কথায় আছে শত্রুর শত্রু হলো বন্ধু; এরই প্রমাণ দিলো তালিবান। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সাথে চীনের বিরোধিতা প্রকট। এই দেশ দুটির সাথে আফগানের তালিবান গোষ্ঠী ও চীন উভয়ের দ্বন্দ থাকার কারণে তালিবান হাতে রাখতে চাইছে চীনকে। চীনেরও আপত্তি নেই তালিবানের সাথে সমঝোতায়। বিশ্বের অন্যতম মুসলিম বিদ্বেষী দেশ হিসেবে চীনের খ্যাতি কারও অজানা নয়। এরপরেও কট্টরপন্থী মুসলিম জনগোষ্ঠী তালিবানরা চীনকে নিজেদের বন্ধুরাষ্ট্র করতে চাইছে। চীনও প্রশ্রয় দিচ্ছে তলিবানদের।
আল জাজিরার এক প্রতিবদেন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের প্রায় ১৩ হাজার উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখার কথা স্বীকার করেছিলো চীন। এর আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির জাতিগত বৈষম্য বিষয়ক সংস্থা জানায়, চীনে ১০ লাখ উইঘুর মুসলিমকে আটকে রাখা হয়েছে। উইঘুর প্রদেশকে কার্যত ‘বিশাল একটি বন্দিশিবিরে’ পরিণত করা হয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়ে বিষয়টি নিয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো চীন।
এদিকে চিনে বসবাসরত উইঘুর মুসলিমরা সেখানে চরম দূর্দশায় দিন কাটাচ্ছে। চীনে বসবাসকারী প্রায় ২ কোটি মুসলিমদের মধ্যে জিনজিয়াং প্রদেশে বাস করেন প্রায় ১ কোটি মুসলিম। ওই সকল মুসলিমদের উপর ধর্মপালনে চীনের বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ বহুদিনের। চিনে মুসলিমদের দাড়ি রাখা, নামাজ পড়া, কোরান পড়া, এমনকি প্রকাশ্যে আল্লাহর নাম নেওয়াও বেআইনি।
বিশ্বের প্রায় সব শক্তিশালী দেশ তালিবানের বিপক্ষে। তালিবান ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের ৯০ ভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে। এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী আফগানিস্তানকে নিজেদের মত নতুন করে গড়তে এবং এর পরিচালনা করতে দরকার বিপুল পরিমান অর্থ আর বিভিন্ন সহযোগীতার জন্য বন্ধুরাষ্ট্র।
পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম মুসলিম বিদ্বেষী দেশ হিসাবে চীনের নাম গোটা দুনিয়া জানে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদ্ধতিতে উইঘুর মুসলিমদের উপর চীন সরকারের অত্যাচারের খরব প্রকাশ্যে এসেছে। বন্দি শিবিরে থাকা মুসলিম নারীদের ধর্ষণ, গণধর্ষণ করাও হচ্ছিলো অহরহ। মসজিদ ভেঙ্গে দেওয়া থেকে শুরু করে মুসলিম নারীদের বন্ধ্যাত্বকরণ, কোন কিছুই বাদ রাখেনি চীন সরকার।
এদিকে সদ্য আফগানিস্তানে ক্ষমতায় আসা তালিবানরা চীনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এর কারণ বিশ্বের প্রায় সব শক্তিশালী দেশ তালিবানের বিপক্ষে। তালিবান ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানের ৯০ ভাগ এলাকা দখল করে নিয়েছে। এখন পরিকল্পনা অনুযায়ী আফগানিস্তানকে নিজেদের মত নতুন করে গড়তে এবং এর পরিচালনা করতে দরকার বিপুল পরিমান অর্থ আর বিভিন্ন সহযোগীতার জন্য বন্ধুরাষ্ট্র।
তালিবানের একটি প্রতিনিধি দল দুই দিনের সফরে চীনে রয়েছে। আজ বুধবার (২৮ জুলাই) চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এর সঙ্গে তালিবানের ওই প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়েছে। সফররত তালিবান প্রতিনিধি দলকে চীন বলেছে, বিদ্রোহী এই গোষ্ঠী আফগানিস্তান যুদ্ধের অবসান এবং দেশ পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করছে বেইজিং।
ওই বৈঠকের পর তালিবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাঈম বলেছেন, তালিবানের প্রতিনিধিরা চীনকে আশ্বস্ত করেছে যে, আফগানিস্তানের ভূমিকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। এর জবাবে আফগানদের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি আবারও ব্যক্ত করেছে চীন। বেইজিং বলেছে, তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনও ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। তবে সমস্যা সমাধান এবং দেশটিতে শান্তি ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করবে।
ধারণা করা হচ্ছে, চীনের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রত্যক্ষ হুমকি ইস্ট তুর্কমেনিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টকে তালিবান দমন করবে এমন আশা করেই চীন প্রশ্রয় দিচ্ছে তালিবানকে।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ