
রাশিয়ার ক্রিমিয়া উপকূল অতিক্রমকারী ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার ডিফেন্ডারের সাম্প্রতিক তথ্যসংবলিত দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গোপন নথি কেন্টের একটি বাসস্টপে পাওয়া গেছে। এসব নথির একটিতে ক্রিমিয়া উপকূল অতিক্রমের সময় রাশিয়া সম্ভাব্য কী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে তা বর্ণনা করা হয়েছে। খবর বিবিসির।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট কাউন্টির একটি বাস স্টপের পেছনের স্যাঁতসেঁতে জায়গায় গত মঙ্গলবার ভোরে গোপন এসব রাষ্ট্রীয় নথি পান এক ব্যক্তি। নাম প্রকাশ না করা ওই ব্যক্তি বুঝতে পারেন, ৫০ পাতার এসব নথিতে স্পর্শকাতর ও গোপন রাষ্ট্রীয় তথ্য রয়েছে। পরে তিনি বিবিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
প্রাপ্ত নথিতে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধজাহাজ এইচএমএস ডিফেন্ডার-সংক্রান্ত তথ্য রয়েছে। আরও রয়েছে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে ব্রিটিশ বাহিনীর সম্ভাব্য উপস্থিতিসংক্রান্ত পরিকল্পনার কথা।
নথিতে ই–মেইল ও পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন রয়েছে। এসব গোপন নথি যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কার্যালয়ের হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্পর্শকাতর সামরিক তথ্যসহ রাষ্ট্রীয় এসব গোপন নথি কীভাবে বাস স্টপে গেল, তা কেউ বলতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে তদন্তের কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার।
এসব কাগজপত্রে রাজকীয় ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ‘ডিফেন্ডার’ সংক্রান্ত তথ্য উল্লেখ রয়েছে। এতে ডেস্ট্রয়ারটির সাম্প্রতিক ক্রিমিয়া উপকূল অতিক্রমের ঘটনাকে ‘ইউক্রেনের পানিসীমা দিয়ে শান্তভাবে অতিক্রম’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে— এ সময় ডেস্ট্রয়ারটির অস্ত্রগুলো ঢাকা ছিল এবং হেলিকপ্টারগুলো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় হেলিপ্যাডে অবস্থান করছিল।
ওই নথি থেকে জানা যায়, ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ার ‘ডিফেন্ডার’ যখন ক্রিমিয়া উপকূল অতিক্রম করে, তখন রাশিয়া কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাবে বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। গত বুধবার রাশিয়ার কোস্টগার্ডের দুটি জাহাজ ও ২০টির বেশি জঙ্গিবিমান ব্রিটিশ ডেস্ট্রয়ারটির ওপর নজর রাখে। এটি সেই সময় ক্রিমিয়া উপকূলের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে— তাদের একটি জাহাজ থেকে ডিফেন্ডারকে লক্ষ করে সতর্কতামূলক গুলি চালানো হয় এবং একটি জঙ্গিবিমান থেকে ডিফেন্ডারের চলার পথে বোমাবর্ষণ করা হয়। তবে ব্রিটিশ সরকার এ বক্তব্য অস্বীকার করে দাবি করেছে— ডেস্ট্রয়ারটিকে কোনো ধরনের সতর্কবার্তা দেওয়া হয়নি।
এর আগে রাশিয়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিল, কৌশলগত কৃষ্ণ সাগরের পানিসীমায় আমেরিকা ও ব্রিটেন যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষা করছে।
বিবিসি জানিয়েছে, গোপন নথির তথ্য অনুযায়ী রাশিয়া কড়া প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে সেটি জেনেই জাহাজটি পাঠিয়েছিল ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা দফতর।
আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার কথা। তারপর আফগানিস্তানে যুক্তরাজ্যের সেনাদের সম্ভাব্য উপস্থিতি বিষয়ে পরিকল্পনার কথা রয়েছে গোপন এসব নথিতে।
এতে বলা হয়, আফগানিস্তানের বিশেষ কিছু জায়গায় সেনা উপস্থিতি বজায় রাখতে যুক্তরাজ্যকে অনুরোধ করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন। যুক্তরাজ্য এই অনুরোধ বিবেচনা করছে। ফলে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরও আফগানিস্তানে ব্রিটিশ সেনাদের উপস্থিতি থেকে যেতে পারে।
এদিকে, নথি প্রকাশের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, তথ্যের নিরাপত্তার বিষয়টিকে তারা ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে এবং এই ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে নথিগুলো হারানোর বিষয়ে গত সপ্তাহেই তারা অবহিত হয়েছিল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
এই ঘটনায় ব্রিটেনের রাজনৈতিক অঙ্গনও সরব হয়ে উঠেছে। দেশটির প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টি এটিকে মন্ত্রীদের জন্য লজ্জাকর ও উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করেছে। দলটির প্রতিরক্ষা নীতি বিষয়ক প্রধান জন হিলি বলেন, মন্ত্রীদের এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে- তারা জাতীয় নিরাপত্তাকে খাটো করে দেখেন না। এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।
লেবার পার্টির প্রতিরক্ষানীতি বিষয়ক প্রধান জন হিলি বলেছেন, “এই ঘটনায় জাতীয় নিরাপত্তা যাতে ক্ষুন্ন না হয় কিংবা নিরাপত্তা অভিযান ব্যাহত না হয় এবং সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে মন্ত্রীদেরকে।”
কৃষ্ণসাগরে ব্রিটিশ ডিফেন্ডারের মিশন নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে সৃষ্ট সংঘাত এবং বিতর্কের মধ্যে কেন্ট কাউন্টিতে মেলা নথিতে এটি স্পষ্ট হয়েছে যে, ব্রিটিশ সরকার হিসাব-নিকাশ করে ঝুঁকি নিয়েও ওই পথে গিয়েছিল, লক্ষ্য ছিল ইউক্রেনকে সমর্থন জানানো।
২০১৪ সালে ইউক্রেইনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করেছে রাশিয়া। তখন থেকেই এই উপদ্বীপের উপকূলের চারপাশের জলসীমাকে রাশিয়া তাদের আওতাধীনেই ধরে নিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে স্বীকৃতি দেয়নি এবং পশ্চিমা দেশগুলো এই উপদ্বীপকে ইউক্রেনের অংশ হিসাবেই দেখে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩২
আপনার মতামত জানানঃ