যুক্তরাজ্যে ইহুদি-বিদ্বেষ দিন দিন বাড়ছে। ইসরায়েলের গাজা আগ্রাসনের পর থেকেই তাদের বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে সারা ব্রিটেনে। এমনকি বিভিন্ন স্থানে ইহুদিদের সম্পর্কে বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা, হুমকি-ধমকি এবং হামলার ঘটনাও ঘটছে।
নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের ওপর ১১ দিনের বর্বর হামলার ঘটনায় ব্রিটেনের সাধারণ মানুষের মধ্যে ইহুদিবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে। বিগত এক মাসে দেশটিতে ইসরায়েলের দূতাবাস ঘেরাও, রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসহ ইহুদিবিরোধী বহু সভা-সমাবেশ হয়েছে।খবর বিবিসির।
এ সব ঘটনায় ব্রিটেনে বসবাসকারী ইহুদিরা বেশ আতঙ্কে আছে।সম্প্রতি ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহকারী একটি প্রতিষ্ঠানেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ লন্ডনের একটি সিনাগগে (ইহুদি উপাসনালয়) গত মাসে জনরোষের ভয়ে এর রাব্বি (ইহুদি ধর্ম যাজক) নিকি লিস মধ্যরাতে এসে উপাসনায় যোগ দেন।
১৩ বছর ধরে তিনি এ উপাসনালয়ে ধর্ম যাজকের কাজ করছেন।কিন্তু বর্তমানে এখানে ইহুদিদের বসবাস করাটা বেশ কঠিন বলে মনে করছেন তিনি।কারণ কিছুদিন আগে শহরটির একটি সিনাগগের বাইরে রাফি গুডউইন নামে এক রাব্বিকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করেন অজ্ঞাত ব্যক্তিরা।
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি নৃশংসতার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে দক্ষিণ লন্ডনের সেইন্ট জনস উড এলাকায় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।আগে কখনো দখলদার ইসরায়েলের বর্বতার বিরুদ্ধে এধরনের প্রতিবাদ হয়নি ব্রিটেনে। এ কারণে বেশ চাপে আছে ইহুদিরা।
যুক্তরাজ্যসহ গোটা ইউরোপেই ইহুদি বিদ্বেষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি ইহুদিদের মাঝে নির্যাতনের ভয়ও বেড়ে গেছে।
সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর জিউয়িশ পলিসি রিসার্চের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্ধ-শতাব্দীতে ইউরোপে ইহুদিদের সংখ্যা কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ইহুদি জনসংখ্যার মাত্র নয় শতাংশ বসবাস করে এ মহাদেশে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে এসে ইউরোপে ইহুদিদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখের মতো, যা মহাদেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.১ শতাংশ। এদের মধ্যে আবার দুই-তৃতীয়াংশই বাস করে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিতে।
১৮ ও ১৯ শতকের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ইহুদিদের সংখ্যা বেড়েছে এক কোটিরও বেশি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি ৬৫ লাখে।
এসময় ইহুদিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পূর্ব ইউরোপে; এরপর আমেরিকা, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলে। তবে হলোকাস্টে এ জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী তাদের সংখ্যা নেমে গিয়েছিল ১ কোটি ১০ লাখে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮৮০ সালে বিশ্বের ৮৮ শতাংশ ইহুদি বসবাস করত ইউরোপে। ১৯৪৫ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশে, ১৯৭০ সালের দিকে ২৬ শতাংশ এবং ২০২০ সালে তা কমে হয়েছে মাত্র ৯ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিংশ শতাব্দীর শেষের দশকগুলোতে সোভিয়েত ইউনিয়নের দরজা খুলে দেয়ায় ১৯৬৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অন্তত ১৮ লাখ ইহুদি পূর্ব ইউরোপ থেকে বিদায় নিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৭০ হাজার ইসরায়েলি বংশোদ্ভূত ইহুদি স্থায়ীভাবে ইউরোপে বসবাস করছে। এদের মধ্যে ২৫ শতাংশই থাকে যুক্তরাজ্যে। ইউরোপীয় ইহুদিদের বেশিরভাগ, বিশেষ করে ৯০ শতাংশ ব্রিটিশ ইহুদিরই ইসরায়েল বা অন্য দেশে যাওয়ার কোনও ইচ্ছা নেই।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৬
আপনার মতামত জানানঃ