১১ জন নারীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হবার পর অবশেষে পদত্যাগ করলেন নিউওয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অন্য সহকর্মীদের কাছ থেকেও কুয়োমো পদত্যাগের জন্য চাপের সম্মুখীন হচ্ছিলেন। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে কেলেঙ্কারির মুখে অফিস ছাড়তে হয়েছে এমন টানা তিনজন গর্ভনরের তৃতীয়জন হলেন কুয়োমো।
গতবছর মহামারি চলাকালীন অ্যান্ড্রু কুয়োমোর বিচক্ষণতা দেশজুড়ে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিলো। মাত্র এক বছর আগেই যাকে ডেমোক্র্যাট দলের জাতীয় নায়ক ভাবা হচ্ছিলো, আজ তার ভাবমূর্তি অনেকটা খলনায়কের কাছাকাছি।
আগামী ১৪ দিনের মধ্যে তার পদত্যাগ কার্যকর হবে এবং লেফটেন্যান্ট গভর্নর ক্যাথি হোচুল, কুয়োমোর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রথম নারী হিসেবে নিউইয়র্কের নেতৃত্ব দিবেন।
এর আগে তাকে পদ থেকে সরে যেতে বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে সময় অ্যান্ড্রু কুয়োমো অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে স্বপদে বহাল থাকার কথা জানিয়েছিলেন। তবে গভর্নরের পদত্যাগের প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি তার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই’।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক সময়ের প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করা কুয়োমোর আকস্মিক পতনে সবাইকে অবাক করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ বৃহৎ জনবহুল রাজ্য নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে ২০১১ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন ডেমোক্র্যাটদলীয় কুমো।
এর আগে পাঁচ মাসের স্বাধীন তদন্তের পর প্রতিবেদন প্রকাশ করেন নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিটিয়া জেমস। এতে বলা হয়, তিনি তার আচরণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাজ্যের আইন লঙ্ঘন করেছেন।
নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় হতে এই স্বাধীন তদন্ত চালানো হয়; যেখানে দেখা গেছে, ৬৩ বছর বয়সী কুয়োমো রাষ্ট্রীয় কর্মচারীসহ ১১ জন নারীকে যৌন হয়রানি করেছেন।
ভুক্তভোগী নারীদের অভিযোগ, কুয়োমো যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করেছেন, অযাচিতভাবে তাদেরকে স্পর্শ করেছেন, এমনকি সম্মতি ছাড়াই তাদেরকে চুম্বনও করেছিলেন।
প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি, সিনেট নেতা চাক শুমার এবং নিউইয়র্কের দুই মার্কিন সিনেটর সহ অনেক বিশিষ্ট ডেমোক্র্যাট কুয়োমোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তোপের মুখে কুয়োমো মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) পদত্যাগ করলেও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগসমূহ তিনি অস্বীকার করেছেন।
প্রসঙ্গত, গভর্নরের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন নারী যৌন হয়রানির অভিযোগ আনার পর গতবছর অ্যাটর্নি জেনারেল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্তকারীরা পাঁচ মাস ধরে স্টাফ, অভিযোগকারীসহ ২০০ জনের মতো মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। তারা তদন্তের অংশ হিসেবে ১০ হাজারের মতো ডকুমেন্ট, লেখা ও ছবি যাচাই করেন।
তথ্য-প্রমাণাদির সাপেক্ষে নিউইয়র্কের অ্যাটর্নি জেনারেল লিতিতিয়া বলেছেন, তদন্ত থেকে প্রমাণিত হয় যে, গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো কয়েকজন নারীকে যৌন হয়রানি করেছেন এবং ফেডারেল ও অঙ্গরাজ্যের আইন ভঙ্গ করেছেন।’
যদিও ঘটনা প্রসঙ্গে কুয়োমো বলেন, ‘আমি মনে করি, আমি কখনও কোনো নারীর সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রম করিনি।’ তারপরেও কোনো নারী তার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে তিনি তার কিংবা তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ ও ‘গভীরভাবে’ ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন।
তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগকে তিনি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এই কেলেঙ্কারিতে কয়েক মাসের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে এবং করদাতাদের লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করতে হবে; তাই তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন।
কুমো আরও বলেন, এই অভিযোগ তার মেয়েদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অনেক ক্ষতি করেছে। তিনি তার মেয়েদের চোখে পূর্বে কখনও এমন অভিব্যক্তি লক্ষ্য করেননি। এটা তার জন্য অনেক বেশি পীড়াদায়ক।
এদিকে, কুয়োমোর স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছেন ৬২ বছর বয়সী ক্যাথি হোচুল। তিনি নিউইয়র্ক রাজ্যের বাফেলো এলাকার একজন ডেমোক্র্যাট। ২০১৪ সালে তিনি গভর্নরের দলে যোগ দিয়েছিলেন এবং সাফল্যের সঙ্গে লেফটেন্যান্ট গভর্নরের ভূমিকা পালন করেছেন।
গেল সপ্তাহে, ক্যাথি হোচুল তার অন্যান্য সহকর্মীদের মতো কুয়োমোর সমালোচনা করেন এবং তার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ‘সম্পূর্ণ সঠিক’ বলে মন্তব্য করেন। তবে নিউইয়র্কের ৫৭তম গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাওয়া হোচুল ২০২২ সালের নির্বাচনে পূর্ণ মেয়াদ চাইবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫১৫
আপনার মতামত জানানঃ