মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গড় গতির র্যাংকিংয়ে শেষ থেকে তৃতীয় বাংলাদেশ। ‘স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’ মতে, বিশ্বের ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৫ নম্বরে (জুন ২০২১)। বাংলাদেশের নিচে আছে শুধু ভেনিজুয়েলা ও আফগানিস্তান। মোবাইল ইন্টারনেট গতিতে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ লিবিয়া, সিরিয়া, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া ও উগান্ডার মতো দেশও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশের চেয়ে। অথচ বাংলাদেশে মোবাইল অপারেটরগুলো অনেকদিন ধরেই ৪জি গতির ইন্টারনেট সেবা দিয়ে আসছে বলে দাবি করে। এমনকি খুব শিগগিরই তারা ইন্টারনেটের নবতম প্রযুক্তি ৫জি সেবা দেবে এমন কথাবার্তাও শোনা গেছে। এদিকে আবার চলতি বছরেই সৌদিতে সাড়ে ৩০ কোটি টাকায় ৬ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ রপ্তানির চুক্তি করেছি আমরা। সূত্র মতে, সৌদি আরব ছাড়াও ভারত, নেপাল, ভুটান ব্যান্ডউইথ কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ থেকে। একই ক্ষেত্রে এই দুই চিত্র কেন! অপারেটরদের ইন্টারনেট গ্রাহক তুলনায় স্পেকট্রাম বা তরঙ্গের পরিমাণ কম থাকায় ইন্টারনেটের গতি কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী।
মোবাইল ইন্টারনেটের গতি কম কেন?
গত দুই বছরে দেশে একটিও টাওয়ার বাড়েনি। বিদ্যমান টাওয়ারেও সংস্কার হচ্ছে না। কোনো রকমে চালিয়ে নিচ্ছে অপারেটররা। এমনকি স্পেকট্রাম না বাড়লেও নিয়মিত গ্রাহক বাড়ছে। ফলে একই স্পেকট্রাম ও টাওয়ার দিয়েই অতিরিক্ত গ্রাহককে সেবা দিতে গিয়ে মানের অবনতি ঘটছে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিটিআরসি) তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার। এর বিপরীতে বাংলাদেশে আছে প্রায় চল্লিশ হাজার টাওয়ার। মোবাইল টাওয়ার শহরে প্রায় ১ কিলো পর্যন্ত; আর গ্রামে ৮ কিলো পর্যন্ত কভারেজ দিতে পারে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
এদিকে উন্নত দেশগুলোতে যেখানে এক মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম দিয়ে সর্বোচ্চ ১ লাখ গ্রাহককে সেবা দেওয়া হয়। সেখানে বাংলাদেশে গত মার্চ মাসে হওয়া নিলামে অপারেটরগুলো ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। যার মধ্যে গ্রামীণফোন মোট ১০ দশমিক ৪, রবি ৭ দশমিক ৬ এবং বাংলালিংক ৯ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে নেয়। দেশে বর্তমানে মোবাইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫৭ হাজার। বিভিন্ন ব্যান্ডের তরঙ্গ বরাদ্দ ছিল ১২৯ দশমিক ২ মেগাহার্টজ, যা ব্যবহারকারীর তুলনায় অপ্রতুল।
নিলাম শেষে বরাদ্দকৃত তরঙ্গ অনুযায়ী, প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রামে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়াবে ১১ লাখ ৭ হাজারের বেশি। নতুন বরাদ্দের পর বিভিন্ন ব্যান্ডের মোট তরঙ্গ দাঁড়ায় ১৫৬.৬ মেগাহার্টজ। দেশের ৪টি মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক সংখ্যা বিবেচনায় গ্রামীণফোনের কাছে ৯০০, ১৮০০ ও ২১০০ ব্যান্ড মিলিয়ে ৩৭ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম। সঙ্গে নতুন তরঙ্গসহ মোট ৪৭.৪ মেগাহার্টজ। রবির ছিল ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৪ মেগাহার্টজ, বাংলালিংকের ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ থেকে এখন ৪০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটকের ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ, যা অপরিবর্তিত রয়েছে।
গ্রামীণফোনের ১৬ লাখ ৯৫ হাজারের বেশি গ্রাহক ব্যবহার করেন ১ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম, রবির প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রামে গ্রাহক সংখ্যা ১১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি, বাংলালিংকের রয়েছে ৮ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি গ্রাহক প্রতি মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম এবং দেশীয় অপারেটর টেলিটকের ২ লাখ ১৯ হাজারের বেশি গ্রাহকের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ১ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম।
এর পাশাপাশি অপখাতে বিক্রীত হচ্ছে তরঙ্গ; যা একেবারেই অব্যবহৃত পড়ে থাকছে। কিছু তরঙ্গ রেল কিংবা সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য রিজার্ভ। ‘আইনি ঝামেলার’ নামে অতি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সম্পদ ‘স্পেকট্রাল অ্যাসেট’ কিছু ব্যাংক্রাপ্ট কোম্পানির হাতে অব্যবহৃত পড়ে আছে; আবার টেলিটকও মাত্র ১ শতাংশ গ্রাহক নিয়ে বরাদ্দ তরঙ্গ নষ্ট করছে। কিছু ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও এসব তরঙ্গ উন্মুক্ত করা দরকার।
এছাড়া ভারত ও থাইল্যান্ডের পরেই আমাদের তরঙ্গ লাইসেন্স ফি এশিয়ার মধ্যে প্রায় সর্বোচ্চ। মোবাইল ইন্টারনেটে মোট করভার ২১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। কথা বলার ক্ষেত্রের করভার ৩৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। করপোরেট কর ৪৫ শতাংশ এবং তরঙ্গ মূল্য মিলে অপারেটরদের দাবি, তাদের আয়ের প্রায় ৫৫ থেকে ৫৬ শতাংশ সরকারকে রাজস্ব দিতে হয়। তাই অপারেটররা বেশি তরঙ্গ কেনায় বিনিয়োগ করতে চায় না। যদিও সম্প্রতি তরঙ্গ লাইসেন্স ফি অর্ধেক কমিয়েছে সরকার। মোবাইল অপারেটরদের চতুর্থ প্রজন্ম (ফোরজি) লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন বা স্পেকট্রাম ফি’র উপর ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ কমিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। ২০১৯ সালে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়নের পর এসব সেবা নিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হতো মোবাইল অপারেটরদের। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ফোরজি লাইসেন্স ইস্যু, নবায়ন বা স্পেকট্রাম ফি’র উপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে মোবাইল অপারেটরদের।
ব্রডব্যান্ড নির্ভরতা বাড়ানো যায়
স্পিডটেস্ট-এর সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে এই আলোচনা সমালোচনা আর ট্রোলের মধ্যে আমাদের সামনে কম গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে অন্য একটি তথ্য; যা একই সাথে সম্ভাবনার এবং দুর্নীতির। স্পিডটেস্ট-এর সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম ঠিকই; কিন্তু ওই একই সূচকে ফাইবার অপটিক কেবলের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে অন্য অনেক দেশের চাইতেই এগিয়ে আছে বাংলাদেশ।
সেখানে ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৯৬। যা গত বছরের চাইতে এক ধাপ এগিয়ে এসেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ডাউনলোড গতি গড়ে ৩৩.৫৪ এমবিপিএস বলে ওই সূচকে উঠে এসেছে। সে হিসেবে তুরস্ক, গ্রীসের চাইতেও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এমনকি মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও ইন্দোনেশিয়ার চাইতেও বাংলাদেশ এই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গতিতে কয়েক ধাপ এগিয়ে আছে।
বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের স্পিড বেশি থাকার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে এই ইন্টারনেট মানুষ কেবলের মাধ্যমে ব্যবহার করে। যেখানে কিনা মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্পেকট্রাম বা বেতার তরঙ্গ। অথচ দেশে মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহক এখনো ৯৫ শতাংশ। অথচ ব্যক্তিগত, বাণিজ্যিক ও করপোরেট গ্রাহক মিলে দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ শতাংশ ছাড়াতে পারেনি। এর প্রধান কারণ এই খাতে দুর্নীতি এবং বাজার কুক্ষিগত করে রাখার প্রবণতা।
ব্রডব্যান্ড শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ?
বাংলাদেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের বিস্তার ঘটাতে ২০১১ সালে ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা ন্যাশনওয়াইড টেলিকম্যুনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) দেয়ার জন্য বেসরকারি দুইটি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়। তবে এখনো দেশের সর্বত্র অপটিক্যাল ফাইবার স্থাপন করতে পারেনি এসব কোম্পানি। এগুলো হলো ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশনস লিমিডেট। তবে ২০১৯ সালে বাহন লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে।
সরকারি দুইটি কোম্পানি বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং পাওয়ার গ্রিডে সেবা তাদের আওতাধীন এলাকার ভেতরে সীমাবদ্ধ। বেসরকারি যে দুইটি কোম্পানি রয়েছে, তারা বেশ কয়েক বছর ধরে কাজ করলেও এখনো বেশিরভাগ এলাকাই তাদের আওতায় আনতে পারেনি। বাংলাদেশে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডকে (বিটিসিএল) লাইসেন্স দেয়া হলেও খুব একটা কাজ করতে দেয়া যায়নি।
শহর এলাকাতেই ৮০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবার বিস্তারের অভাবের কারণেই সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বিস্তৃত হচ্ছে না। ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের স্বল্পতার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় ব্রডব্যান্ড সেবা খুব উপলব্ধ করা যাচ্ছে না। আর একটি কারণ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের খরচ এতো বেশি, সেখানে নিয়ে যখন গ্রাহক পর্যায়ে দেয়া হবে, তখন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। আবার অবকাঠামো ইউনিয়ন পর্যায়ে পৌঁছালেও তৈরি হয়নি অর্থনৈতিক ক্ষেত্র। কারণ এই ব্রডব্যান্ডের জন্য যে ধরনের ইউজার বেজ থাকা দরকার, মাসিক আয় দরকার; সেটা গ্রামাঞ্চলে নেই।
দুর্নীতির রামরাজত্ব
বাংলাদেশ সরকার ব্রডব্যান্ডের যে সংজ্ঞা দিয়েছে, সেটা হলো নূন্যতম ১০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ কানেক্টিভটি থাকতে হবে। তার নীচে হলে এটা ব্রডব্যান্ড হবে না। কিন্তু দেশে কতজন ১০ এমবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করেন, সেই তথ্য কিন্তু বিটিআরসি কখনোই বলে না। মোবাইলে কী পরিমাণ ডাটা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেই তথ্যও কিন্তু রেগুলেটর প্রকাশ করে না।
মূলত এই রাখঢাকের কারণ দেশের টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সঞ্চালন ব্যবস্থার বিপর্যস্ত অবস্থা। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, কিন্তু আসলে কাজের কাজ বেশি হয়নি। ব্রডব্যান্ডের প্রসারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে সঞ্চালন লাইনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এনটিটিএন ব্যবহার করে যারা ইন্টারনেট সেবা দিয়ে থাকেন, তাদের ওপর ২০১১ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া আছে যে, তারা নিজেরা সঞ্চালন লাইন তৈরিতে বিনিয়োগ করতে পারবে না।
এ কারণে বাজারে মাত্র দুইটি কোম্পানির কাছে বিশাল বাজারটি কুক্ষিগত হয়ে আছে। অথচ তাদের সেই সক্ষমতা নেই যে, তারা দেশব্যাপী অপটিক্যাল ফাইভার স্থাপন করে সার্ভিস প্রোভাইডারদের সুলভমূল্যে সঞ্চালন ব্যবস্থা বিক্রি করতে পারবে। এ কারণে ব্রডব্যান্ড কেবলমাত্র বড় বড় শহরে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এর বাইরে বিস্তার লাভ করতে পারছে না, কারণ সেখানে ব্যবসা পরিচালনার খরচ অত্যন্ত বেড়ে যায় এই এনটিটিএন অপারেটরদের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে। ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) যদি আরো প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দেয়া হয়, তাহলে এই খাতে প্রতিযোগিতার তৈরি হতে পারে। তখন দেশব্যাপী এই নেটওয়ার্কের বিস্তৃতি ঘটতে পারে।
এদিকে, দুর্নীতি হাত যেন পুলিশের থেকেও লম্বা। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে তার কালো থাবা পড়েনি। বাদ যায়নি অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্কও। এই নেটওয়ার্কে ‘আইপি’ প্রযুক্তির বদলে বএশ আগেই এসেছে ‘ডিডব্লিউডিএম’ (ডেন্স ওয়েভলেন্থ ডিভিশন মাল্টিপ্লেক্সিং) প্রযুক্তি। আইপি প্রযুক্তিতে যেখানে ব্যান্ডউইথ পরিবহন ক্ষমতা ১০, ২০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) এর মধ্যে নির্ধারণ করতে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে ‘ডিডব্লিউডিএম’ প্রযুক্তির সক্ষমতা বেশ আগেই ছিল ১০০ জিবিপিএস (গিগাবিট পার সেকেন্ড)।
তবে আমরা শেষ থেকে প্রথম হতে পছন্দ করি। তাই যেমন থ্রি-জি চালু করতে পিছিয়ে ছিলাম, ফোর-জি প্রযুক্তি চালু করতে পিছিয়ে রয়েছি, তেমনি ‘ডিডব্লিউডিএম’ প্রযুক্তির সর্বাধুনিক ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতেও এখন পর্যন্ত সফল হতে পারিনি।
যদিও ২০১১ সালেই সরকারের নীতিনির্ধারকরা রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি বিটিসিএলকে দিয়ে ‘টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট’ বা টিএনডিপি প্রকল্প নিয়েছিলেন। এর একটা অংশ ‘লট-এ’এর মাধ্যমে ঢাকায় অত্যাধুনিক ‘ট্রিপল-প্লে’ নেটওয়ার্ক তৈরির উদ্যেগ নেওয়া হয়, যেখানে একটিমাত্র সংযোগ থেকেই গ্রাহকরা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, কেবল টিভি এবং ল্যান্ড টেলিফোনের সুবিধা পাবেন। তাছাড়া ‘লট-বি’র মাধ্যমে ঢাকার সঙ্গে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত ৪০টি বিকল্প পথে বিটিসিএলএর নেটওয়ার্ক স্মার্ট ইনটেলিজেন্ট ‘ডিডব্লিউডিএম’ প্রযুক্তিতে হালনাগাদ করার উদ্যেগ নেওয়া হয়।
এই নেটওয়ার্ক আগামী দিনে স্বল্প খরচে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা যেত সহজেই। শুধু তাই নয়, কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ব্যান্ডউইথ পরিবহনে নতুন ট্রান্সমিশন লিংক তৈরির প্রয়োজন হত না, যদি টিএনডিপির ‘লট-বি’ বাস্তবায়ন করা হত। জাপানি অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ছয়শ কোটি টাকার প্রকল্প ছিল টিএনডিপি যার ‘লট-এ’এর জন্য প্রায় চারশ কোটি টাকা এবং ‘লট-বি’এর জন্য প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়।
‘লট-এ’এর মাধ্যমে কোনোরকমে একটা ট্রিপল-প্লে নেটওয়ার্ক বিটিসিএল শেষ পর্যন্ত তৈরি করেছিল। কিন্তু এর বাণিজ্যিক ব্যবহার এখন পর্যন্ত শুরু করতে পারেনি। আর ‘লট-বি’ বাস্তবায়নই করতে দেওয়া হয়নি। টেন্ডার নিয়ে বিটিসিএলএর কতিপয় কর্মকর্তা এতটাই অনিয়ম করেন যে, শেষ পর্যন্ত এই প্রকল্পের অর্থদাতা জাপানের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান জাইকা সরাসরি দুর্নীতির অভিযোগে এই প্রকল্প থেকে অর্থসহায়তা প্রত্যাহার করে নেয়।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২১৪৩
আপনার মতামত জানানঃ