আমেরিকার নাগরিকরা যেভাবে ইংরেজি বলেন, লেখেন, এখন শুধু সে সবই শিখছি। শিখছি রুশ ভাষাও। কখনো যদি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে থাকতে হয় রুশ মহাকাশচারীদের সাথে, তার জন্য। আর মহাকাশচারী হওয়ার একেবারে সহজপাঠের প্রথম কয়েকটি বর্ণ শিখছি দুবাইয়ে। শিখছি অতলান্ত পানিতে কিভাবে ডাইভ দিতে হয়।
আল মাত্রুশি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ফিল্ম দেখার পরেই তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পাশ করেন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। তার পর চাকরি করতে ঢুকেছিলেন একটি পেট্রোলিয়াম শিল্পসংস্থায়। আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা মহাকাশচারী খুঁজছে জানতে পেরে আবেদন করেন আল মাত্রুশি। পরীক্ষার ভিত্তিতে তাকে বেছে নেয় আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
আমিরাতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা জানিয়েছে, তিন বছর আগেও আমিরাত থেকে তিনজনকে মহাকাশচারীর প্রশিক্ষণ নিতে পাঠানো হয়েছিল নাসায়। তাদের একজন হাজ্জা আল মানসুরি রাশিয়ার সয়ুজ রকেটে চেপে মহাকাশ স্টেশনে গিয়ে সেখানে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আসেন বছর দু’য়েক আগে। আর একজন সুলতান আল নায়েদিও মহাকাশ স্টেশনে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।
শুধুই চাঁদ নয়, কয়েক দিন আগে মহাকাশবিজ্ঞানের গবেষণায় নেমে জনসংখ্যার ৯০ শতাংশ সুন্নি সম্প্রদায়প্রধান মুসলিম রাষ্ট্র আমিরাত লাল গ্রহ মঙ্গলের দিকেও হাত বাড়িয়েছে। নাসার রোভার পারসিভের্যান্সের আগেই আমিরাতের পাঠানো ‘হোপ অরবিটার’ মহাকাশযান পৌঁছে গিয়েছে মঙ্গল মুলুকে।
আরবের দেশগুলোতে নারীদের ওপর এখনও অনেক রকমের বিধিনিষেধ রয়েছে। গাড়ি চালাতে না দেওয়া, স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে না দেওয়ার মতো নানান ফতোয়া রয়েছে মেয়েদের ওপর। কট্টরপন্থী সুন্নিপ্রধান মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত সংযুক্ত আরব আমিরাত। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সিদ্ধান্ত ‘একবিংশ শতাব্দীর একটি বৈপ্লবিক পদক্ষেপ’। যুগান্তকারীও। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংযুক্ত আরব আমিরাতদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের পথিকৃৎ হয়ে উঠতে পারেন নূরে আল মাক্রশি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ