দেশের কয়েকটি জেলায়, বিশেষ করে সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বগুড়ায় করোনাভাইরাসের রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েও অক্সিজেনের অভাবে মারা গেছে বলে জানিয়েছেন রোগীর আত্মীয়-স্বজন। সাতক্ষীরার শাহজাহান আলী জানান, আমার সামনে ১০মিনিটের মধ্যে তিনজন মারা যায়, আমার শাশুড়ির অবস্থা এর মধ্যে খারাপ হয়ে যায়। তবে এ অভিযোগ স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং মাঠ পর্যায়ের কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করে আসছে। এবার ফরিদপুরে ঘটলো একই ঘটনা। অক্সিজেনের অভাবে ১০ মিনিটে মারা গেল চার করোনা রোগী।
১০ মিনিটে চার জনের মৃত্যু
ফরিদপুরের বিএসএমএমসির করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউতে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায় মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে অক্সিজেনের অভাবে চার জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। তবে রিপোর্ট লেখার সময় তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
হাসপাতালের আইসিইউতে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানান, তার বৃদ্ধা মা ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি। আজ শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আকস্মিকভাবে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে জরুরি ভিত্তিতে অক্সিজেনের সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করতে বলেন।
এসময় অক্সিজেন সরবরাহে বিঘ্ন হওয়ায় কয়েকজন রোগী মারা যেতে পারে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ও প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, এর ১০ মিনিটের মধ্যেই চারজন রোগী মারা যান। বিষয়টি খুবই মর্মান্তিক।
যে কারণ দর্শাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ
ফরিদপুরের করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. অনন্ত কুমার বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালের অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থায় অক্সিজেন কমে গেলে নতুন করে অক্সিজেন ঢোকাতে হয়। এজন্য কিছু সময় নেয়।
তিনি বলেন, নতুন করে অক্সিজেন প্রবেশের সময় অক্সিজেনের চাপ বেড়ে যেতে পারে এজন্য কমিয়ে নেয়া হয়। একারণে ওই সময়ে অক্সিজেনের অভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে চারজনের মৃত্যুর খবরে সেখানে সাধারণ রোগী ও কর্তব্যরত চিকিৎসকদের কাছে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
ফরিদপুরের এই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১৬টি। সবকটিই চালু রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি।
পুলিশ কারণে অক্সিজেনের অভাবে বাবার মৃত্যু
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামে অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ছেলেকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ওই বৃদ্ধের নাম রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।
রজব আলী মোড়লের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, বাবার জন্য জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফার কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
পথিমধ্যে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুভাষচন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তিনি তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। দাবি করা টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়।
পরে ইটাগাছা এলাকার জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষচন্দ্র তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে যেয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে তার বাবা মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচানো যেতো। তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষচন্দ্র বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসছিল মোটরসাইকেলটি। কাগজপত্রও ছিলো না। পরে ঘটনা শুনে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মাত্র ২-৩ মিনিট মোটরসাইকেলটি থামিয়ে রাখা হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ