সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ১৩০ কোটি লোককে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশ টিকাই দেওয়া হয়েছে মাত্র ১০টি দেশের মানুষকে। নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের মাত্র ১ শতাংশ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে।
আজ ১৩৮ তম আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস এ কথা বলেন।
অলিম্পিক কমিটির বৈঠকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মহামারি থেকে উত্তরণ হয়েছে বলে যারা মনে করছেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। টিকা শক্তিশালী ও প্রয়োজনীয়। কিন্তু বিশ্ব একে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি।
ব্যবহৃত টিকার ৭৫ শতাংশই ১০টি দেশে ব্যবহৃত হয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশের মানুষের মাত্র ১ শতাংশ এই টিকার একটি ডোজ পেয়েছে। উচ্চ আয়ের দেশগুলোর অর্ধেক লোকই প্রথম ডোজ পেয়েছে। কিছু অতি ধনী দেশ এখন তৃতীয় ডোজের কথা বলছে।
অথচ বিশ্বের বাকি অংশের স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বা অন্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এখনো একটি ডোজই পায়নি। টিকা, করোনা পরীক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিশ্ব তার সক্ষমতা সবার সঙ্গে সমানভাবে ভাগ করে নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এটি একসঙ্গে দুটি মহামারির জন্ম দিচ্ছে। যার আছে তাদের দরজা খুলছে, আর যাদের নেই, তাদের জন্য লকডাউন। এটা শুধু নৈতিক পরাজয় নয়, এটি একই সঙ্গে মহামারিবিদ্যা ও অর্থনীতি— দুই বিচারেই পরাজয়।’
এদিকে ডব্লিউএইচও প্রধানের এই বক্তব্যের পর বিবৃতি এসেছে জাতিসংঘ মহাসচিবের তরফ থেকেও। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস টিকার এই বণ্টনকে ‘ভয়ানক অন্যায্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। গুতেরেস বিশ্বের সব দেশের মানুষ যাতে কোভিড টিকা পায়, সে ব্যবস্থা নিতে ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
করোনা টিকার বিতরণ ন্যায্য হচ্ছে না উল্লেখ করে এর বণ্টন ন্যায্য করতে একটি বৈশ্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি বলে বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এ ক্ষেত্রে তিনি ধনী ও ক্ষমতাধর দেশগুলোকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠকে আন্তোনিও গুতেরেস এ কথা বলেন।
গুতেরেস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুসের কথার পুনরুল্লেখ করে বলেন, বিশ্বের ১০টি দেশে মোট টিকার ৭৫ শতাংশ প্রয়োগ করা হয়েছে। এটা ভীষণভাবে বৈষম্যমূলক ও অন্যায়। বিশ্বের ১৩০টি দেশ এখনো কোভিড টিকার একটি ডোজও পায়নি।
টিকার ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিতে বিজ্ঞানী, টিকা উৎপাদনকারী ও বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, এ ক্ষেত্রে ধনী ও ক্ষমতাধর দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। বিশ্বের সব বিজ্ঞানী, টিকা উৎপাদনকারী ও বিনিয়োগকারীকে এক জোট করে এমন বৈশ্বিক উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে দ্রুততম সময়ে সব দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা যায়।
গুতেরেস এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ধনী দেশগুলোর জোট জি–২০’র কথা উল্লেখ করেন। এই ধনী দেশগুলোকে জরুরি ভিত্তিতে একটি টাস্ক ফোর্স গঠনের আহ্বান জানান, যাতে টিকা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত সব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ও সংশ্লিষ্ট অন্য সব অংশীদারদের এক জোট করা যায়।
এদিকে, বিভিন্ন গবেষণায় যখন দু’টি ভিন্ন ডোজের টিকাকে করোনা প্রতিরোধে অধিক কার্যকরী ভাবা হচ্ছিল, তখন করোনা ভাইরাসের ভিন্ন ভিন্ন কোম্পানির টিকার ডোজ মিলিয়ে প্রয়োগের সিদ্ধান্তকে বিপজ্জনক বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান এমনটি বলেন। যদিও দুটি ভিন্ন কোম্পানির টিকার ডোজ মিলিয়ে প্রয়োগের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব পড়ে তার যথেষ্ট তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
অনলাইন ব্রিফিংয়ে সৌম্য স্বামীনাথান বলেছেন, ‘দুটি ভিন্ন কোম্পানির টিকা প্রয়োগ কিছুটা বিপজ্জনক প্রবণতা। আমরা টিকার মিশ্রণের ব্যাপারে এখনো প্রমাণবিহীন রয়েছি।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০১৫
আপনার মতামত জানানঃ