ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে যাবার পর দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুর হার আগের তুলনায় অনেক পরিমানে বেড়ে গেছে। এরকম পরিস্থিতিতেও স্বাস্থ্যকর্মীদের অসচেতনতা ভোগান্তিতে ফেলছে মানুষকে।
রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে রোগীরা। সেখানকার নাম প্রকাশকে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী স্টেট ওয়াচকে জানায়, সকাল ১০ টা থেকে রোগীরা নমুনা দেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে কিন্তু টেকনোলজিস্টের কোনো খোঁজ নেই। এদিকে, নমুনা দিতে আসা মানুষদেরকে বসতে দেবার জায়গাটিও নেই। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমন ভোগান্তিতেও পড়তে হচ্ছে রোগীদের। নমুনা দিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নেয়া হলেও তার কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছে না। এই নিয়ে মুখ খুলছে না সেখানকার দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তা।
বদরগঞ্জের এই চিত্র পুরো দেশের সাধারণ অবস্থা ধারণ করছে। সেখানকার মত রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলাতেও একই অবস্থা। করোনা পরীক্ষা সরকারিভাবে বিনামূল্যে করা হচ্ছে জানালেও ভেতরের চিত্র অন্যরকম। প্রায় সব জায়গাতেই টাকা নেয়া হচ্ছে, যার কোনো রশিদ দেয়া হচ্ছে না রোগীদের হাতে।
শহর থেকে একটু ভেতরের দিকে গেলে মানুষদের অসচেতনতা স্পষ্টভাবেই চোখে বাঁধে। তারা জ্বর, কাশি, সর্দি হলে ভাইরাল জ্বর ভেবে করোনা টেস্ট করান না। এমন অবস্থায় নমুনা দিতে গিয়ে এমন ভোগান্তি তাদের আরও অনাগ্রহী করে তুলছে করোনা পরীক্ষা করাবার প্রতি। এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই স্বাস্থ্যবিভাগ কর্তৃপক্ষের।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে রংপুর বিভাগ ও খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহসহ ২৩ জেলায় এক দিনে ১৫৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ রোববার (১৮ জুলাই) সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টার এই হিসাব জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
রংপুর বিভাগের আট জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ জনের বাড়ি রংপুরে, পঞ্চগড়ের একজন, নীলফামারীর দুই জন, লালমনিরহাটের একজন, ঠাকুরগাঁওয়ের তিন জন, দিনাজপুরের একজন ও দুই জন গাইবান্ধার বাসিন্দা।
ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, রংপুর বিভাগে এ পর্যন্ত ৭৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৭৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ৮২১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ৩৬ হাজার ৯২৯ জন। এর মধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ২৬ হাজার ৬২৩ জন।
দেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তার শুরু পর থেকে রংপুরের অবস্থা সবসময়ই স্থিতিশীল ছিলো। তবে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টার ছড়িয়ে যাবার পর থেকে, রংপুর যেহেতু ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা তাই রংপুরের অবস্থা বেশি শোচনীয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমন অবস্থায় নমুনা দিতে গেলে রোগীদের ভোগান্তি তাদের আরও বিমুখ করে তুলবে করোনা টেস্টের প্রতি এমন শঙ্কাও প্রকাশ করছেন তারা।
এসডব্লিউ/ডব্লিউজেএ/১৭০৫
আপনার মতামত জানানঃ