জামালপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জুর বিরুদ্ধে এক অটো রিক্সাচালককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে। চেয়ারম্যান ভিজিএফের চাল ওজনে কম দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন অটো রিক্সাচালক জাহাঙ্গগীর আলম। অভিযোগ তোলায় চেয়ারম্যান তাকে মারধর করেছে বলে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
তিনি সোমবার দুপুর দুইটার দিকে সদর উপজেলার গোপালপুর ঘুন্টি এলাকায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান।
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোববার বিকেল তিনটার দিকে তিনি বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রণোদনার চাল নিতে যান। সেখানে জনপ্রতি ১০ কেজি চাল দেয়ার কথা থাকলেও প্রত্যেককে ছয় থেকে সাত কেজি করে দেয়া হচ্ছিল। তিনি এর প্রতিবাদ করলে ইউপি চেয়ারম্যান তাকে চড়-থাপ্পড় দেন।
তার অভিযোগ, থাপ্পড়ের কারণে তার কান দিয়ে রক্ত বের হয়। তিনি কানে কম শুনছেন। তাকে ছাড়া আরও কয়েকজনকেও চেয়ারম্যান মারধর করেছেন। তিনি বিষয়টি এলাকার মাতব্বরদের জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত মোশাররফ আলী মুছা বলেন, ‘ঘটনাস্থলে আমিও ছিলাম। চাল কম দেয়ার ঘটনা জানালে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে জাহাঙ্গীর, জহুসহ কয়েকজনকে মারধর করেছেন।’
একই এলাকার হাসান মাসুদ জানান, জনগণের সঙ্গে চেয়ারম্যানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি খেয়ালখুশি মতো কাজ করেন। তার জন্য ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।
তবে চাল ওজনে কম দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন ইউপি চেয়ারম্যান শেখ মাহবুবুর রহমান মঞ্জু। তার দাবি, যে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে তিনি লাইনে বিশৃঙ্খলা করছিলেন। তাকে লাইন ঠিক করার জন্য ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছেন। প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব রটাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনীতিবিদ মানুষদের ত্রাণ দেবার সময় পর্দার পেছনের দৃশ্য বেশিরভাগ সময় এই রকমই হয়ে থাকে। বেশিরভাগ নেতাদের মধ্যে যে উদারতা দেখা যায়, তার পুরোটা লোক দেখানো বা শীর্ষ নেতাদের দেখানোর জন্য। জনগণকে ভালোবেসে বা আদর করে মানবতার অবতার হতে নামেন না তারা। রাজনীতি যখন আদর্শের বলয় থেকে বেরিয়ে যায় এবং শুধু ব্যক্তি উন্নয়নের জন্য প্রদর্শনে ব্যবহৃত হয়, তখন কেউই আর আদর্শের কর্মী বা নেতা থাকে না।
তারা বলেন, গ্রাম বাংলায় স্থানীয় চেয়ারম্যানদের নামের পাশে একসময় ট্যাগ লাইন জুড়ে দিতো। ‘গমচোর’ টিনচোর’ চালচোর’ ‘কাঠচোর’ ‘মাটিচোর’ ইত্যাদি বিভিন্ন ট্যাগ জুড়ে দিতো ‘চেয়ারম্যান’ শব্দটির পাশে। এখন যুগ পাল্টেছে, পৃথিবী পাল্টেছে, পাল্টে যাচ্ছে কতোকিছু। কিন্তু পাল্টাননি চেয়ারম্যানেরা। এখনো তাদেরকে ঐসব নামেই স্থানীয় পর্যায়ে চেনা হয়। কেননা, তারা তাদের কর্মকাণ্ড এখনো আগের মতোই ঐতিহ্য মনে করে ধরে রেখেছেন। ফলে প্রায় প্রতিদিনই চেয়ারম্যানদের নামে বিভিন্ন কুকীর্তির সংবাদ আসে মিডিয়াতে।
তারা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে প্রায়ই বিভিন্ন রকমের অভিযোগ আসে। তারা জনপ্রতিনিধি হয়েও বিভিন্ন দুর্নীতি, সরকারি অনুদান চুরি, জোর করে জমি দখলসহ আরো বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। সম্প্রতি এসব যেন বেড়েই চলছে। এবিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনের সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের কেবল বরখাস্তই নয়, উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ