বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে গণহত্যা সংঘটন এবং তা অস্বীকার করা নিয়ে বাংলাদেশ এখনো পাকিস্তান রাষ্ট্র ও তার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ক্ষুব্ধ। খেলার মাঠেও এই দ্বন্দ্বের ছাপ মেলে। মাঠে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই বাংলাদেশজুড়ে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা পাকিস্তান বিষয়ে একটু সতর্ক থাকেন। একদিকে জাতীয় আবেগ, অন্যদিকে পেশাদারিত্ব। দুটোর মধ্যে সমঝোতা করে চলেন।
তবে দেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা তারকা এবার যেন সেই ভারসাম্যের কথা ভুলে গেলেন। পাকিস্তানে গিয়ে খেলা ও অর্থ আয় করতে পারার আনন্দে মেতে উঠেছেন সে দেশের ভূয়সী প্রশংসায়। ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’ কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের সেরা ওপেনার বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আসতে সব সময়ই ভালো লাগে। তবে এখন সময়টা ভিন্ন। জৈব সুরক্ষিত পরিবেশে হোটেলে থাকতে হচ্ছে। নির্দিষ্টভাবে কিছু জায়গায় যাওয়ার অনুমতি আছে। বিষয়টি উপভোগ করা না গেলেও নিয়ম তো মানতেই হবে। পাকিস্তান চমৎকার একটি দেশ। আমাদের দেশের মতোই এখানে ক্রিকেটের প্রচুর সমর্থক আছে। তারা ক্রিকেট ভালোবাসে।’
পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল) খেলতে অল্প সময়ের জন্য সেদেশে যান তামিম ইকবাল। তার দল লাহোর কালান্দার্স পিএসএলের ফাইনালে উঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় করাচি কিংসকে। করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দর্শকহীন মাঠে ম্যাচ শুরু হয় বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়। এর আগেই তামিম ইকবাল এক সাক্ষাৎকারে ক্রিকেট পাকিস্তানের কাছে তার পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসার কথা তুলে ধরেন। ক্রিকেট পাকিস্তানের খবরটি দেখুন এখানে।
এর আগে পাকিস্তানের এক টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে তামিমকে উর্দু বলতে বলা হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি উর্দু বলতে পারব না, কারণ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমি কেবল বাংলা অথবা ইংরেজি বলতে পারব। কিন্তু আমি সামান্য কিছু বলতে পারি, আমি হয়তো এক দুইটা শব্দ বলতে পারব।’ এরপর অবশ্য উর্দুতে তিনি বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম, আমাদের দলের জন্য দোয়া করবেন, আমরা যেন জিততে পারি।’
করোনায় স্থগিত হয়ে যাওয়া পিএসএলের প্লে অফ খেলার কথা ছিল না তামিমের। তাকে ক্রিস লিনের বিকল্প হিসেবে নেওয়া হয়েছে। তবে ব্যাট হাতে জ্বলে উঠতে পারেননি দেশসেরা ওপেনার। পেশোয়ার জালমির বিপক্ষে প্রথম এলিমিনেটরে ১০ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে করেন ১৮ রান। পরের এলিমিনেটরে ৫ চারে ২০ বলে করেন ৩০ রান। দুটি ইনিংসেই ভালো শুরু করে খেই হারিয়ে আউট হয়েছেন।
ফাইনাল ম্যাচে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন তামিম। তবে সেটা জ্বলে ওঠা নয়, বরং কিছুটা যেন খুঁড়িয়ে চলা। ৩৮ বলে ৩৫ রান করেছেন তামিম। টি-টোয়েন্টিতে যা কিনা শ্লথগতির জন্য সমালোচনাযোগ্য। ফলাফলও হয়েছে তাই। যদিও অনেকেই অনুমান করেছিল, তামিমের দল লাহোরই জিতবে ফাইনাল। কিন্তু সেই লক্ষ্য পূরণ করে করাচি। শ্লথ ব্যাটিং ও ফাইনালে পরাজয়ের লজ্জা নিয়েই দেশে ফিরতে হচ্ছে তামিমকে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের লড়াইয়ে নামে। সে সময় পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে প্রায় ৩০ লাখ নাগরিকের প্রাণ যায় বলে দাবি বাংলাদেশের। জাতীয়তাবাদী আবেগ থেকেই বাংলাদেশের তরুণরা পাকিস্তানকে দেখে। এজন্য জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে খেলোয়াড়দের পাকিস্তানে যাওয়ার বিরোধিতা করে কয়েক দফা আন্দোলনেও নেমেছে তরুণরা। এখন তামিম এমন অবস্থান নেয়ায় তারা হতাশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তামিমের পক্ষে বিপক্ষে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা।
এসডাব্লিউ/২৪২১/
আপনার মতামত জানানঃ