লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে রিফাত হোসেন (২৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। রিফাত হোসেন উপজেলার জগতবেড় ইউনিয়নের মুন্সিরহাট নাজিরগোমানী এলাকার ইসলাম হোসেনের ছেলে।
জগতবেড় ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শাহ আলম রিফাত হোসেনের মৃত্যুর বিষয় ও তার পরিচয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নিহত রিফাতের গলায় ও মাথার পেছনে গুলির চিহ্ন ছিল। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে রিফাত সীমান্ত পথে গরু পারাপারে জড়িত ছিলেন। মঙ্গলবার ভোরে ওই সীমান্তে বিএসএফের কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয়রা।
এরপরে বিজিবি, এলাকাবাসীসহ আমিও সীমান্তে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হই। প্রথমে রিফাতের পরিচয় জানা যায়নি। পরবর্তীতে ছবি দেখে রিফাতকে শনাক্ত করে স্থানীয় লোকজন।
রংপুর-৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের শমসেরনগর কোম্পানি কমান্ডার বেলাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে রিফাত হত্যা ও তার লাশ ফেরত নিয়ে রংপুর ৫১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের শমসেরনগর কোম্পানি কমান্ডার ও কোচবিহার ১৪০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের চেনাকাটা কোম্পানি কমান্ডার পর্যায়ে পতাকা বৈঠকের জন্য কথা চলছে বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদলু এজেন্সির ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, মানবাধিকার সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কমপক্ষে ১,১৮৫ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ।
যদিও ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জাতীয় সংসদে জানিয়েছিলেন যে গত ১০ বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের হাতে মোট ২৯৪ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা অধিকারের দেয়া এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৩৩৪ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। তাই পরিসংখ্যান গড়মিলটা এখানে স্পষ্ট। যদিও অপহৃতদের এই হিসেবে ধরা হয়নি বা যাদের খোঁজ কখনও পাওয়া যায়নি।
দুই দেশের মধ্যে বেশ কয়েকবার সীমান্ত হত্যা বন্ধ আলোচনা, চুক্তি হয়েছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায়ও কোনও সমাধান আসেনি। ২০১১ সালে বিজিবি-বিএসএফ পর্যায়ে সীমান্ত পারাপারে অস্ত্র ব্যবহার করবে না দুই দেশ, এমন চুক্তি হলেও বন্ধ হয়নি সীমান্ত হত্যা৷ এরপর সীমান্তে হত্যা বন্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৮ সালের এপ্রিলে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তিও হয় দুই দেশের মধ্যে। সেখানে সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনায় প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার না করতে একমত হয় দুই দেশ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন দেখা যায়নি সীমান্তে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬০৯
আপনার মতামত জানানঃ