বাংলাদেশে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য খাতে মাস্কসহ সুরক্ষা সামগ্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনাকাটায় অনিয়ম-দুর্নীতি উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধির পাচ্ছে। এক টাকার জিনিস কিনছে হাজার টাকা দিয়ে। আর এদিকে করোনা রোগীদের নমুনা পরীক্ষায় পাবনায় ব্যবহার করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ পুরনো টিউব। একইসাথে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। এক লেজেগুবরে অবস্থায় চলছে।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকালে সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্সে করোনা পরীক্ষা করাতে আসা কয়েকজন ব্যক্তি এসব অভিযোগ করেন।
পাবনা জেলায় কোনো পিসিআর ল্যাব নেই। ফলে এই জেলার মানুষের নমুনা সংগ্রহর পর তা রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। জেলা সদরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিস এই নমুনা সংগ্রহের কাজ করছে।
করোনা পরীক্ষার নমুনা দেওয়া অন্তত সাতজন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলায় কোনো পিসিআর ল্যাব না থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে নানা বিড়ম্বনার তৈরি হচ্ছে। নির্ধারিত জীবাণু প্রতিরোধী বুথ ছাড়াই মধ্য শহরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তাড়াশ ভবনের বারান্দায় খোলা পরিবেশে নমুনা সংগ্রহ চলছে। এতে করোনা আরও ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাড়াশ ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ভবনের বরান্দায় খোলা একটি টেবিলে রাখা হয়েছে নমুনা সংগ্রহর টিউব ও কিট। লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন নমুনা দিতে আসা ব্যক্তিরা। তিনজন সংগ্রহকারী তাদের নমুনা নিচ্ছেন বারান্দার খোলা পরিবেশেই। কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো সিঁড়িতে বসিয়েই নেওয়া হচ্ছে নমুনা। টিউবে নমুনা কিট ঢুকিয়ে ফেলে রাখছেন বারান্দাতেই। নমুনা সংগ্রহকারীদের পরনে পিপিই নেই।
করোনা পরীক্ষা করাতে আসা শহরের এক বাসিন্দা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সকাল ১০টায় তিনি টাউন হল সংলগ্ন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কমপ্লেক্সে যান। ১০০ টাকা জমা দিলে সেখান থেকে তাকে ১টি কাচের টিউব হাতে ধরিয়ে দিয়ে রায়বাহাদুর গেটের তারাশ ভবনে নমুনা দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়। সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্তও সেখানে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। পরে একজন পুরুষ ও একজন নারী কর্মী এসে কোনো সিরিয়াল না মেনে এলোমেলোভাবে কাজ শুরু করেন। সেখানে কোনো নিরাপদ দূরত্ব মানা হচ্ছে না। গাদাগাদি করে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নমুনা সংগ্রহের টিউবের গায়ে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা আছে জুন ২০২১। সেই টিউব দিয়েই চলছে করোনা টেস্ট। অপরদিকে নাকের ভেতরে যে কটনবার দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয় সেখানেই নেই কোনো সতর্কতা। প্যাকেট ছিঁড়ে এলোমেলোভাবে টেবিলের ওপর অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে কটনবার রেখে ব্যবহার করছে।
নমুনা দিতে আসা সুহানুর রহমান নামে এক যুবক বলেন, সকালে করোনা পরীক্ষার জন্য এখানে নমুনা দিতে এসে দেখি স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই নেই। তারপর আবার মেয়াদোত্তীর্ণ টিউব দেখে হতবাক হয়েছি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানালেও তারা বলে ওপরে কথা বলেন।
মেয়াদোত্তীর্ণ টিউবের ব্যাপারে জানতে চাইলে নমুনা সংগ্রহকারীরা বলেন, এভাবেই আমাদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। ভেতরে মেয়াদ ঠিক আছে।
এদিকে নমুনা সংগ্রহ নেই কোনো বুথ, নেই কোনো বসার ব্যবস্থা। সেবা প্রত্যাশীরা সিঁড়িতে বসে বা দাঁড়িয়ে সময় পার করছেন। কোনো সিরিয়াল মানা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনের সদয় দৃষ্টি কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।
করোনার নমুনা দিতে আসা রোগীরা জানায়, ১৫ জুলাইয়ের স্লিপ নিয়ে তারাশ ভবনে করোনার নমুনা দিতে গিয়ে তারা দেখতে পায়, যে টিউবে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে তার সময়কাল গত মাসের ২০ তারিখে শেষ হয়ে গেছে।
৩৮ জনের নমুনা এভাবে ভুল পাত্রে সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো সব চিহ্নিত করে তা আলাদা করে রাখা হয়েছে। ওই ৩৮ জনের নমুনা আবারও সংগ্রহ করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন জানান, পাবনায় নমুনা সংগ্রহের কাজে যে কয়জন নিয়োজিত ছিলেন তাদের মধ্যে দুই জন ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়ায় নতুন লোক দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। নতুন লোক হওয়ার কারনে ভুলবশত এটি হয়ে থাকতে পারে বলে জানান সিভিল সার্জন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার চিত্রটা একই। কোনো ধরনের নির্দিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়াই চলছে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ফলে বিশৃঙ্খলাই স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কোথাও এক টাকার জিনিস হাজার টাকায় কিনছে, কোথাও চলছে পুরনো যন্ত্রে। অনিয়ম আর দুর্নীতি দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ঝেঁকে বসেছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
তারা বলছেন, খোলা পরিবেশে যেভাবে নমুনা সংগ্রহ চলছে, তাতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়ছে। এ ছাড়া নমুনা সংগ্রহের প্রতিটি পদে পদে অব্যবস্থাপনা চলছে। একটি জেলা শহরে করোনা নিয়ে এমন অব্যবস্থাপনা সত্যি কষ্টকর।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৮
আপনার মতামত জানানঃ