বিশ্বকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাওয়া শক্তিশালী চিনও নিজেকে বাঁচাতে পারছে না প্রকৃতির কবল থেকে। চীনের মধ্যাঞ্চলের হেনান প্রদেশে প্রবল বর্ষণে রাজধানী ঝেংঝৌসহ বিস্তৃত এলাকায় ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ‘সহস্র বছরের’ সর্বোচ্চ বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে প্রদেশটির সাবওয়ে স্টেশন। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি।
এতে অন্তত ১২ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে আজ বুধবার (২১ জুলাই) বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৬১৭ দশমিক এক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির আবহাওয়াবিদরা এই বর্ষণকে গত এক হাজার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে অভিহিত করেছেন।
বহু যুগের মধ্যে একদিনে এত বৃষ্টি দেখেনি মধ্য চীনের হেনান প্রদেশ। আবহাওয়া দফতরের মতে মঙ্গলবার যে বেগে বৃষ্টি হয়েছে, তা অস্বাভাবিক। এক ঘণ্টায় ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে প্রদেশের কোনো কোনো শহরে।
এই বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ইয়োলো নদীর তীরবর্তী এক কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষের ঝেংঝৌ শহরের পাতাল রেলের লাইন তলিয়ে গেছে। সপ্তাহান্ত থেকে হেনান প্রদেশে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নদীর পানি বেড়ে গেছে। এজন্য ডজনখানেকের বেশি শহরের রাস্তা পানিতে ডুবে গেছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে লাখ লাখ মানুষের জীবনযাত্রা।
বন্যাকবলিত এলাকা থেকে এখন অব্দি ১০ হাজারের বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার সকালে হেনান প্রদেশে ক্যাটাগরি তিন থেকে ক্যাটাগরি দুইয়ের বিপর্যয় সংকেত জারি হয়েছে।
সেনা সূত্রের দাবি, এখনো পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ পাঁচ। তবে চীনের সরকারি টেলিভিশনের দাবি, নিখোঁজের সংখ্যা আরো বেশি। প্রায় ১০ হাজার মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনো মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে।
গতকাল মঙ্গলবার (২০ জুলাই) মধ্যাঞ্চলীয় হেনান প্রদেশের ঝেংঝু যাওয়ার পথে বন্যার পানিতে যাত্রীসহ একটি সাবওয়ে ট্রেন আটকে গেছে। ট্রেনটিতে কোমর উচ্চতার পানিতে আটকা পড়েছে যাত্রীরা। তাদের উদ্ধারে অভিযান চলছে। বাকি সব সাবওয়েগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে আটকে পড়া যাত্রীদের ছবি ও ভিডিও। যাত্রীদেরই কেউ একজন নিজেদের করুণ অবস্থার বিষয়টি ভিডিও করে টুইটারে আপলোড করে। এরপর তা ভাইরাল হয়ে যায়।
ভিডিওতে দেখা গেছে, ট্রেনের সিটে যাত্রীরা উঠে দাঁড়িয়ে চেষ্টা করছেন পানির ওপরে থাকার জন্য। ঘোলা পানি দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের কোমর সমান হয়ে গেছে। তারা ভয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। পানি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বন্যার কারণে স্কুল ও হাসপাতালগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সূত্র মতে, গত মঙ্গলবার থেকে একটি কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে কিছু শিক্ষার্থী আটকা পড়ে আছে।
প্রদেশের সবথেকে সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন সাত হাজার শয্যা বিশিষ্ট ঝেংঝৌ হাসপাতাল বিদ্যুৎ পরিসেবার বাইরে কাছে। হাসপাতালের প্রায় ৬০০ মারাত্মক অসুস্থ রোগীদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্যায় বেঁচে যাওয়া এক যাত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, আমার বুক পর্যন্ত পানি পৌঁছেছিল। আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম। তবে গাড়িতে পানি ঢুকে বায়ু সরবরাহ ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়াটাই আমার কাছে সবচেয়ে আতঙ্কের ছিল।
আবহাওয়া দপ্তরের মতে মঙ্গলবার যে বেগে বৃষ্টি হয়েছে, তা স্বাভাবিক নয়। এর ফলে পানির নিচে তলিয়ে গেছে প্রায় পুরো প্রদেশ। প্রবল বন্যায় দুইটি বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া গেছে।
হোয়াংহো নদীর উপরের বাঁধও ভেঙেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে বন্যার পানি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে। বন্যায় আটকে পড়াদের এখনো উদ্ধার করা হচ্ছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছেন, বন্যা প্রতিরোধ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক হয়ে পড়েছে এবং বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। এই বন্যায় ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রাণহানি ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষের জীবন এবং সম্পত্তির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে কর্তৃপক্ষ ঝেংঝৌ শহরে বাস ও অন্যান্য যান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে। আবহাওয়াবিদদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ঝেংঝৌ শহরে গত তিনদিন ধরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে তা গত এক হাজার বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৪৫
আপনার মতামত জানানঃ