বিদেশি বাহিনীর আফগানিস্তান ত্যাগের ডামাডোলে দেশটিতে আরও প্রভাব বেড়েছে তালেবানের। একের পর এক এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে দলটি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দলটিকে সতর্ক করেছেন প্রতিবেশী পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার।
মুলতানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ নিয়ে কথা বলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় তিনি বলেন, বিদেশি বাহিনী চলে যাওয়ার পর যদি তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করে, তাহলে জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় দেশটির সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেবে পাকিস্তান।
শাহ মাহমুদ কুরেশি বলেন, পাকিস্তান ইতোমধ্যে ৩৫ লাখ আফগান শরণার্থী গ্রহণ করেছে। এর বেশি আর নিতে পারবে না। তিনি বলেন, আমরা আর (আফগান শরণার্থী) নিতে পারব না, সীমান্ত বন্ধ করতেই হবে। আমাদের জাতীয় স্বার্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পাকিস্তানি মন্ত্রী আরো বলেন, আফগানিস্তানে শান্তিপ্রতিষ্ঠায় কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে পাকিস্তান এবং দেশটিতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে স্বাগত জানাবে।
১৯৮৯ সালে সোভিয়েত বাহিনী প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে বিভিন্ন গোষ্ঠীর সংঘর্ষের জেরে লাখ লাখ আফগান নাগরিক পালিয়ে পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়। মার্কিন বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগপর্যন্ত আফগানিস্তান শাসন করেছে তালেবান। ২০০১ সালে ৯/১১ হামলার জেরে আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান শুরু করে মার্কিন বাহিনী। এর প্রায় ২০ বছর পর চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশটি থেকে সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাপ্রত্যাহার এবং কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান-তালেবান শান্তিআলোচনা সত্ত্বেও আফগানিস্তানে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ব্যাপক সহিংসতা চলছে। এতে গত কয়েক সপ্তাহে সেখানে সরকারি-বেসরকারি অনেক লোক প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে আফগানিস্তানের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে তালেবান। শান্তি আলোচনা সফল হলে তারা আবারো আফগান সরকারের অংশ হয়ে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে তালেবান জোর করে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করলেও পাকিস্তান তাদের বিরুদ্ধে কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে না বলে জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
তালেবান জোর করে ক্ষমতা দখল করলে কী ঘটবে-এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, পূর্বে আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত খোলা ছিল। কিন্তু ইতোমধ্যে আমরা ৯০ শতাংশ সীমান্তে বেড়া দিয়েছি। তালেবান ক্ষমতা দখল করলে আমরা সীমান্ত বন্ধ করে দেব। দুটো কারণে তিনি এটা করবেন বলে উল্লেখ করেন। সেই দুই কারণ হলো-পকিস্তান কোনো সংঘর্ষে যাবে না আর দ্বিতীয় কারণ হলো, আফগানিস্তান থেকে পাকিস্তানে শরণার্থীর ঢল বন্ধ করা।
তালেবান জোর করে ক্ষমতা দখল করলে পাকিস্তান তাদের স্বীকৃতি দেবে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ যে সরকারকে পছন্দ করবে পাকিস্তান শুধুমাত্র সে সরকারকেই স্বীকৃতি দেবে।
পাক প্রধানমন্ত্রী এমন এক সময় এ মন্তব্য করলেন যখন বিভিন্ন মহল তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করবে বলে আশঙ্কা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দারা জানিয়েছে, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সেনা প্রত্যাহার করা হলে তালেবান ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল করবে।
জাতিসংঘ বলছে, গত দুই মাসে তালেবান আফগানিস্তানের চার’শ জেলার মধ্যে ৮০টির অধিক জেলা দখল করে নিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তালেবানের হাতে আফগানিস্তানের কোনো না কোনো জেলার পতন হচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ